২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুর্নীতি অনিয়ম অব্যবস্থাপনা

স্বেচ্ছাচারের সংস্কৃতিই দায়ী

-

অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেশের আর্থিক খাতকে ভয়াবহ সঙ্কটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তহবিল তসরুপ, লুটপাট যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। এসব বিষয়ে অর্থনীতিবিদ এবং সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা শুরু থেকেই সতর্কসঙ্কেত দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু তাতে কেউ কর্ণপাত করেননি; এখনো করছেন বলে মনে হয় না। এতে দিন দিন পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। এখন একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাটের ঘটনা নিয়ে পানি ঘোলা হচ্ছে। আর্থিক খাতের সুষ্ঠু বিকাশের বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানের কিছু পদস্থ কর্মকর্তারও নাম জড়িয়ে গেছে লুটপাটে সহায়তাকারী হিসেবে।
এমনই পরিস্থিতিতে উচ্চ আদালতে উঠেছে পিপলস লিজিং নামের একটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ লুটপাট তথা পি কে হালদারের মামলা। আদালত প্রতিষ্ঠানটির ১৪৩ ঋণখেলাপিকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। গত বুধবার নির্ধারিত দিনে ১৪৩ জনের মধ্যে হাজির হন ৫১ জন। বাকিরা দেশের উচ্চ আদালতকে উপেক্ষা করেন। এ পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বলেছেন, ঋণখেলাপিদের আরেকবার সুযোগ দেয়া হবে এবং এরপর প্রয়োজনে গ্রেফতার করে হাজির করানো হবে। কিন্তু তারা দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করার যে সাহস দেখালেন, তা গুরুতর মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। আমরা জানি, ঋণখেলাপিরা সব সময়ই রাজনৈতিক সুবিধা পেয়ে এসেছেন। বারবার ঋণের পুনঃতফসিলের সুযোগ পেয়েছেন। আইনের ফাঁক গলে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পেয়ে এসেছেন। তা পেয়েছেন রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। ভবিষ্যতেও সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না এ বিষয়ে সম্ভবত তারা নিশ্চিত। সে জন্যই আদালতকে উপেক্ষা করার সাহস তারা দেখিয়েছেন।
আদালত জানিয়েছেন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি, অনিয়ম রোধে কিভাবে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা যায় এ বিষয়ে পরামর্শ করতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বক্তব্য শুনবেন। এ ছাড়াও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কমিটি (বিআইএফসি), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, পিপলস লিজিং নামের তিন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক দুর্নীতি ও অর্থনৈতিক ধস খতিয়ে দেখতে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি পুনর্গঠন করে দেন হাইকোর্ট। এর সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত থাকলে তার দুর্নীতিও খতিয়ে দেখবে কমিটি। এ সবই ঠিক আছে। কারণ আদালতকে সবসময়ই একটি পদ্ধতিগত প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে এগোতে হয়। কিন্তু কথা অন্য খানে। এ প্রসঙ্গে একটি উদ্যোগের দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। সরকার তথা অর্থ মন্ত্রণালয় ‘পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্টস আইন-২০২১’ নামে একটি আইনের খসড়া তৈরি করেছে। ঋণখেলাপিরা যাতে ইন্টারনেট ও এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক তহবিল স্থানান্তর, ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডসহ ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠানের এমডি বা পরিচালক হতে না পারেন সেটি নিশ্চিত করা এই প্রস্তাবিত আইনের লক্ষ্য। বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা পরিচালক নিযুক্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নিতে হবে। আইন লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা জরিমানা, লাইসেন্স বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট পরিচালক, প্রধান নির্বাহী ও অন্যান্য কর্মকর্তাকে ওই প্রতিষ্ঠানের পদ থেকে অপসারণ করারও বিধান রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ একটি দৈনিক পত্রিকাকে দেয়া মন্তব্যে বলেছেন, ঋণখেলাপিদের ব্যাপারে বিধিনিষেধ আরোপের উদ্যোগ ভালো। তবে এর বাস্তবায়ন কতটুকু হবে সেটিই দেখার বিষয়। কারণ ঋণখেলাপিরা এতটা প্রভাবশালী যে, আইনকে পাশ কাটিয়ে তারা কাজ করেন। এসব হচ্ছে আইনের খেলাধুলা।
এরপর আর কিছু বলার থাকে না। আইন-কানুন, সংবিধান, আদালত সব কিছুই এক পাশে ফেলে রেখে ইচ্ছামাফিক চলার যে সংস্কৃতি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সমাজজীবনে পরিব্যাপ্ত তা থেকে মুক্তি পাওয়ার সময় এখনো আছে কি না সেটি নিয়েই গবেষণা হতে পারে। কারণ সব দুর্নীতি অনিয়মের এটিই উৎস।

 


আরো সংবাদ



premium cement