২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
গ্রামাঞ্চলেও বাড়ছে ডায়াবেটিস

সচেতনতাই উত্তম প্রতিকার

-

বাংলাদেশে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক জরিপ মতে, দেশে প্রতি ১১ জনে একজন এতে আক্রান্ত। আক্রান্তের হার ব্যাপকভাবে বাড়ছে। গভীর উদ্বেগের বিষয় হলোÑ ৫৭ শতাংশই জানে না যে, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। ডায়াবেটিস রোগীর চিকিৎসায় একজন রোগীর মাসিক গড় খরচ প্রায় দুই হাজার টাকা বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।
শহর থেকে গ্রামÑ সর্বত্রই প্রায় সমান হারে ডায়াবেটিস ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা একে মহামারীর সাথে তুলনা করেছেন। বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে যাদের বয়স তাদের মধ্যে শহরে ১৪ শতাংশ নারী ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং গ্রামে এ সংখ্যা ৮ শতাংশ। এই বয়সসীমায় গ্রামে ১০ শতাংশ পুরুষ ডায়াবেটিসে ভুগলেও শহরে ১৩ শতাংশ পুরুষ এতে আক্রান্ত। আশির দশকেও যেখানে গ্রামাঞ্চলে মোট ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল মাত্র ২ শতাংশ, সেখানে গ্রামীণ জনপদে ৮ শতাংশ নারী আর ১০ শতাংশ পুরুষের আক্রান্তের হার অনেক বেশি। শহরাঞ্চলের মতো অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস গ্রামেও ডায়াবেটিস ছড়িয়ে পড়ার জন্য দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ে শহুরে জীবনের সাথে পাল্লøা দিয়ে গ্রামের মানুষের জীবনাচরণ দ্রুত পাল্টাচ্ছে। আগে গ্রামের মানুষ নানাভাবে শারীরিক পরিশ্রমের মধ্যে থাকত, অথচ এখন সেখানে শহরের মতো তারাও শারীরিক শ্রমের চেয়ে প্রযুক্তির দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ছে। গ্রামের মাঠগুলোতে আর আগের মতো খেলাধুলা হয় না; যেমনটা একসময় দেখা যেত। লক্ষণীয় বিষয়Ñ এক দিকে মাঠে খেলাধুলার হার কমছে, অন্য দিকে বাড়ছে নানা রকম ডিভাইসের প্রতি আসক্তি। ফলে কমে যাচ্ছে শরীরচর্চার অভ্যাস। এতে ঝুঁঁকি বাড়ছে ডায়াবেটিস আক্রান্ত হওয়ার।
প্রতিদিনের জীবনযাত্রা, খাদ্যাভ্যাস এবং জিনগতসহ নানা কারণ ডায়াবেটিস রোগের সাথে সম্পর্কিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ৭৫ শতাংশ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাকি ২৫ শতাংশ রোগী স্বাস্থ্যবিধি মেনে অসংক্রামক এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। সুতরাং এ জন্য সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে মানুষকে আগে রোগ নির্ণয়ে স্ক্রিনিংয়ের আওতায় আনতে হবে। পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডায়াবেটিস সম্পর্কে স্বাস্থ্যশিক্ষা সচেতনতা বাড়াতে হবে।
ডায়াবেটিস এমন একটি রোগ যেটিকে প্রতিরোধ করার বিরাট সুযোগ আছে। কিন্তু একবার আক্রান্ত হলে বাকি জীবন এই রোগ নিয়েই কাটাতে হবে। তখন অপেক্ষার প্রহর গুনতে হবে, কখন রোগটির কারণে অন্যসব উপসর্গ ও জটিলতা দেখা দেয়। তাই সব স্তরের মানুষকে জেনে-বুঝে সচেতনভাবে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের কর্মযজ্ঞে নিজের সামর্থ্য অনুসারে অংশগ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস চিকিৎসা যেমন জরুরি, এর চেয়ে বেশি জরুরি এ রোগের প্রতিরোধে সর্বাত্মক কর্মকাণ্ড। রাষ্ট্রকেই এ কাজে নেতৃত্ব দিতে হবে। পাঠ্যসূচি থেকে শুরু করে নগর-পরিকল্পনা, বিদ্যালয় স্থাপনসহ সব ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধসহ মেটাবলিক রোগগুলো নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দিতে হবে। সর্বোপরি দরকার, ব্যাপক বিস্তার ঘটা এ রোগ প্রতিরোধে যথাশিগগির জাতীয় নীতি প্রণয়ন করা। এটি করতে যত দেরি হবে, ততই জাতীয়ভাবে আমাদের খেসারত দিতে হবে।
তাই ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের সচেতন করে তুলতে হবে, যাতে তারা রোগটি নিয়ন্ত্রণে রেখে সুস্থ, স্বাভাবিক ও কর্মঠ জীবন নিশ্চিত করতে পারেন। তবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগটি নিয়ন্ত্রণে প্রতিনিয়ত পরীক্ষা করাতে হবে। বাস্তবে দেশে যে হারে ডায়াবেটিস রোগী বাড়ছে, তাতে এখনই এর প্রতিরোধে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে শুধু ডায়াবেটিসের কারণেই দেশের অর্থনৈতিক ভারসাম্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement