২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে তর্ক

তথ্য-উপাত্ত নির্ভুল হওয়া বাঞ্ছনীয়

-

গত বছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এমনই তথ্য দিয়ে জাতিসঙ্ঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভাগ জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) তা পাঁচ দশমিক এক শতাংশ হবে। গত সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে অনেক দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ঘুরে দাঁড়াবে এবং বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে পাঁচ দশমিক এক শতাংশ। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ঝুঁকিও আছে। কোভিড-১৯ বিশ্বকে কতটা আক্রান্ত করবে তার ওপর প্রবৃদ্ধি নির্ভর করছে।
সরকারের পক্ষ থেকে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আট দশমিক দুই শতাংশ ধরা হয়েছিল। যদিও পরে তা কমিয়ে বলা হয় সাত দশমিক চার শতাংশ।
জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে চলতি বছর ৫.১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও চলতি মাসের শুরুর দিকে বিশ্ব¦ব্যাংকের এক পূর্বাভাসে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে এক দশমিক ছয় শতাংশ এবং আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে তা বেড়ে হবে তিন দশমিক চার শতাংশ। অন্য দিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছিল, বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ছয় দশমিক আট শতাংশ। পরের মাসে গত বছরের অক্টোবরে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পক্ষ থেকে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে চার দশমিক চার শতাংশ। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে হবে সাত দশমিক ৯ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি নিয়ে যেসব পূর্বাভাস দিচ্ছে তাতে বড় ধরনের বৈপরীত্য স্পষ্ট। তারা কোন তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এমন বৈপরীত্যপূর্ণ পূর্বাভাস দিচ্ছে আমাদের জানা নেই। কিন্তু তাদের প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে হেরফের আছে এমন অনুমান সম্ভবত দোষের হবে না। কারণ বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে অর্থনীতির পরিসংখ্যানের মধ্যেও রাজনীতির হাওয়া লেগে থাকে সে বিষয়ে সন্দেহের কারণ নেই।
গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে দেশের অর্থনৈতিক সব কর্মকাণ্ড যখন শূন্যে তখনো বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব মতে, বাংলাদেশ পাঁচ দশমিক ২৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। সে হিসাব দেখে বিশেষজ্ঞরা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন। অর্থনীতি নিয়ে গবেষণাকারী একটি প্রতিষ্ঠান ওই হিসাব নাকচ করে দিয়ে বলেছিল, আড়াই শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হওয়াই ছিল অসম্ভব। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রাক্কলনে সেটি দুই শতাংশের উপরে নিতে পারেনি।
সরকারি হিসাবের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে কথা বলা তাই চরম বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে দেশে এমন বিতর্ক সৃষ্টি হয়। পরিসংখ্যানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। দেখা যায়, পরিসংখ্যান ব্যুরো সরকারের সাফল্য তুলে ধরতে প্রবৃদ্ধির হিসাব স্ফীত করে দেখায়। এমতাবস্থায় কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ পরিসংখ্যানগত বিভ্রান্তি দূর করার জন্য একটি স্বাধীন সংস্থা দিয়ে নিরপেক্ষভাবে পরিসংখ্যান প্রণয়নের দাবি তুলেছেন এমনও দৃষ্টান্ত আছে।
একটি দেশের যেকোনো পরিকল্পনার সাফল্য মূলত নির্ভর করে নির্ভুল তথ্য-উপাত্তের ওপর। ভুল বা মিথ্যা পরিসংখ্যান দিয়ে কোনোভাবেই উদ্দেশ্য সাধন করা যায় না। সাময়িকভাবে সাধারণ মানুষের চোখে ধুলা দেয়া যায় মাত্র।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি যেসব খাত যেমন তৈরী পোশাক রফতানি বা প্রবাসী আয় কোনোটিই স্বাভাবিক গতি ফিরে পেয়েছে এমন নয়। একমাত্র কৃষি খাতে স্বাভাবিক গতি আছে। সুতরাং আগামী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লাফিয়ে বেড়ে পাঁচ শতাংশ পেরিয়ে যাবে এমনটা আশা করা একটু বেশি উদারতার লক্ষণ কি না এমন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়।


আরো সংবাদ



premium cement