২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আর বন্ধ নয়

পাঠদান পুরোদমে শুরু হোক

-

মহামারীতে কোন খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে এই প্রশ্নের উত্তরে কেউ বলবেন স্বাস্থ্য, কেউ বলবেন অর্থনীতি। স্বাস্থ্য খাতের আলোচনাটি প্রাসঙ্গিক; কিন্তু মানুষের রোগব্যাধি ও এ থেকে মৃত্যুহার যদি আমরা বিবেচনা করি তাহলে দেখা যাবে; করোনাকালে এর খুব বেশি একটা হেরফের হয়নি। স্বাভাবিকভাবে মানুষের যে মৃত্যুহার আগে থেকে ছিল এখনো তা-ই রয়েছে। অন্য দিকে অর্থনৈতিক ক্ষতি উল্লেøখ করার মতো। দেশের বিপুল একটা জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে। সবকিছু মিলিয়ে যদি হিসাব করা হয় তাহলে দেখা যাবে, বাংলাদেশে সর্বোচ্চ ক্ষতিগ্রস্ত খাতটি হচ্ছে শিক্ষা খাত। উচ্চ মাধ্যমিকে একটি অটো পাসের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে জাতীয় শিক্ষা কার্যক্রম একেবারে বন্ধ হয়ে রয়েছে। করোনায় সবচেয়ে নাজুক পরিস্থিতির শিকার ইউরোপের দেশগুলোতে এভাবে শিক্ষা কার্যক্রম একনাগাড়ে বন্ধ থাকেনি। অথচ সরকার চাইলে অন্যান্য খাতের মতো যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করে বাংলাদেশেও শিক্ষা কার্যক্রম চালু করতে পারত; কিন্তু তাদের মধ্যে সে ধরনের জোরালো মানসিকতা ও আন্তরিকতা দেখা গেল না।
শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনি গত রোববার জাতীয় সংসদে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে কথা বললেন। তিনি নিশ্চিত করে বলেননি, কখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাঠদানের একটি নীতির কথা বললেন। তার মতে, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণীর জন্য নিয়মিত ক্লাসের আয়োজন হতে পারে। অন্য ক্লাসের ছাত্রদের জন্য সপ্তাহে এক দিনের জন্য স্কুল চালু হওয়ার সম্ভাবনার কথা বললেন। তারা এক দিন এসে পুরো সপ্তাহের পড়া নিয়ে যাবে। এভাবে সপ্তাহের সব পড়া এক দিনে সংক্ষিপ্তাকারে চালানো হবে। ফেব্রুয়ারিতে এভাবে স্কুল কার্যক্রম শুরু হওয়ার সম্ভাবনার কথা তিনি বলেন। সে জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রস্তুতি নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ছাত্রদের পাঠদানের উপযুক্ত করার কার্যক্রম চলছে।
গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি চলছে। দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে। অথচ এভাবে একটানা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকার নজির সম্ভবত পাওয়া যাবে না। মন্ত্রী যেভাবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালানোর নিয়ম-কানুন বললেন, বিশেষ করে পাঠ্যসূচি সংক্ষিপ্ত করে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু করা খুব কঠিন কিছু ছিল না। করোনার কারণে আমাদের জাতীয় কোনো কার্যক্রমই এভাবে একনাগাড়ে বন্ধ ছিল না। আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি কখনো ইউরোপ-আমেরিকা এমনকি প্রতিবেশী ভারতের মতো নাজুক হয়নি। আক্রান্তের হার ছিল তুলনামূলক অনেক কম, এমনকি আক্রান্তদের মধ্যে প্রাণ হারানো মানুষের সংখ্যা ছিল সে তুলনায় আরো কম। তাহলে আমাদের দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কেন টানা ১০ মাস বন্ধ থাকল? পোশাক কারখানা, শপিংমলসহ জনসমাগমের প্রত্যেকটি স্পটে অবাধে মানুষের যাওয়া-আসা এবং স্বাভাবিক জমায়েতের কারণে দেশে করোনা সংক্রমণ বেড়ে গেছে, এমনটা ঘটেনি। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একেবারে বন্ধ রাখা অযৌক্তিক।
যতটা কম সময়ের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় জাতির জন্য ততই মঙ্গলজনক হবে। চিকিৎসা শিক্ষা, প্রযুক্তি শিক্ষাসহ উচ্চশিক্ষার প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যাতে পড়াশোনা শুরু হতে পারে সেই ব্যবস্থাও করতে হবে। হলগুলো খুলে দিতে হবে। করোনা ছড়িয়ে পড়বে এই অজুহাত দেখিয়ে এগুলো আর বন্ধ রাখার কোনো যুক্তি নেই। যদি করোনা ঝুঁকিপূর্ণভাবে ছড়াতে দেখা যায় তাহলে অবস্থা বুঝে তখন ব্যবস্থা নিতে হবে। করোনার ঝুঁকির কথা বিবেচনা করলে সরকার পূর্ণ সতর্কতা আরোপ করতে পারে। সেগুলো না মানলে জরিমানার ব্যবস্থাও করতে পারে। কিন্তু শিক্ষা কার্যক্রম এক দিনের জন্যও আর বন্ধ করে রাখা হবে বোকামি। এটি একটি জাতিকে পিছিয়ে দেয়ার শামিল। আর সময় ক্ষেপণ না করে সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement