১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দেশে দারিদ্র্য বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে

আসামি কেবলই মহামারী!

-

বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ মহামারীর অভিঘাতে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ বেড়েছে। ২০১৮ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ২১ দশমিক ৬০ শতাংশ। এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ৪২ শতাংশ। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। তাদের গবেষণায় দেখা গেছে, দারিদ্র্য পরিস্থিতি এখন আরো গুরুতর হয়ে উঠেছে। শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশ হলেও গ্রামাঞ্চলে তা ৪৫ শতাংশের বেশি। গবেষণা বলছে, দারিদ্র্য সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগে। দেশের মোট আয়ের ১৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ ধনী ৫ শতাংশের দখলে। আর মাত্র ৬ দশমিক ৪৭ শতাংশ আয় দরিদ্রতম ২০ শতাংশের দখলে।
বলা হয়েছে, দারিদ্র্য পরিস্থিতির এ অবনতির কারণ, করোনার বিরূপ প্রভাব। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় বলা হচ্ছে, দেশে রেমিট্যান্সের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু সানেমের গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনার সময়ে ৮২ ভাগ পরিবার বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স কম পেয়েছে। সানেমের নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান জরিপের তথ্য প্রকাশ করে জানান, মহামারীর ফলে কাজ হারানো, পারিশ্রমিক না পাওয়া, কর্মক্ষেত্র বন্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে মানুষকে। মাত্র ১৭.৩ শতাংশ পরিবার মহামারীর আগের মতো অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পেরেছে বলে জানানো হয়েছে। ৫৫.৯ শতাংশ পরিবার বলেছে, কাজ থাকা সত্ত্বেও তাদের আয় কমে গেছে, ৮.৬ শতাংশ কাজ হারিয়েছে, ৭ শতাংশের কাজের সময় হ্রাস পেয়েছে এবং ৩৩.২ শতাংশ বলেছে, তাদের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থেকেছে। দুঃসময়ে এই ভয়াবহ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে মানুষ নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। ৪৮.৭২ শতাংশ ঋণ নিয়েছে, ৩২.৪ শতাংশ সঞ্চয়ের ওপর নির্ভরশীল, ২৭.৩৩ শতাংশ খাদ্য-ব্যয় কমিয়েছে, ২৭.০২ শতাংশ তাদের খাদ্যতালিকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে এবং ১৬.৬৭ শতাংশ বন্ধু বা আত্মীয়ের কাছ থেকে অনুদান নিয়েছে। কিন্তু এই চরম সঙ্কটকালেও দেশের সাধারণ পরিবারগুলো সরকারি সহায়তা পেয়েছে এমন দৃষ্টান্ত সামান্যই। মহামারী পরিস্থিতি এখনো বিদ্যমান। প্রতিদিন মানুষ কোভিডে সংক্রমিত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। ‘নব্য স্বাভাবিকতা’ এখনো প্রতিষ্ঠিত নয়। এ অবস্থায় করণীয় কী?
বিশেষজ্ঞরা এ বিষয়ে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, দেশের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠীকে পুনরুদ্ধারের জন্য শিক্ষা খাত যত দ্রুত সম্ভব চালু করতে হবে, স্বাস্থ্য খাতে ভর্তুকি দিতে হবে, কর্মসংস্থানের পরিবর্তনগুলো স্বীকার করে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেউ বলেছেন, সরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলার প্রয়োজন ছিল যেন দরিদ্রের হাতে অর্থ যায়। সেটি হয়নি। প্রণোদনা পর্যাপ্ত নয়। যারা প্রণোদনার অর্থ কম পেয়েছেন বা পাননি, তাদের কথা ভাবতে হবে।
প্রণোদনার অর্থ বণ্টনে প্রথম ধাপের ভুলত্রুটিগুলোর পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সেটি মাথায় রাখতে হবে। কর্মসংস্থানে স্বনিয়োগের ক্ষেত্রে মূলধন সহায়তা প্রয়োজন হবে এবং এই অর্থের ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ।
এসব আলোচনার সবই করা হচ্ছে কোভিড-১৯ মহামারীকে ‘আসামি’ হিসেবে সামনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু আমাদের সরকারি পর্যায়ে বিদ্যমান অদক্ষতা, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, নীতিপ্রয়োগের ক্ষেত্রে অসঙ্গতি ইত্যাদি বিষয় অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতির ক্ষেত্রে অনুঘটক হিসেব কতটা ভূমিকা রেখেছে সে আলোচনা কোনো পক্ষ থেকেই করা হচ্ছে না। ফলে এসব জরিপের মাধ্যমে প্রকৃত অবস্থার একটি খণ্ডিত চিত্রই কেবল পাওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে।
আমরা এখনো দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যেও সবচেয়ে দরিদ্র। মাস তিনেক আগেও আইএমএফের এক রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ ছিল ষষ্ঠ অবস্থানে, অর্থাৎ এ অঞ্চলে কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের ওপরে। ১৯৭৯ সালের পর থেকে গত ৪০ বছর ধরে চরম অস্থিতিশীল একটি দেশ আফগানিস্তান। অপরপক্ষে, গত এক যুগেরও বেশি ধরে কোনো রাজনৈতিক অস্থিতি বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হয়নি। তার পরও আমরা সবার পেছনে কেন? কাদের ব্যর্থতা এ জন্য দায়ী? এ প্রশ্নের উত্তর জানা জরুরি। কত বছরের মধ্যে বাংলাদেশ মাথাপিছু আয়ে ভারতকে ছাড়িয়ে যাবে, সেই স্বপ্নের পরিসংখ্যান দেখিয়ে বাস্তবে কোনো কিছু অর্জন করা কঠিন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী দাওয়াতী ময়দানে সকল নেতাদের ভূমিকা রাখতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল শ্রমিকদের মাঝে ইসলামের আদর্শের আহ্বান পৌঁছাতে হবে : ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা শিশু হাসপাতালের আগুন নিয়ন্ত্রণে

সকল