১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কারাগারে নারীসঙ্গের সুযোগ

অনেকে স্বজনের দেখাও পায় না

-

কারাগারের ভেতর কয়েদিকে নারীসঙ্গ লাভের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে অবৈধ পন্থায়। কাশিমপুর কারাগার-১ এর ভেতর এমন ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এক কর্মকর্তা। জ্যেষ্ঠ জেল সুপার রতœা রায় ১৪ জানুয়ারি কারা মহাপরিদর্শকের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে ঘটনার জন্য জেলার নুর মোহাম্মদ মৃধাকে দায়ী করা হয়েছে। জেলারের অনুমতি নিয়ে ডেপুটি জেলার মো: সাকলায়েন নারী সরবরাহের কাজটি করেন। রতœা রায় ওই দিন দায়িত্ব পালনকারী ডেপুটি জেলার ও কারারক্ষীদের জবানবন্দী নিয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ডেপুটি জেলার সংশ্লিষ্ট নারীকে কারাগারের ভেতরে রিসিভ করেন। সামগ্রিক বিষয়টি ওয়াকিটকির মাধ্যমে না বলে গোপনীয়তা বজায় রাখার জন্য মুঠোফোনে আঞ্জাম দেন। জানা যাচ্ছে, নারীসঙ্গ লাভের ব্যবস্থা করার জন্য কারাগারের জেলারকে এক লাখ, ডেপুটি জেলারকে ২৫ হাজার ও আরো কয়েকজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে পাঁচ হাজার টাকা করে ঘুষ দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কয়েদি।
কারা মহাপরিদর্শকের কাছে প্রতিবেদন দাখিলকারী জেলার রতœা রায়কেও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যাচ্ছে। অভিযোগকারী ব্যক্তিদের পাশাপাশি তাকেও সে দিন কারাগারের ভেতরে প্রবেশকারী নারীর সাথে দেখা যায়। আমাদের কারা প্রশাসনের অনেকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে একেবারে নিম্ন পর্যায়ে ব্যাপক আকারে দুর্নীতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। কর্মকর্তাদের কেউ কেউ বিপুল অঙ্কের অর্থ নিয়ে হাতেনাতে ধরাও পড়েছেন। কারাগার হলো সংশোধনাগার। এখানে অপরাধীরা নিজেদের অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করবেন। তাদের ভেতর অনুতাপ জাগবে। তারা পাপকে ঘৃণা করতে শিখবেনÑ এটিই কারা-ব্যবস্থার পেছনের দর্শন। এখানে প্রশাসনের নিযুক্ত সরকারি কর্মকর্তারা যদি দুর্নীতিতে লিপ্ত হয়ে পড়েন তা হলে সংশোধনাগার উল্টো অপরাধীদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হয়ে উঠবে। আমাদের কারাগাগুলোর এই লক্ষণ এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
কারা প্রশাসনের একেবারে উচ্চপর্যায় থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষে কিভাবে পক্ষপাত করা হয় তা সাময়িক বরখাস্ত হওয়া উপমহাপরিদর্শক বজলুর রশিদের ঘটনা থেকে বোধগম্য। এই কর্মকর্তা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় বরখাস্ত হয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি তিন হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনতে তিন কোটি আট লাখ টাকা পরিশোধ করেন। এ অর্থের কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি। দুদক গ্রেফতারের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এ অবস্থায় কারা মহাপরিদর্শক মো: মোমিনুর রহমান ১২ জানুয়ারি আরো চার কর্মকর্তার সাথে বজলুর রশিদকে জনস্বার্থে পদায়নের প্রস্তাব করেন। এর আগে তার পক্ষে আরো দু’টি আবেদন বিবেচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর পাঠানো হয়েছিল। একটি গুরুতর অসদাচরণের জন্য দায়ী কর্মকর্তার পক্ষে কিভাবে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে সাফাই গেয়ে আবেদন করা যেতে পারে? কারা প্রশাসনের ব্যাপারে সাধারণ একটা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে যে, এর ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে।
কাশিমপুর কারাগার-১ এ যখন কয়েদিকে নারীসঙ্গ লাভের সুযোগ করে দিচ্ছেন স্বয়ং প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা, তখন আমরা দেখতে পাই, অনেক কয়েদি, হাজতি তাদের সাধারণ অধিকারগুলোও পান না। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি যারা রাজনৈতিক কারণে কারাগারে রয়েছেন, মাসের পর মাস ঘনিষ্ঠ স্বজনের সাথেও দেখা করার সুযোগ পান না। শুধু রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে তারা বৈধ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নিছক খাবার পৌঁছানো এমনকি অতি জরুরি ওষুধ পৌঁছানোর ক্ষেত্রেও কঠোর কড়াকড়ি আরোপ করে কারা প্রশাসন। একটি দেশের ভেতরে এমন বৈষম্য ও বৈপরীত্য দুর্ভাগ্যজনক। এটি কোনোভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কারাগারকে যারা অপরাধের আখড়া বানাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নজর কম। সরকার কারা প্রশাসনের অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কঠোর হোক এবং একই সাথে প্রত্যেক কয়েদি হাজতির প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিত করুকÑ এমনটিই সবার প্রত্যাশা।

 


আরো সংবাদ



premium cement