২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
রাজধানীতে অসহনীয় শব্দদূষণ

নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নেই

-

শীত মৌসুমে রাজধানী ঢাকা হয়ে পড়ে ‘ধুলোর নগরী’। সাম্প্রতিককালে এই নগরীর বায়ুদূষণ আর শব্দদূষণ ভয়াবহ মাত্রায় পৌঁছেছে। এই দুই দূষণ জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে শব্দদূষণ গড়ে সহনীয় মাত্রার চেয়ে আড়াই গুণ বেশি, যা মানুষের শ্রবণক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গেছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে নগরবাসীর মধ্যে বধির হওয়ার হার বেড়ে যাবে। বাস্তবতা হলোÑ ঢাকায় এলাকা ও সময় ভেদে শব্দদূষণের মাত্রার রকমফের হলেও কোথাও নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমান পরিস্থিতিতে শব্দদূষণ পরিবেশগত সমস্যা হয়ে গেছে; যা নগরবাসীর জন্য নীরব ঘাতক ছাড়া আর কিছু নয়।
গাড়ির হর্ন এবং মাইকের ব্যবহার শব্দদূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। যানবাহনের হর্ন, নির্মাণকাজ, কলকারখানা এবং মাইকিংÑ বিশেষ করে সিগন্যালগুলোতে একসাথে বহু গাড়ির হর্নে দিন দিন শব্দদূষণ বাড়ছে। ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দিন নেই রাত নেই পাইলিংয়ের কাজ, ইটভাঙার যন্ত্র, সিমেন্ট মেশানোর মেশিনের যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। পাড়া-মহল্লøাতেও এমনকি সারা রাত নির্মাণকাজ চলে। কারো ঘুমের ব্যাঘাত ঘটছে কি না, শিশুদের পড়াশোনার ক্ষতি, অসুস্থ ও বয়স্ক ব্যক্তিদের কষ্ট, কোনো কিছুই অসময়ে নির্মাণকাজ থামাতে পারে না। এ ছাড়া সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে বিয়ে উৎসব, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বনভোজনÑসব ক্ষেত্রে কান ফাটানো শব্দ চলে। এসব নিয়ন্ত্রণে না আনলে এমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা অসম্ভব।
শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় রাত ৯টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত শব্দের মাত্রা ৪৫ ডেসিবল এবং দিনের অন্য সময়ে ৫৫ ডেসিবল অতিক্রম করতে পারবে না। বাণিজ্যিক এলাকায় এটি যথাক্রমে ৬০ এবং ৭০ ডেসিবল। হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অফিস-আদালতের আশপাশে ১০০ মিটার পর্যন্ত ‘নীরব এলাকা’ ঘোষণা করা রয়েছে। সেখানে রাতে ৪০ আর দিনে ৫০ ডেসিবল শব্দমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া আছে। ২০০৬ সালের শব্দদূষণ বিধি অনুযায়ী, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়ের সামনে এবং আবাসিক এলাকায় হর্ন বাজানো, মাইকিং এবং সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নামে জোরে শব্দ সৃষ্টি করা আইনত দণ্ডনীয়। তবে এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সাধারণত ৬০ ডেসিবল শব্দ একজন মানুষকে অস্থায়ীভাবে বধির করতে পারে। বেসরকারি একাধিক গবেষণায় বলা হয়েছেÑ ১০০ ডেসিবল শব্দ মানুষকে সম্পূর্ণভাবে বধির করে দিতে পারে। গবেষণার তথ্যমতে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীতে শব্দদূষণের মাত্রা গড়ে ১২০ থেকে ১৩০ ডেসিবল পর্যন্ত অতিক্রম করছে। উচ্চশব্দ শিশু, গর্ভবতী মা এবং হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আকস্মিক উচ্চশব্দ মানব দেহে রক্তচাপ ও হৃৎকম্পন বাড়িয়ে দেয়; মাংসপেশির সঙ্কোচন করে; পরিপাকে বিঘœ ঘটায়। হঠাৎ বিকট শব্দ যেমন যানবাহনের তীব্র হর্ন বা পটকা ফাটার আওয়াজ মানুষের শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে। উচ্চশব্দ সৃষ্টিকারী হর্ন মোটরযানের চালককে বেপরোয়া ও দ্রুতগতিতে যান চালাতে উৎসাহিত করে। এতে করে সড়ক দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে যায়। নাগরিক স্বাস্থ্যহানির দিকে নজর না দিয়ে খেয়াল খুশিমতো হর্ন বাজিয়ে গাড়ি হাঁকানো স্বেচ্ছাচারের আলামত। সেই আলামত নগর জীবনের প্রাত্যহিক অনুষঙ্গ হিসেবে দেখা গেছে। মানুষের শব্দ গ্রহণের স্বাভাবিক মাত্রা ৪০-৫০ ডেসিবল। পরিবেশ অধিদফতরের যে তথ্যটি সবচেয়ে আতঙ্কের, সেটি হলোÑ মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে ইতোমধ্যে দেশের প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের শ্রবণশক্তি হ্রাস পেয়েছে। কিন্তু তারপরও সচেতনতার অভাব রয়ে গেছে।
অনেকে সামাজিক অনুষ্ঠানে উচ্চৈঃস্বরে গান বাজানোকে কোনো অপরাধই মনে করেন না। এর প্রতিকার চাইতে গেলে অনেক সময় হেনস্তা হতে দেখা গেছে। রাজধানীতে এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়ে মৃত্যুও হয়েছে। অর্থাৎ, শব্দদূষণ যে একটি বড় অপরাধ, তা জনমনে প্রতিষ্ঠা করাই এখন সরকারের তরফ থেকে একটি মুখ্য করণীয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনস্বাস্থ্যের কথা মাথায় নিয়ে সময় এসেছে শব্দদূষণ প্রতিরোধে আইনের কঠোর প্রয়োগ করার। আমরা যদি শব্দদূষণ রোধে আইন প্রয়োগে কঠোরতার পরিবর্তে শিথিলতাই দেখাতে থাকি; তাহলে নিকট ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ তরুণীর লাশ উদ্ধারের পর প্রেমিকসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা ভিয়েনায় মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রদূতদের ইফতারে ইসলামিক রিলিজিয়াস অথোরিটি আমন্ত্রিত এবার বাজারে এলো শাওমির তৈরি বৈদ্যুতিক গাড়ি সকল কাজের জন্য আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার অনুভূতি থাকতে হবে : মাওলানা হালিম বিএনপি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য রাজনীতি করে : ড. মঈন খান সাজেকে পাহাড়ি খাদে পড়ে মাহিন্দ্রচালক নিহত

সকল