২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কানেকটিভিটির একচেটিয়া সুযোগ ভারতের

বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করবে কে

-

অর্থনৈতিক যোগাযোগ বা কানেকটিভিটির গুরুত্ব সারা বিশ্বে প্রমাণিত। বিভিন্ন অঞ্চল নিজেদের মধ্যে যোগাযোগের উন্নয়ন ঘটিয়ে জনগণের জন্য সমৃদ্ধি এনেছে। এ ধরনের আঞ্চলিক যোগাযোগ মূলত গড়ে ওঠে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর পারস্পরিক লাভালাভের ওপর ভিত্তি করে। কোনো একটি দেশের একচেটিয়া লাভ বা সুযোগের সৃষ্টি করা হবে এমন কানেকটিভিটি কোথাও দেখা যায় না। বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের নানামুখী কানেকটিভিটি গড়ে উঠেছে। এ ধরনের কানেকটিভিটির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রতিবেশী বৃহৎ দেশ ভারতের লাভালাভ ও আকাক্সক্ষা পূরণ। আমরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে দিয়েছি ভারতকে। এটি করতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরটির সক্ষমতার কথা বিবেচনা করিনি। এই বন্দর নিজ দেশের আমদানি-রফতানি সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে। এটি শুধু বন্দরের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করবে না, এর ফলে ভারতের সাথে আমাদের চলমান বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানা যাচ্ছে, ট্রানজিটের ট্রায়াল রান বা প্রাথমিক অপারেশনাল জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দর থেকে গত বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায়। ওই জাহাজে আনা চারটি কনটেইনার ভর্তি পণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সড়কপথে লরিতে সরাসরি করিডোর সুবিধা নিয়ে আখাউড়া হয়ে আগরতলার মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব ভারতে পৌঁছে গেছে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’ চুক্তির আলোকে আমাদের বন্দর ও রাস্তা ব্যবহার করছে ভারত। চুক্তি বলে ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তর-পূর্ব ভারতে পণ্য ও মালামাল বহন করা হবে। আগে এ জন্য তাদের ১৭ শ’ কিলোমিটার দুর্গম পথ পাড়ি দিত হতো। এ চুক্তির ফলে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভারত সহজে পণ্য পৌঁছাতে পারছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ এই চুক্তির ফলে দুই দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
প্রথমত, বাংলাদেশের উৎপাদিত বিভিন্ন নিত্যপণ্য, ভোগ্যপণ্য উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম, মনিপুরসহ আরো কিছু এলাকায় যেত। এমনকি সেবাসামগ্রী ও আইটি পণ্যও রফতানি হচ্ছিল। এ অঞ্চলে বাংলাদেশের উৎকৃষ্ট মানের পণ্যের আরো বিপুল সম্ভাবনাও ছিল। এখন ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্টের সুযোগ নিয়ে এসব পণ্যের চাহিদা ভারতের অন্য অঞ্চল থেকে পূরণ করা হবে। অর্থাৎ বাংলাদেশের বিপুল রফতানি সুযোগ ও এর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যাচ্ছে। যেমন আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিদিন তিন শ’র বেশি ট্রাক বাংলাদেশের সিমেন্ট, রড, পাথর, কয়লা, প্লাস্টিক, মাছ ও ভোজ্যতেল ইত্যাদি পণ্য নিয়ে ত্রিপুরা যেত। ইতোমধ্যে সেই ট্রাকের সংখ্যা ২০ থেকে ২৫টিতে নেমে এসেছে। অন্য দিকে ভারতীয় পণ্যকে ওই দেশের অন্য অঞ্চলে পৌঁছানোর সুযোগ করে দিতে গিয়ে আমরা আমাদের ভঙ্গুর সড়কপথের ওপর বাড়তি চাপ নিচ্ছি। সবচেয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়ছে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে নিজেদের পণ্য আনা-নেয়া করাও এখন কঠিন জটের মধ্যে পড়েছে। এতে দেশের আমদানি-রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এই ট্রানজিটের মূল কথা হলো, ‘ভারতের পণ্য ভারতে’ পরিবহন। এতে সম্পূর্ণ রকমে একপক্ষের সুবিধা। এর বিপরীত বাংলাদেশের বন্দর ও সড়ক ব্যবহারের যে মাশুল ও ট্যাক্স সেটিও তারা দিতে অনাগ্রহী। উন্মুক্ত ও উদার বিশ্বব্যবস্থার যুগে কানেকটিভিটির প্রয়োজনীয়তা কেউ অস্বীকার করবে না। কিন্তু এর ফলে যদি কেবল একটি পক্ষ লাভবান হয়, অন্যপক্ষ যদি হয় ক্ষতিগ্রস্ত, তাতে কারো সায় থাকার কথা নয়। বাংলাদেশ সেই সুবিধা দরকষাকষি ছাড়া ভারতকে দিয়ে দিয়েছে। এটা উদারতা নয়। তা বাংলাদেশ ও দেশের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবেশী নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমার সবার সাথে একইরকম কানেকটিভিটি চায়। তারা চায় এসব দেশের সাথে যোগাযোগ গড়ার ক্ষেত্রে ভারতও এগিয়ে আসবে। অন্ততপক্ষে প্রতিবেশী সব দেশের সাথে কানেকটিভিটি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভারত যাতে সহযোগিতার মানসিকতা পোষণ করে সেটি দেখতে চায় বাংলাদেশের মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement