২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
ইসির অর্থ ব্যয়ের প্রক্রিয়া।

জবাবদিহি নিশ্চিত করুন

-

শুধু চলতি বছর নির্বাচনী কাজে এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ইসির প্রশিক্ষণ ব্যয় নিয়ে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন উঠলেও এ খাতে চাওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ১৩৭ কোটি টাকা। তবে অর্থ বিভাগের মতে, এই চাহিদা অনেকটাই অযৌক্তিক। একই সাথে বিশেষ নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ব্যয়ের ব্যাপারে অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। কেননা নিকট অতীতে এ খাতে ব্যয়ে অসামঞ্জস্য আর অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে। ব্যয়ের বিষয়ে অডিট আপত্তিও এসেছে। বক্তাদের মোটা অঙ্কের সম্মানী দেয়ার ব্যাপারে অর্থ বিভাগ প্রশ্ন তুলেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আগে বিভিন্ন পর্যায়ের
সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিনিময়ে ইসি যে তিন কোটি ৩৫ লাখ টাকা খরচ করেছে, তা নিয়ে অডিট আপত্তি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন অডিট অধিদফতর। সংশ্লিষ্ট বিভাগের অভিমত, নির্বাচনী প্রশিক্ষণে কোর্স উপদেষ্টা, বিশেষ বক্তাসহ ইসির তৈরি করা কয়েকটি পদ অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদিত নয়। ওই ভাতা প্রদানের ফলে রাষ্ট্রের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। অডিট বিভাগ ইসির কাছে জবাব চেয়েছে। জবাব দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিতে বলা হয়। অডিট আপত্তির বরাতে সম্প্রতি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, অনুমোদিত পদের বাইরে পদ সৃষ্টি করে ভাতা পরিশোধ করায় ১৯ লাখ ৭৬ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আরেকটি আপত্তিতে বলা হয়েছে, অনুমোদিত পদের বাইরে বিশেষ বক্তার ভাতা পরিশোধ করায় সরকারের ১২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া কোর্স পরিচালক পদে
অতিরিক্ত সম্মানী নেয়ায় ১৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮০০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। ইসির পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে সারা দেশে চার হাজার ২০১টি নির্বাচন
অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য চলতি অর্থবছরের বাজেটে ইসির অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৪৩৩ কোটি টাকা। যদিও বাজেট ঘোষণার আগে ইসি চেয়েছিল এক হাজার ৩০০ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে উল্লেযোগ্য কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাকিগুলো সম্পন্ন করতে সংশোধিত বাজেট ২০২০-২১ থেকে শুধু চলতি বছরই অতিরিক্ত এক হাজার ১৫৭ কোটি টাকা ব্রাদ্দ চেয়েছে ইসি,যা বাজেটে বরাদ্দের তুলনায় ২৬০ শতাংশ বেশি। নির্বাচনী প্রশিক্ষণ খাতে চাওয়া হয়েছে অতিরিক্ত ৩৪০ কোটি টাকা। অর্থ সচিবকে পাঠানো ইসি সচিব স্বাক্ষরিত চাহিদাপত্রে চলতি অর্থবছরের বাকি সময়ে অন্যসব খাতের ব্যয়বিভাজনের চিত্রও তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে নির্বাচন কমিশন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ঘাটতি ব্যয় মেটানোর জন্যও অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণ কম্পিউটারসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি কেনার একটি ব্যয় পরিকল্পনা যুক্ত রয়েছে। চাওয়া হয়েছে ৩৪০ কোটি টাকা। একটি সহযোগী দৈনিকে ‘ব্যয়বিলাসে নির্বাচন কমিশন' শিরোনামে গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়। ইসির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় গত বছর ১৪ ডিসেম্বর ৪২বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের আর্থিক ও নির্বাচনসংক্রান্ত গুরুতর
অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগ এনে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনের অনুরোধ জানান। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার ওই সব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন। এমন প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ইসির বাজেট ব্যয়ের ব্যাপারেও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ ব্যয়ের বিষয়ে আগে থেকেই নানা অভিযোগ উঠেছে। দেখা যাচ্ছে, সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের যেসব খাতে অর্থ ব্যয়ে অনিয়ম বা অস্বচ্ছতার অভিযোগ রয়েছে; এর মধ্যে প্রশিক্ষণ খাত অন্যতম। একই ব্যক্তিকে দিয়ে শুধু বক্তৃতা করিয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা সম্মানী হিসেবে ব্যয় দেখানোর নজির পেয়েছে অর্থ বিভাগ। ফলে ইসির অনুকূলে যেকোনো ধরনের অর্থ বরাদ্দ এবং ব্যয়ে আরো স্বচ্ছতা
ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি বলেই মনে করেন দেশের সচেতন নাগরিকরা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল