১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সৌদি নিবাসী রোহিঙ্গা সঙ্কট

কূটনৈতিক সমাধানই কাম্য

-

সৌদি আরবের সাথে অনাকাক্সিক্ষত একটি জটিল সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। সে দেশে বসবাসরত ৫৫ হাজার জনকে নতুন করে বাংলাদেশী পাসপোর্ট দিতে চাপ দিচ্ছে সৌদি আরব। বলা হচ্ছে, তারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়েই সৌদি আরব গিয়েছিলেন। এখন সেই পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ায় তারা রাষ্ট্রহীন নাগরিকে পরিণত হয়েছেন। বাংলাদেশ বলছে, এরা রোহিঙ্গা এবং মিয়ানমারের নাগরিক। মানবিক কারণে সৌদি বাদশাহ তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে এসব রোহিঙ্গা সৌদি আরবে বসবাস করে আসছেন। তারা বাংলাদেশী নন। আর সে কারণে তাদের বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেয়ার সুযোগ নেই।
কিন্তু বিষয়টি এতটা সরল থাকছে না। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত গত রোববার বলেছেন, এরা ‘বাংলাদেশী’। যেহেতু তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন। এটিই প্রথম নয়, গত কয়েক বছর ধরেই কথিত এই বাংলাদেশীদের প্রশ্নটি দ্বিপক্ষীয় পর্যায়ে উত্থাপন করে আসছে সৌদি আরব। গত বছর সেপ্টেম্বরেও বিষয়টি সামনে আসে। তখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, যাদের কোনো ডকুমেন্ট নেই, তাদের কেন বাংলাদেশ পাসপোর্ট দেবে? তিনি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ এদের পাসপোর্ট দিতে রাজি নয়। তার বক্তব্য থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়; সেটি হলো, যারা মেয়াদোত্তীর্ণ বাংলাদেশী পাসপোর্ট বা আনুষঙ্গিক কাগজপত্র দেখাতে পারবেন তাদের বাংলাদেশ পাসপোর্ট দিতে পারে; কিন্তু এখন নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, রিয়াদের চাপে ঢাকা অবস্থান পাল্টাবে কি না। যাদের কোনো বাংলাদেশী ডকুমেন্ট নেই তাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট ইস্যু করতে চাপ দেয়া আদৌ কূটনীতির মধ্যে পড়ে কি না, সে প্রশ্ন তোলার অবকাশ আছে। কোনো দেশই স্বাভাবিকভাবে অন্য একটি স্বাধীন দেশকে এমন অযৌক্তিক চাপ দিতে পারে না, কিন্তু এ ক্ষেত্রে তেমনটাই হচ্ছে বলে মনে হয়। এ জন্য বাংলাদেশকে যেন পণবন্দী করে ফেলা হচ্ছে। একসময় কথা উঠেছিল, রিয়াদের প্রস্তাবে রাজি না হলে সৌদি আরবে অবস্থানরত কমপক্ষে ২২ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসীর জন্য বিষয়টি হুমকির কারণ হতে পারে। সহজ কথায়, ওই ২২ লাখ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে। এটাই বাংলাদেশের জন্য চরম দুর্বলতার জায়গা। বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি বড় অংশ নির্ভর করে প্রবাসী আয়ের ওপর। আর প্রবাসী আয়ের বড় অংশ আসে সৌদি আরব থেকে। এই দুর্বল জায়গাটিকেই টার্গেট করা হচ্ছে বলে মনে হয়। নৈতিকতার বিচারে এটি কোনোভাবেই যথাযথ নয়। তার পরও মনে রাখতে হবে দেশটি সৌদি আরব, যারা ভিন্ন দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে এসেও বন্দী করেছে। ভাড়াটে ঘাতক পাঠিয়ে ভিন্ন দেশের দূতাবাসে নিজ দেশের ভিন্নমতাবলম্বীকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করিয়েছে। এমন একটি দেশের পক্ষে বাংলাদেশকে অনৈতিক কোনো বিষয়ে চাপ দেয়া মোটেই বিস্ময়কর কিছু নয়। অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো হলে যে ক্ষতি হবে তা সহ্য করতে পারবে না বাংলাদেশের অর্থনীতি। এই যুক্তিতেই অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ২২ লাখ অভিবাসীর বিষয় যখন আসবে, তখন সৌদি চাপে বাংলাদেশ নিজ অবস্থানে অনড় থাকতে পারবে কি না সন্দেহ আছে।
সে জন্যই আমাদের ধারণা, বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। কথিত রোহিঙ্গারা যদি বাংলাদেশী পাসপোর্ট ও অন্যান্য ডকুমেন্ট আগে পেয়ে থাকে তাহলে তা পরীক্ষা করে বাংলাদেশ তাদের নতুন পাসপোর্ট ইস্যু করতে পারে। এটা তো ওপেন-সিক্রেট বিষয়, বাংলাদেশে টাকা খরচ করে অনেক রোহিঙ্গাই শুধু পাসপোর্ট পাওয়া নয়, ভোটার পর্যন্ত হয়েছেন এবং আইডি কার্ড পেয়েছেন। বাংলাদেশী কূটনীতিকরা টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্টসহ অন্যান্য ডকুমেন্ট সরবরাহ করেন এমন রিপোর্ট আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও একাধিকবার এসেছে। গোটা দেশ যখন অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে, তখন কূটনীতিকদের দোষারোপ করা হলে তা উড়িয়ে দেয়ার কোনো অবকাশ থাকে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল