শিক্ষাঙ্গনে দলীয়করণ শুভ নয়
- ১৮ জানুয়ারি ২০২১, ০০:০২
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এখন যেন দুর্নীতি অনিয়ম ও অনৈতিক লেনদেনের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের দুর্নীতির খবর সামনে আসছে। আর আলোকিত মানুষ গড়ার আঙ্গিনার এমন অন্ধকারাচ্ছন্ন অবস্থা দেখে গোটা জাতি হতাশার অন্ধকারে দিন দিন তলিয়ে যাচ্ছে। গত কয়েক বছরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নানা কেলেঙ্কারির খবর থেকে শুরু করে দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব খবরাখবর গণমাধ্যমে এসেছে বা এখনো আসছে তাতে হতবাক হতে হয়। ছাত্রভর্তি, শিক্ষক-কর্মচারী নিযুক্ত করা, নির্মাণকাজ, ঠিকাদারি, ক্যান্টিন পরিচালনা থেকে শুরু করে গবেষণা পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতিই যেন স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। এ অবস্থায় মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, এগুলো এখন আর জ্ঞানচর্চা, গবেষণা, মেধার লালন ও বিকাশের জায়গা নয়। বরং যেন নিছক দুর্নীতির আখড়া। বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতি ও অনিয়মের সর্বশেষ খবর এসেছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিয়েছেন। নিজের ছেলেকে অ্যাডহক ভিত্তিতে সেকশন অফিসার এবং মেয়েকে শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন অধ্যাপক পদে স্ত্রীকেও নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। শুধু উপাচার্যের পরিবারের সদস্য নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য নিযুক্তি নিয়েও উঠেছে অনিয়মের অভিযোগ। তদন্ত শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
কিন্তু এসব তদন্ত করে শেষাবধি কোনো কাজ হয় না। এমনকি অভিযোগ প্রমাণিত হলেও ব্যবস্থা নেয়া হয় নাÑ এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহউপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্তে প্রশাসনিক ও আর্থিক অনিয়মের ২৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। শুধু দুর্নীতি, অনিয়ম এবং নিয়োগ-বাণিজ্য নয়, এদের বিরুদ্ধে এমনকি মিথ্যাচারের অভিযোগও প্রমাণিত। তা-ও বেশ কিছু দিন আগের ঘটনা। কিন্তু দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত ৩৪ শিক্ষকের নিয়োগ স্থগিত করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এরই মধ্যে রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলন করতে হচ্ছে দুর্নীতিবাজ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে। কোনো সভ্য সমাজের জন্য এ এক অবিশ্বাস্য পরিস্থিতি। দুর্নীতি প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হবে, বিচার হবে, শাস্তি হবে এটাই স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। আর এসব প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যাওয়ার জন্য সবার আগে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজ শিক্ষকদের বরখাস্ত করা হবে, এমনটাই হওয়ার কথা। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই। মনে হচ্ছে, দেশে আদৌ কোনো কর্তৃপক্ষ নেই, নেই কোনো আইন-কানুন। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরও একজন উপাচার্য ও সহউপাচার্য কোন খুঁটির জোরে স্বপদে বহাল থাকতে এবং সংবাদ সম্মেলন করে দুর্নীতির পক্ষে সাফাই গাইতে পারেন তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। ক্ষমতাসীন দলীয় আনুগত্যের কারণে যারা নিয়োগ পান তাদের খুঁটির জোর রাজনৈতিক দলই। যারা শিক্ষক হওয়ার যোগ্য কি না সন্দেহ তারাই যখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হয়ে যান তখন যা হওয়ার তা-ই হয় এবং হচ্ছে। বৈশ্বিক জ্ঞানসূচকে সারা বিশ্বের প্রেক্ষাপটে তো বটেই আঞ্চলিক ক্ষেত্রেও সব দেশের পেছনে পড়ে গেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক জার্নালে পাকিস্তানি স্কলাররা যেখানে গত বছর ২৮ হাজার ৬০০টিরও বেশি আর্টিকেল প্রকাশ করেন, সেখানে বাংলাদেশের স্কলারদের প্রকাশিত আর্টিকেলের সংখ্যা মাত্র আট হাজারের মতো। এসব পরিসংখ্যান থেকে যে চিত্র ফুটে ওঠে তা লজ্জাকর। কিন্তু লজ্জার বালাই আছে কি আমাদের? আমরা রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যাংক লুটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, একই বিবেচনায় খুনের মামলা তুলে নিচ্ছি, আসামিকে ক্ষমা করে দিচ্ছি এবং এ দিকে, উন্নয়নের স্লোগানে আকাশ-বাতাস মুখরিত করে তুলছি।
এভাবেই আমরা শিক্ষাসহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবক্ষয় অনিবার্য করে তুলেছি। এর কুফল এখন সমাজে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। আমলা, পুলিশসহ সরকারি কর্মচারীদের দুর্নীতি তো কিংবদন্তির সমতুল্য, এখন শিক্ষকরাও একই পথে হাঁটছেন। ধারণা করাই যায়, এসব শিক্ষকের কাছে যারা শিক্ষা নেবে সেই শিক্ষার্থীরাও এরপর একই আদর্শে আরো বড় দুর্নীতির পাঠ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুবে। এই দুষ্টচক্রের কখনো অবসান হবে কি? শিক্ষাঙ্গন হলো মেধা ও জ্ঞানচর্চার স্থান। কিন্তু এখন সেখান থেকেই ছাত্রছাত্রীরা অনিয়ম-দুর্নীতির আদর্শ (!) নিয়ে সমাজে ফিরে আসছে। এটা চলতে পারে না কিছুতেই। শিক্ষাঙ্গনে দলীয়করণ শুভ হতে পারে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা