১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
পাইকারি-খুচরা দামে বিস্তর ফারাক

কৃষিপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনাই দায়ী

-

দেশে বিভিন্ন নিত্যপণ্যে পাইকারি এবং খুচরা বাজারে দামের বিস্তর ফারাক এখন সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ প্রবণতা কৃষিপণ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। সাম্প্রতিক সময়ে তিনটি কৃষিপণ্যে এই প্রবণতা দৃষ্টিকটুভাবে সাধারণের চোখে ধরা দিয়েছে। যেমন, পাইকারি বাজারে দেশী পেঁয়াজের কেজি ২৮ টাকা। সেই পেঁয়াজ খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। পাইকারিতে আলুর দর ১৪ টাকা কেজি। আর খুচরা ২৫ টাকা। তেমনিভাবে পাইকারি বাজারে চালের মূল্য বস্তায় গড়ে ১০০ টাকা কমলেও খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব নেই। পাইকারি বাজারে চালের মূল্য কমলেও খুচরা বাজারে বাড়তি দামেই প্রধান এই খাদ্যশস্য কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পাইকারির চেয়ে বস্তায় কম করে হলেও খুচরায় ৩০০ টাকা বেশিতে বিক্রি হচ্ছে চাল। পাইকারি বাজারের চেয়ে প্রায় সব পণ্যই খুচরা কম করে হলেও কেজিতে ১০ টাকা বেশি।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করেন, সব পর্যায়ের বাজারে সরকারের নজরদারি ব্যবস্থা সক্রিয় থাকলে এভাবে বাড়তি টাকা গুনতে হতো না ক্রেতাদের। দামের এই যে এত তারতম্য, এর অন্যতম কারণ, খুচরা বাজারে কার্যকর কোনো সরকারি নজরদারি না থাকা। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীরা মওকা মারছেন। আর ক্রেতারা বাড়তি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। এ জন্য তাদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে তারা চাপে পড়েছেন। সাধারণ মানুষের দুর্ভাগ্য হলো, করোনাকালে তাদের আয় কমলেও জিনিসপত্র কেনায় ব্যয় ক্ষেত্রবিশেষে আগের চেয়ে বেড়েছে। যদিও সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) সাধারণ মানুষের জন্য তুলনামূলক কম দামে নিত্যপণ্য বিক্রি করে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
দেখা যাচ্ছে, দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে দাম থাকে একেবারে কম। সেখানে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে তুলনামূলকভাবে দাম অনেক বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে খুচরা দাম হয় আকাশছোঁয়া। অথচ কৃষক অনেক কষ্ট করে ফসল উৎপাদন করলেও তারা সেই সুফল পাচ্ছেন না। বাস্তবতা হলো, ফসল কাটার সময় ধান, গম, ভুট্টা, শাকসবজি, সবকিছুর দাম কমে যায়। প্রায় প্রতি বছরই শোনা যায়, কৃষক ন্যূনতম দামের অভাবে মনের দুঃখে উৎপাদিত অনেক পণ্য ফেলে দিচ্ছেন। এর জন্য বিশেষভাবে দায়ী কৃষিপণ্যের বাজারব্যবস্থায় সরকারের কোনো ভূমিকা না থাকা। বরং দেখা যায়, সরকারি অনেক নীতির কারণে বাজারব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
দেশে এখনো অর্ধেক মানুষ কৃষিকাজ করেন। গত কয়েক দশকে কৃষিপণ্যের উৎপাদন ব্যাপক বেড়েছে। অথচ স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের কৃষিপণ্যের উৎপাদন সব সময় ঘাটতি ছিল। গত পাঁচ থেকে সাত বছরে ধান, আলুসহ কিছু কৃষিপণ্য চাহিদার তুলনায় বেশি উৎপাদন হচ্ছে। তবে এর ব্যবস্থাপনার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এটাও সত্য, দেশের কৃষির অগ্রগতির পেছনে কৃষিকেন্দ্রিক বাণিজ্যব্যবস্থার ভূমিকা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক বাণিজ্যে সার, বীজ, সেচের মতো প্রত্যক্ষ বিষয় ছাড়াও উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাত করার অনেক শাখা-উপশাখা রয়েছে। দুঃখজনক হলো, কৃষি ব্যবসার উন্নয়নের সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন জড়িত থাকলেও কৃষিপণ্য সংরক্ষণে গুদামের ব্যবস্থা নেই। পর্যাপ্ত যানবাহনের ব্যবস্থা নেই। যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না।
দেশের বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের ব্যবস্থা করে আজ আমরা কিছু খাদ্যশস্য রফতানি করছি। এটি একটি বড় সাফল্য। কিন্তু সেই সুফল কৃষকের ঝুড়িতে না গিয়ে চলে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। এই বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে কৃষির উন্নয়নে গতি আনতে প্রয়োজন গরিববান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক কৃষি ব্যবস্থাপনা। একই সাথে দারিদ্র্যবিমোচনে কৃষি ব্যবসার আধুনিকায়ন প্রয়োজন। কৃষিব্যবস্থার পুরো বিষয়টি গরিববান্ধব করে তোলা সময়ের দাবি। আর তখনই কেবল সব পর্যায়ে কৃষিপণ্যের দাম যৌক্তিক থাকতে পারে বলে আশা করা যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
মসজিদের ভেতর থেকে খাদেমের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার মোরেলগঞ্জে সৎভাইকে কুপিয়ে হত্যা দুবাই পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণ কি কৃত্রিম বৃষ্টি ঝরানো? এ দেশের ঘরে ঘরে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে দিতে হবে : ডাঃ শফিকুর রহমান পিছিয়েছে ডি মারিয়ার বাংলাদেশে আসার সময় ইরানে হামলা : ইস্ফাহান কেন টার্গেট? মাত্র ২ বলে শেষ পাকিস্তান-নিউজিল্যান্ড প্রথম টি-টোয়েন্টি জেলে কেজরিওয়ালকে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ দলের ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জেরে সাংবাদিকসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা তোকে যদি এরপর হলে দেখি তাহলে খবর আছে, হুমকি ছাত্রলীগ নেতার বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা করা হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

সকল