১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানীতে অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি

জনদুর্ভোগ শেষ হবে কবে

-

৫৬টি সেবা সংস্থার উন্নয়নকাজে সমন্বয় না থাকায় রাজধানীতে বছরজুড়ে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। নজির আছে- এক সংস্থা কাজ শেষ করার মাস পেরুতে না পেরুতেই আরেকটি সংস্থা একই রাস্তা খুঁড়তে শুরু করে দেয়। এতে অর্থের অপচয়ের পাশাপাশি বছরজুড়ে নগরবাসীকে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এই দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। কৌতূহলোদ্দীপক হলো- উন্নয়নের নামে চলছে এমন কর্মকাণ্ড। মাটির নিচ দিয়ে ইন্টারনেট লাইন নিতে হবে; শুরু হলো রাস্তা খোঁড়া। পয়ঃনিষ্কাশন, বিদ্যুৎ ও ওয়াসা লাইন সংস্কার করতে হবে; জোরেশোরে আরম্ভ হলো সড়ক খোঁড়া। অবস্থা এমন যে, রাজধানীর ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকাসহ কোনো জায়গা নেই, যেখানে বছরের কোনো না কোনো সময় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি হয় না। মহল্লার সরু পথেও দীর্ঘ দিন ধরে চলে খোঁড়াখুঁড়ি। এ ধরনের উন্নয়নকাজে এক দিকে চলাচলে যেমন সমস্যায় পড়তে হয়; অন্য দিকে শীত মৌসুমে বায়ুদূষণের শিকার হন নগরবাসী। বিশেষ করে মেট্রোরেল নির্মাণকাজে কয়েক বছর ধরে লাগাতার বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছেন ঢাকাবাসী। ফলে শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। আমাদের দেশের বায়ুদূষণ এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, ফ্রান্সের একটি আদালত শ্বাসকষ্ট রোগে ভোগা বাংলাদেশী এক ব্যক্তিকে বহিষ্কারের আদেশ থেকে সরে এসেছেন। ওই ব্যক্তির আইনজীবী আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করে বলেন, বাংলাদেশে বায়ুদূষণ ভয়াবহ এবং সেখানে ফিরে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়ে তার মৃত্যুও হতে পারে। এরপর আদালত ওই বাংলাদেশীকে বহিষ্কারের নির্দেশ পরিবর্তন করেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান এ খবর প্রকাশ করেছে। নাগরিক জীবন সহজ করতে রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনসহ বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়। দুঃখজনক হলো- ঠিকাদার বদলে দীর্ঘ দিন রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়ে থাকে। অনেক স্থানে বড় গর্ত করা হয়। এতে চলাচলকারীদের দীর্ঘ সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়। বহু স্থানে মূল সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে রাস্তার উন্নয়নকাজ চলে। কিছু দিন যেতে না যেতে একই অবস্থা করে অন্য সেবা সংস্থা। কাজের ধীরগতিতে এবড়োখেবড়ো পড়ে থাকে রাস্তাঘাট। এলোপাতাড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয় নির্মাণসামগ্রী। এ জন্য গাড়ি চলাচল তো দূরে থাক, হাঁটাও দায়। তাই এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, খোঁড়াখুঁড়ির কারণে জনদুর্ভোগ যেন সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে রাজধানীর ডিএসসিসি বলছে, নগরীর উন্নয়নে কিছু জায়গায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করতে হয়। বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজে সড়ক খোঁড়ার অনুমতি না দিয়ে উপায় থাকে না। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় রাজধানীর উন্নয়ন ও সেবায় সম্পৃক্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্যোগ নেয় দুই সিটি। উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়ের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে সরকারি ২১টি সংস্থা ও পাঁচ প্রকল্পকে ৫ অক্টোবর চিঠি দেয় ডিএসসিসি। চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে ডিএসসিসির সাথে সমন্বয় না করায় বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে ঢাকা শহর অপরিকল্পিত নগরীতে পরিণত হচ্ছে। জলাশয় ভরাট করে আবাসিক ভবনের অনুমতি দেয়ায় দুর্যোগপ্রবণতা বাড়ছে। খাল বেদখল হওয়ায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। সুপেয় পানি, সুষ্ঠু পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উন্নয়ন প্রকল্পে বিভিন্ন সংস্থা রাস্তা কাটায় সর্বসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ঢাকা শহরকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ডিএসসিসি এলাকায় চলতি অর্থবছরে বাস্তবায়নযোগ্য প্রকল্পের বিবরণ ৩১ অক্টোবরের মধ্যে অবহিত করার অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু মাত্র ছয়টি সংস্থা ও প্রকল্প চিঠির জবাব দিয়েছে। আর দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। অন্য দিকে গত ডিসেম্বরে সব সেবা সংস্থাকে চিঠি দেয় ডিএনসিসি। কোন সংস্থা কখন, কোন রাস্তায় উন্নয়ন কাজে খুঁড়তে চায় তা বছরের শুরুতে সিটি করপোরেশনকে জানাতে বলা হয়। কিন্তু কোনো সেবা সংস্থাই সাড়া দেয়নি। অনুমতি না নিয়ে সম্প্রতি রাস্তা খোঁড়ায় উত্তরা থানায় ওয়াসার বিরুদ্ধে জিডি করেছে ডিএনসিসি।
রাজধানীর উন্নয়নকাজ একটি চলমান প্রক্রিয়া। তা হতে হবে পরিকল্পিত ও সমন্বিত। এর ব্যত্যয় ঘটলে সেই উন্নয়নের সুফল সর্বসাধারণের তেমন কল্যাণে আসে না। মনে রাখা প্রয়োজন, পরিকল্পনা ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। বাস্তবতা হলো- এলোমেলো সব কাজ জনদুর্ভোগ বাড়ায় বৈ কমায় না। তাই নগরবাসীর প্রত্যাশা, নাগরিক ভোগান্তি কমাতে পরিকল্পিত ও সমন্বিত উন্নয়নকাজ হাতে নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement