২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
টিকা সংগ্রহের প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা

কার স্বার্থে বিপুল বাড়তি ব্যয়

-

অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের আবিষ্কৃত ও অ্যাস্ট্রাজেনেকা নামের একটি কোম্পানির উৎপাদিত কোভিড-১৯-এর প্রতিষেধক বা টিকা কিনতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে বাংলাদেশ সরাসরি অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে টিকা কিনছে না। কিনছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে। সেরামের কাছ থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা কিনছে বাংলাদেশ। কোভিশিল্ড নামের এই টিকা চলতি ২৫ জানুয়ারির মধ্যে পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে বলেও আশা করছেন সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু খবর পাওয়া যাচ্ছে, এই টিকা সংগ্রহ করতে বাংলাদেশকে বিপুল অর্থ বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে। ভারত যে টিকা কিনবে বাংলাদেশী মুদ্রায় ২৩১ টাকায়, সেই টিকাই বাংলাদেশকে কিনতে হবে ৩৪০ টাকায়। অর্থাৎ, ভারতের চেয়ে বাংলাদেশের ব্যয় হবে ৪৭ শতাংশ বেশি। ফলে তিন কোটি ডোজ টিকা সংগ্রহে বাংলাদেশের বাড়তি ব্যয় হচ্ছে সোয়া তিন শ’ কোটি টাকারও বেশি। এই বিপুল বাড়তি ব্যয় নিয়ে রিপোর্ট করেছে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স। কিন্তু কেন এই বাড়তি ব্যয় তার কোনো ব্যাখ্যা বার্তা সংস্থাটি দিতে পারেনি। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্য সচিব কেউই রয়টার্সের সাথে কথা বলেননি।
বাংলাদেশ এই মুহূর্তে টিকাদান কর্মসূচি চালুর বিষয়ে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। কিন্তু টিকা সংগ্রহের বিষয় নিয়ে এরই মধ্যে অস্বচ্ছতার আলামত স্পষ্ট হয়ে গেছে। বাংলাদেশ টিকা পেতে সরাসরি ভারত সরকারের সাথে চুক্তি করেনি। চুক্তি করেছে বাংলাদেশের একটি কোম্পানি ভারতের কোম্পানি সেরামের সাথে। কিন্তু এই চুক্তিকেই জিটুজি চুক্তি হিসেবে দেখানোর প্রয়াস পেয়েছেন বাংলাদেশের কর্মকর্তারা। অস্বচ্ছতার শুরু সেখান থেকেই। সেরাম যখন বলল, ভারতের চাহিদা পূরণের আগে তারা কোনো দেশেই টিকা রফতানি করতে পারবে না, তখন বাংলাদেশের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। বিষয়টি কূটনৈতিক পর্যায়ে গড়ায়। পরে এ বিষয়ে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করা হলেও বিষয়টি এখনো যে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছে এমন নয়। প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ এ বিষয়ে কেন মধ্যস্বত্বভোগীকে নিয়োগ করল। দেশের সব সরকারি কেনাকাটায় এ সম্পর্কিত সরকারি বিধিবিধান অগ্রাহ্য করার প্রবণতা চলে আসছে দীর্ঘ দিন থেকে। বড় বড় প্রকল্পের কেনাকাটায় নানা অজুহাতে টেন্ডার এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে। একেকটি প্রকল্পে অবিশ্বাস্য চড়া দামে জিনিসপত্র কেনার খবর গণমাধ্যমে একের পর এক উদ্ঘাটিত হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এ অবস্থায় মানুষ আশা করেছিল, দেশবাসীর জীবন-মরণ সমস্যা করোনা মহামারী নিয়ে অন্তত কেউ দুর্নীতির আশ্রয় বা নিজের আখের গোছানোর সুযোগ নেবে না। বাস্তবে তা হয়নি। করোনা পরীক্ষার জন্য ভুয়া হাসপাতাল নিয়োগ করে যেমন দলীয় লোকদের জনগণের পকেট কাটার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যেমন গণস্বাস্থ্যের কিট নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি করা হয়েছে, তেমনই টিকা কেনার ক্ষেত্রেও একটি প্রবণতা চলছে বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। কার স্বার্থে, কী কারণে এই বিপুল অর্থ গচ্চা দিতে হচ্ছে তা জানানো সরকারের নৈতিক কর্তব্য।
আর এই প্রেক্ষাপটেই ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মহামারীর টিকা কোনোভাবেই কারো জন্য অন্যায় সুবিধার মাধ্যমে পকেটপূর্তির উৎসবে পরিণত না হয়। তিনি টিকার ক্রয়পদ্ধতি, প্রাপ্তি এবং অগ্রাধিকার অনুযায়ী বিতরণ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানান, যাতে এ বিষয়ে কোনো ধরনের বিতর্ক ও বিভ্রান্তি সৃষ্টির অবকাশ না থাকে।
টিকা সংগ্রহ প্রক্রিয়া ছাড়াও এর সাথে সংশ্লিষ্ট আরো বেশ কয়েকটি বিষয়ে সরকারের কর্মকাণ্ডে যেসব অসঙ্গতি, অসামঞ্জস্য ও অস্বচ্ছতা রয়েছে সেগুলো উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘টিকাদান কর্মসূচি সফল না হলে দ্রুত স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে ফেরা এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া যেমন বাধাগ্রস্ত হবে, তেমনই বিনামূল্যে টিকাদান কর্মসূচি চালাতে নেয়া চার হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয়ের উদ্দেশ্যই বরবাদ হয়ে যাবে।’ তার এ বক্তব্যের সাথে আমরাও একমত।

 


আরো সংবাদ



premium cement