২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
থেমে নেই নদী দখল

অস্তিত্বের স্বার্থেই উচ্ছেদ জরুরি

-

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নিকট অতীতেও এ দেশে বইতো শত শত নদী। নদীই ছিল এ অঞ্চলের মানুষের জীবিকার অন্যতম অবলম্বন। পুরো অর্থনীতিই ছিল নদীকেন্দ্রিক। কিন্তু বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে এখন আগের সেই অবস্থা আর নেই। এরই মধ্যে আমাদের প্রায় ১৩টি নদী দেশের মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। এর ওপর উজানের দেশ ভারত অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করায় প্রয়োজনীয় পানির অভাবে আরো অনেক নদী মৃতপ্রায়। আর ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হিসেবে দেখা দিয়েছে সারা দেশে ভয়াবহ নদীদূষণ ও দখল। যদিও নদীদখল ও দূষণের বিরুদ্ধে কিছু কিছু ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে। তবু উদ্বেগের বিষয় হলো, উচ্ছেদ অভিযানের মধ্যেও সারা দেশে নদী দখলদারের সংখ্যা বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী ২০২০ সালে অপূর্ণাঙ্গ হিসেবেই দখলদারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৩ হাজার ২৪৯ জনে; যা এর আগের বছর অর্থাৎ, ২০১৯ সালে ছিল ৫৭ হাজার ৩৯০ জন। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। ওই প্রতিবেদনে জানানো হয়, দেশের প্রতিটি বিভাগেই পেশিশক্তি ও প্রভাব বিস্তার করে নদীর মধ্যে বড় বড় অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বারবার তাগাদা দেয়ার পরও এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা যায়নি। এমনকি সরকারি স্থাপনাও সরিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্যমতে, ২০১৯ সালে নদী দখলদার উচ্ছেদ করা হয় ১৮ হাজার ৫৭৯ জনকে; যা নদী দখলের ৩২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, মেঘনা ও ধলেশ^রী নদীর অনেক জায়গা বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান দখল করে আছে। নদী রক্ষার চার হাজার কোটি টাকার যে প্রকল্প শুরু হয়েছে তা বাস্তবায়নে জটিলতার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ সেখানে বিদ্যুৎ ও স্যোলার প্ল্যান্ট, সিমেন্ট ফ্যাক্টরিসহ বড় বড় শিল্প কারখানা রয়েছে। যদিও এসব প্রতিষ্ঠান দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে, তবুও পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিয়ে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। নদী কমিশনের প্রতিবেদনে উচ্ছেদ কার্যক্রমে সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সহযোগিতা না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। ২০১৯ সালে উচ্ছেদ অভিযানে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও দফতর, বিআইডব্লিউটিএ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা প্রত্যাশিত বা আশানুরূপ ছিল না। উচ্ছেদ কার্যক্রমে অপ্রতুল অর্থায়ন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে চরম গুরুত্বহীনতা ও অবহেলার প্রতিফলন ঘটেছে। এ ছাড়া করোনা সংক্রমণ এবং প্রয়োজনীয় রসদ না পাওয়ায় দখলদার উচ্ছেদের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
দেশে শিল্পায়ন হচ্ছে। রফতানি বাড়ছে। উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। বিপুল অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হচ্ছে। তবে নদী না বাঁচলে এই উন্নয়ন কাজে আসবে না। উন্নয়ন মানেই পরিবেশ ধ্বংস নয়। পরিবেশ ও অর্থনীতি দুটো মেনে নিয়ে নদী রক্ষা করা সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন শুধু মানসিকতার পরিবর্তন। নদী রক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করলেই কেবল তা টেকসই হবে। কারণ নদী আমাদের অস্তিত্বের সাথে মিশে আছে। নদী আমাদের ইতিহাসের অংশ। সে জন্য নদীকে লালন করা জরুরি। নদী রক্ষায় অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাহলেই জীবন রক্ষা পাবে। তাই দখলদার উচ্ছেদে কার্যকর প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতেই হবে। কিন্তু তা আমরা করছি না।
দেখা গেছে, নদী দখলদাররা প্রভাবশালী এবং তাদের অনেকে জনপ্রতিনিধি। তারা ব্যক্তিস্বার্থে এমন কুকর্ম করায় দেশের সামগ্রিক পরিবেশ-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সে জন্য তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় নিতে হবে। দুঃখজনক হলো, এমন প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ার পরও তা নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে তেমন আলোচনা হয়নি। নদী দখল কমিয়ে আনতে দখলদারদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার যে প্রস্তাব এসেছে তা কার্যকর করা হলে এমন অপকর্ম কমে আসবে বলে মনে কর হয়। সর্বোপরি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার স্বার্থেই নদী দখল সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি : মিশা সভাপতি, ডিপজল সম্পাদক ফিলিপাইনে ব্রহ্মস পাঠাল ভারত, ৩৭৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি চীনের মোকাবেলায় নতুন ডিভিশন ভারতীয় সেনাবাহিনীতে! আবারো চেন্নাইয়ের হার, ম্লান মোস্তাফিজ 'কেএনএফ' সন্ত্রাস : সার্বভৌম নিরাপত্তা সতর্কতা অর্থনীতিতে চুরি : ব্যাংকে ডাকাতি পাকিস্তানে আফগান তালেবান আলেম নিহত যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য না করলে এ বছরই রাশিয়ার কাছে হারতে পারে ইউক্রেন : সিআইএ প্রধান রাশিয়ার সামরিক শিল্পক্ষেত্রে প্রধান যোগানদার চীন : ব্লিংকন ইরাকে সামরিক ঘাঁটিতে 'বিকট বিস্ফোরণ' শেখ হাসিনা সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল