২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ভাসানচরে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন

মানবাধিকার সমুন্নত থাকুক

-

রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার উখিয়া থেকে এক হাজার ৬৩৫ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে চট্টগ্রামে আনা হয়। সেখান থেকে তাদের ভাসনচরে পাঠানোর হবে। প্রথম দফায় ওই চরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য খাবার, ঘরবসতির অন্তত এক মাসের রসদ মজুদ করা হয়েছে। কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমশিনারের কার্যালয় থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরিত রোহিঙ্গাদের জন্য এক বছরের রসদ মজুদ করা হবে। তাদের প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য দেশী-বিদেশী ২২টি সাহায্য সংস্থাকে যুক্ত করা হয়েছে। পুরো কাজটি তদারকি করার জন্য ওই সংস্থাগুলোর অনেক কর্মী এরই মধ্যে ভাসানচরে অবস্থান নিয়েছে। সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে দ্বীপটিতে এক লাখ রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করা হবে। শুরু থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে আসছে। এর মধ্যেই সরকার তার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন শুরু করেছে।
সংবাদমাধ্যম কর্মীদের সরেজমিন প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে, কিছু রোহিঙ্গা ভাসানচরে স্বেচ্ছায় যেতে আগ্রহী। সেপ্টেম্বরে দুই নারীসহ ৪০ জন রোহিঙ্গা নেতাকে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। তারা নোয়াখালীর হাতিয়ায় সাগরের মধ্যে ভেসে থাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিতে গড়ে তোলা আবাসনব্যবস্থা দেখে স্বস্তি বোধ করেছেন। ফিরে এসে অন্য রোহিঙ্গাদের সে কথা বলেছেন। জানা যাচ্ছে, এর মধ্যে চার থেকে পাঁচ হাজার রোহিঙ্গা ভাসানচরে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাদের মধ্য থেকে প্রথম গ্রুপটি দ্বীপের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে। এদের অনেকে জানিয়েছেন, ঝড় বৃষ্টির মধ্যে উখিয়ায় থাকতে তাদের কষ্ট হচ্ছে। কেউ বলেন, উঁচু টিলায় বসবাস করা কঠিন। এর বিপরীতে তাদের মতে ভাসানচরে বসবাসের জন্য উন্নত স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সাজানো দালানকোঠার পাশাপাশি রয়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ। সেখানে নিরাপত্তা সুরক্ষাও রয়েছে। এ ছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতেও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এ দিকে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থাটি স্থানান্তর শুরু হওয়ার দিন এক বিবৃতিতে জাতিসঙ্ঘের কারিগরি কমিটির অনুমোদন ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে রোহিঙ্গাদের সেখানে পুনর্বাসন করার অনুরোধ জানিয়েছে। এর আগে ২ ডিসেম্বর জাতিসঙ্ঘ এক বিবৃতিতে জানায়, শরাণার্থী শণাক্তকরণের প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি স্থানান্তরের সার্বিক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সংস্থার কাছে পর্যাপ্ত তথ্য নেই। ২০১৮ সালে রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেয়ার শুরু থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। সরকারের জোরালো অবস্থানের মুখে জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নমনীয় হলেও তারা এখনো এ বিষয়ে একমত নয়। দুর্ভাগ্য, রোহিঙ্গা সমস্যার জন্য যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কাউকে জোরালো ও কার্যকর উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না। জাতিসঙ্ঘের নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনো এ ব্যাপারে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে পারেনি, যাতে রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে না।
রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে মিয়ানমার তাদের দেশ থেকে উৎখাত করেছে। বাংলাদেশ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। এভাবে অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরও বাংলাদেশ জোরালোভাবে বিশ্বসভায় রোহিঙ্গা এবং নিজেদের কারো প্রতি সমর্থন আদায় করতে পারেনি। এত বড় অন্যায়ের শিকার হওয়ার পরও কেন বন্ধুরাষ্ট্রগুলোর সমর্থন পেল না সেই দুর্বলতা আমাদের ক্ষতিয়ে দেখা দরকার। তবে এই বিপুল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে লালন পালনের জন্য বাংলাদেশ বিদেশী বন্ধুরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশকে খেয়াল রাখতে হবে তাদের আস্থায় রেখে সামনে এগোতে হবে। অন্য দিকে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের বিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে। তাদের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে কোনোভাবে তাদের বাংলাদেশ যেন দূরে ঠেলে না দেয়। মানুষ হিসেবে তাদের অধিকারের পূর্ণ মূল্যায়ন আমাদের করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার আদায় করতে ব্যর্থ হলেও বাংলাদেশ যেন তার দায়িত্ব থেকে পিছু হটে না যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে হিট স্ট্রোকে মরিচ ব্যবসায়ীর মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ৬ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন রায়গঞ্জে পাটভর্তি ট্রাকে আগুন জামালপুরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আসন বিন্যাস প্রকাশ ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

সকল