২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মৌসুমেও চালের দাম বাড়তি

নিম্নবিত্তের নাভিশ্বাস

-

বাজারে কিছু নিত্যপণ্যের দাম কমলেও প্রধান খাদ্যশস্য চাল এবং ভোজ্যতেলের মূল্য এখনো বাড়তি। বাজার অর্থনীতির মূল কথা, চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম হলে পণ্যের দাম বাড়ে। কিন্তু চালের বর্তমান বাজার দরে এই তত্ত্ব অসার। আর ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক বাজার দরের দোহাই দিয়ে দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে এই দুটি পণ্য নিয়ে করোনাকালে আর্থিক সঙ্কটে থাকা নিম্নবিত্ত মানুষের অস্বস্তি রয়েই গেছে। কিন্তু বাজার দর তদারকি যাদের দায়িত্ব, তাদের আচরণে মনে হয় না এ নিয়ে আদৌ তাদের কোনো মাথাব্যথা আছে। মনে হয়, তারা সুখনিদ্রায় সময় কাটাচ্ছেন।
আমন মৌসুমে নতুন ধান বাজারে উঠেছে। বাড়ছে চালের সরবরাহও। তার পরও গত চার দিনে খুচরা বাজারে মাঝারি ও সরু চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। মিল মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতায় বাড়তি দামে চাল বিক্রি হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সরকার নির্ধারিত চালের দাম মিল থেকে খুচরা পর্যন্ত কোনো পর্যায়েই ব্যবসায়ীরা মানছেন না। উল্টো অজুহাত তুলছেন, ধানের দাম বেড়ে গেছে, স্বাভাবিকভাবেই চালের দাম বেড়েছে। বাস্তবে ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে চালের মূল্য বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, আগে কেনা বোরো ধানে উৎপাদন হচ্ছে চিকন চাল। পাশাপাশি আমন চালের সরবরাহ বাড়ছে। এতে চালের দাম কমার কথা। চালের দাম বৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ী চক্রের কারসাজিই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। এর সত্যতা মেলে সরকারি সংস্থার তথ্যেই। কৃষি বিপণন অধিদফতর বলছে, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি সরু চাল মিনিকেট ৫০ থেকে ৫৩ টাকা, মাঝারি চাল ৪৬ থেকে ৪৭ ও মোটা ৪০ থেকে ৪২ টাকা যৌক্তিক মূল্য। আর খুচরায় প্রতি কেজি মিনিকেট ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, মাঝারি ৪৯ থেকে ৫০ ও মোটা ৪২ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হওয়া উচিত; কিন্তু বাজারে খুচরায় মানভেদে প্রতি কেজি মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৫৬-৬০ টাকা। মাঝারি চাল বিআর আটাশ, লতা ও পাইজাম বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫২ টাকা এবং মোটা চালের কেজি ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা টিসিবি ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যেও খুচরা বাজারে চালের দর বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি এসেছে। কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে প্রতি কেজি সরু চাল ৫৩ থেকে ৫৬ টাকা, মাঝারি চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা ও মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা ছিল।
এ দিকে বাজারে কয়েক মাস ধরেই ভোজ্যতেলের দাম বাড়তি। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটার প্রতি পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। বিপণনকারী কোম্পানিগুলো আরেক দফা বাড়িয়ে বাজারে নতুন দামে তেল ছাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেলের পাঁচ লিটারের বোতলের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৮০ থেকে ৬২৫ টাকা। এক লিটারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকা। টিসিবির হিসাবে বাজারে এখন সয়াবিন তেলের এক লিটারের বোতলের দাম ১১০ থেকে ১২০ টাকা, যা এক মাস আগের তুলনায় ১০ টাকা বেশি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়ে যাওয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গত বছরের চেয়ে এবার সরকারের গুদামে চালের মজুদ কম। ফলে বাজার নিয়ন্ত্রণ দুরূহ হয়ে পড়ছে। এর সুযোগ নিচ্ছেন মিলাররা। এখন চালের বাজার কয়েকজন মিল মালিকের ওপর নির্ভর করছে। যখন সরকারের বাজার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা দুর্বল হয়, তখনই তারা দাম বাড়িয়ে দেন। তাই যেসব মিল মালিক চালের বাজার অস্থির করছেন, তাদের আইনের আওতায় এনে ব্যবস্থা নেয়া উচিত। শুধু তালিকা করে দায়িত্ব শেষ করলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হবে না। তালিকা করায় সীমাবদ্ধতা থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। এ জন্য ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনায় বাজার নিয়ন্ত্রণে চাল আমদানি আরো বাড়ানো উচিত। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ খতিয়ে দেখা জরুরি। সব নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে বাজারে কঠোর নজরদারি জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে স্বল্প আয়ের ও নিম্নবিত্ত মানুষের দুর্ভোগ লাঘব হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement