দরকার যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা
- ০৪ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
চীনের রাষ্ট্রীয় পত্রিকা গ্লোবাল টাইমস খবর দিয়েছেÑ দেশটি ব্রহ্মপুত্রের উৎসের কাছে একটি বাঁধ নির্মাণ করতে যাচ্ছে। ১৪তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী বছর বাঁধটির নির্মাণকাজ শুরু হবে চীনে। এ থেকে দেশটি ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এ বাঁধের মাধ্যমে নদীর উৎস থেকে বিপুল পানিও সরিয়ে নেয়া হবে। এ বাঁধের ফলে ভাটিতে অবস্থিত ভারত ও বাংলাদেশের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভারত ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেÑ পাল্টা একটি বাঁধ তারাও নির্মাণ করবে। এর মাধ্যমে তারা চীনের সাথে দরকষাকষিতে রয়েছে। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ওপর নিজেদের হিস্যা আদায়ে সফল হয়নি। এবার দু’টি দেশ বাঁধ দিয়ে পানি সরিয়ে নিলে এ নদীর একেবারে ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশ বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হবে। তাই বাংলাদেশেরও উচিত ব্রহ্মপুত্রের ওপর অধিকার নিয়ে সোচ্চার থাকা।
চীনা পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান বাঁধটি নিয়ে বড় ধরনের আশা ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানান, ইতিহাসে এর সমকক্ষ কোনো প্রকল্প নেই। এটি চীনের পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। বাঁধটি থেকে বছরে ছয় কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে এবং দেশের একাধিক অংশে পানি সরবরাহ করা হবে। তিব্বতের বিপুল পানিসম্পদকে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্য পাঁচশালা পরিকল্পনায় এ বাঁধের বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। চীন দাবি করছে, এ বাঁধের ফলে অন্যদের ‘কোনো ক্ষতি হবে না’। বাস্তবে উজানের শক্তিশালী দেশগুলো যেমন প্রতিশ্রুতি দেয় চীনও তেমন দিচ্ছে। ভারত এ ধরনের প্রতিশ্রুতিকে আমলে নিচ্ছে না। খবরে জানা যায়Ñ চীনের বাঁধের প্রতিক্রিয়ায় ভারতও ব্রহ্মপুত্রের ওপর একটি বাঁধ নির্মাণ করার প্রকল্প নিচ্ছে। ১০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি তারাও পানিপ্রবাহকে নিজেদের ইচ্ছেমতো বদলে দেবে। এর মাধ্যমে তারা চীনা বাঁধের ক্ষতিকর প্রভাব মোকাবেলা করবে বলে জানা যায়।
ব্রহ্মপুত্র নদটি তিব্বতে উৎপত্তি হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। দেশের ভেতরে পদ্মার সাথে মিশে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। নদটি শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশে ৬০ শতাংশ পানি সরবরাহ করে। নতুন করে দুটো দেশ বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার করে নিলে বাংলাদেশের অবস্থা যে করুণ হবে সেটি উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫৮টি আন্তর্জাতিক নদী রয়েছে। এগুলো থেকে ভারত একচেটিয়া পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। গঙ্গাচুক্তি করা হলেও ভারত চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশকে হিস্যা দেয় না। আর তিস্তাচুক্তির মুলা ঝুলিয়ে রেখেছে। দেশটির সরকার পরিবর্তন হয়; ওই প্রতিশ্রুতি সবাই দিতে থাকে কিন্তু বাস্তবায়ন কেউ করে না। আন্তর্জাতিক নদীগুলো বাংলাদেশের জন্য একেকটি ফাঁস। শুকনো মৌসুমে পানি পুরো প্রত্যাহার করে নেয়া হয়, এতে এ দেশে হচ্ছে মরুকরণ। বর্ষা মৌসুমে সব বাঁধ এক সাথে খুলে দেয়া হয়, এতে সব ভেসে যাচ্ছে বন্যায়। পানি নিয়ে এমন বৈষম্য পৃথিবীর আর কোথাও নেই।
পৃথিবীতে এরপর যদি আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ হয় তাহলে পানির জন্য হবেÑ বিশেষজ্ঞরা এমন শঙ্কা ব্যক্ত করে থাকেন। আমরা প্রত্যেকটি মহাদেশে নদীর পানির হিস্যা নিয়ে দ্বন্দ্ব দেখতে পাচ্ছি। ব্রহ্মপুত্রের পানি নিয়ে বড় দুটো দেশের বিরোধের একটা মীমাংসা তাদের দরকষাকষির মাধ্যমে হবে। বাংলাদেশের উচিত বড় দুটো দেশের প্রতিযোগিতার মধ্যে নিজেদের অংশ আদায় করে নেয়া। একটি আন্তর্জাতিক নদীর প্রবাহ কোনোভাবে উজানের দেশের ইচ্ছার ওপর নির্ভর করতে পারে না। দরকার একটি সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা। সবাই মিলে যদি একটি নদীকে পরিচর্যা করে, তাহলে নদীর পাড়ের সব জনগোষ্ঠী লাভবান হবে। অন্য দিকে নদীর স্বাভাবিক প্রবাহকে যদি কেবল একটি বা দু’টি দেশের সুবিধার জন্য জোরপূর্বক একচেটিয়া ব্যবহার করা হয় তাহলে সেই নদী দীর্ঘমেয়াদে টিকবে না। ব্রহ্মপুত্র নিয়ে চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যৌথ ব্যবস্থাপনার চুক্তি হওয়া উচিত। একই সাথে, এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি নদী নিয়ে সমঝোতা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি, যাতে করে নদীর তীরের কোনো মানুষ বঞ্চিত না হয় এবং প্রকৃতি ও প্রাণ রক্ষা পায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা