১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনার টিকাদান কর্মসূচি

সমতা ও স্বচ্ছতা থাকতে হবে

-

দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। প্রায় তিন মাস পর দেশে এক দিনে আড়াই হাজারের বেশি করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। নতুন রোগীর সংখ্যা ও শনাক্তের হারÑ দু’টিই গত তিন মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। রোববার সকাল ৮টা থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ৫২৫ জনের দেহে সংক্রমণ শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর। এ সময়ে পরীক্ষার সংখ্যা বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে ২ সেপ্টেম্বর এক দিনে এর চেয়ে বেশিসংখ্যক রোগী শনাক্ত হয়েছিল। ওই দিন দুই হাজার ৫৮২ জন রোগী শনাক্ত হন। আর শনাক্তের হার ছিল ১৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্যবিদদের মতে, সংক্রমণের এ হার অব্যাহত থাকলে করোনার বিষয়টি আবার মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এতে জনস্বাস্থ্য, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে ফের এর প্রভাব ভয়াবহ হবে। নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় টিকা না পাওয়া পর্যন্ত ভাইরাসটির নিয়ন্ত্রণে নাগরিকদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর জোর দিচ্ছে সরকার। এ ক্ষেত্রে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে শুধু জরিমানা নয়, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেয়ার কথাও ভাবছে সরকার। সোমবার মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে মাস্কের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আলোচনা হয়েছে।
করোনার সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। সঙ্গত কারণে প্রশ্ন জাগে, এ সঙ্কট থেকে উত্তরণের উপায় কী? উত্তরটা আপাতদৃষ্টে সহজ, করোনাভাইরাস নির্মূল করা অথবা এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা। কিন্তু কিভাবে তা সম্ভব? একমাত্র উপায় একটি কার্যকর টিকা। বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের স্থায়ী সমাধান টিকার মাধ্যমেই সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। বিশ্বের অনেক ওষুধ কোম্পানি ও বিজ্ঞানী টিকা উদ্ভাবনের প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। এতে প্রতিযোগিতাও লক্ষ করা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি নিজেদের টিকা কার্যকর ও নিরাপদ বলে দাবি করেছে। নভেম্বরের শুরুতে মার্কিন ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মানিভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বায়োটেক ঘোষণা করে যে, তাদের পরীক্ষিত টিকা ৯০ শতাংশের বেশি কার্যকর। এর সপ্তাহখানেক পরেই আরেক মার্কিন জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মডার্না দাবি করে, তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল ডেটা অনুযায়ী তাদের টিকা ৯৪ দশমিক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কার্যকর। আর অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্রিটিশ ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উৎপাদিত টিকা যথেষ্ট কার্যকর। তবে এখন পর্যন্ত কোনো টিকা ব্যাপক জনগোষ্ঠীর মধ্যে বিতরণের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন পায়নি।
অনেক দেশের সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। এই বাস্তবতায় বিশ্ববাজারে করোনার টিকা আসার সাথে সাথে বাংলাদেশ সরকারও তা সংগ্রহ করে সারা দেশে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দেশের মানুষকে টিকা দিতে চায়। এ জন্য জাতীয় টিকাদান পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, খসড়া জাতীয় পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ‘ব্যবহার উপযোগী এবং অনুমোদিত কোনো টিকা না থাকলেও বাংলাদেশ টিকা দেয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। টিকা পাওয়ামাত্র অল্প সময়ের মধ্যে প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা সম্ভব হবে।’ তবে বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দফতরের পক্ষে এই ব্যাপক কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে পালন করা আদৌ সম্ভব কি না তা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অযোগ্যতার কারণে অতি জরুরি করোনার ভ্যাকসিন সংগ্রহ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন কেউ কেউ। এ কাজে সশস্ত্রবাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব দেয়া উচিত, এমন অভিমতও ব্যক্ত করা হচ্ছে।
আমরা মনে করি, কাদেরকে কিভাবে টিকা দেয়া হবে সে বিষয়ে সমতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হলেই কেবল করোনার টিকাদান কর্মসূচি সফল হতে পারে। টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি, জাতীয় পরিকল্পনায় ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে আগে টিকা দেয়ার যে কথা বলা হয়েছে, কর্মসূচি বাস্তবায়নকালে তার যেন ব্যত্যয় না ঘটে। একই সাথে টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিত্রিয়া দেখা দেয় কি না, সে বিষয়েও কঠোর নজরদারির ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে না পারলে জনগণ এ কর্মসূচি থেকে তেমন উপকৃত হবেন না। বরং ব্যাপক দুর্নীতির সুযোগ তৈরি হতে পারে। তাই সরকারকে টিকা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিতরণের পুরো পরিকল্পনা জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement