২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
তাজরীন ট্র্যাজেডির ৮ বছর

আজো বিচার হয়নি কেন

-

দীর্ঘ আটটি বছর পার হয়ে গেলেও তাজরীন ট্র্যাজেডির ভুক্তভোগীরা সুবিচার পাননি। যারা তাদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়েছিলেন, তারাও একে একে সরে পড়েছেন। এ দিকে, তাজরীন গার্মেন্টসের ভয়াবহ অগ্নিকা-ে যারা হারিয়েছিলেন পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বা একান্ত আপনজনকে অথবা হয়েছেন আহত ও পঙ্গু, তারা আজো অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। গত ২৪ নভেম্বর অষ্টম বর্ষপূর্তি হয়ে গেল, ঢাকার আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশন লি: এর ফ্যাক্টরির নারকীয় অগ্নিকা-ের। সে ঘটনায় ২০১২ সালে অন্তত ১১২ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটেছিল। আহত হন আরো ২০০ জন। নিহতদের স্বজন আর সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা বিক্ষোভ করেছেন সে অগ্নিদুর্ঘটনার বিচার কার্যক্রম ত্বরান্বিত করার দাবিতে।
পত্রপত্রিকার খবরে প্রকাশ, বিশ্বাস করা হয় যে, তাজরীনের ভয়াবহ অগ্নিকা-ের উৎপত্তি বিদ্যুতের শর্ট সার্কিট থেকে। ২০১৩ সালের মে মাসে সাভারের রানা প্লাজায় ভবন ধসে সহ¯্রাধিক গার্মেন্টস কর্মীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছিল। তবে মনে করা হয়, তাজরীনের ঘটনা এ দেশে ফ্যাক্টরিতে সংঘটিত সবচেয়ে মর্মান্তিক অগ্নিকা-। ওই ঘটনায় যে দু’টি মামলা করা হয়েছিল, বাদিপক্ষের কোনো সাক্ষী হাজির না হওয়ায় সেগুলোর তেমন অগ্রগতি হয়নি। ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলা দুটোর বিচারকাজ ঝুলে আছে। ঘটনার পরে প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলে, ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর এই বিচার শুরু হয় ১৩ জনকে আসামি করে। তাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টরও রয়েছেন। তবে সবাই জামিন পেয়ে স্বাভাবিক জীবন কাটাচ্ছেন। দু’টি মামলার বিচার শুরু হওয়ার পর, ৪২টি শুনানির তারিখে বাদিপক্ষের ১০৪ জন সাক্ষীর মাত্র আট জনের বক্তব্য গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। তাও গত ২০ মাসে কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা যায়নি। উল্লিখিত আট জন সাক্ষ্য দিয়েছেন ২০১৯ সালের ৭ মার্চ। ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ কোর্টের চিফ পাবলিক প্রসিকিউটর জানান, ‘সংশ্লিষ্ট সাক্ষীদের সমন নয় শুধু, গ্রেফতারের পরোয়ানা দেয়া সত্ত্বেও তারা আদালতে আসছেন না। তদুপরি, কোভিড মহামারীও বিচারে বিলম্বের কারণ। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছি যেন বিচার শেষ হয়।’
অন্য দিকে, মানবাধিকার সংগঠকদের অভিযোগ, বিজিএমইএ এবং বিদেশী ক্রেতারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের অর্থসাহায্য করার কথা। অথচ তারা সাহায্য করেছেন নামে মাত্র। এ দিকে, বিচারকাজের এত বিলম্ব দেখে ভুক্তভোগীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। তাজরীনের তখনকার একজন শ্রমিক বলেন, ‘আমার স্বামী আগুনে মারা গেছেন। আর আমি কন্যা, দু’জন ভাইবোন এবং বিধবা মাকে নিয়ে অর্থকষ্টে দুঃখের জীবন কাটাচ্ছি। সে অগ্নিকা-ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে এখনো বেকার। আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি মালিকদের থেকে।’ আরেকজনের ক্ষোভ, ‘অনেকেই যথাযথ ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিলেও সব ভুলে গেছেন তারা। এ ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী যারা, তারা মুক্ত জীবন কাটাচ্ছেন। অথচ আমরা সে ঘটনার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারিনি।’ গার্মেন্টস শ্রমিকদের একটি সংগঠনের নেতার বক্তব্য, ‘বিচার শেষ করতে কত দিন লাগবে, জানি না। তাজরীনের আগুন থেকে যারা বেঁচে আছেন, তাদের দুঃখকষ্ট দেখেও কেউ এগিয়ে আসেননি। বিচারকাজ থেমে থাকলেও নেই কারো মাথাব্যথা।’
আমরা মনে করি, ইতোমধ্যে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে কোনো বিচার ছাড়াই। তাই অবিলম্বে তাজরীনের ঘটণার সুবিচার সম্পন্ন করে ভুক্তভোগীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement