২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
মৃত্যুর বিভীষিকা থামছে না

সতর্কতাই সবচেয়ে জরুরি

-

গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ মার্চ। তার পর থেকে এই মহামারীর প্রকোপ কখনোই থেমে যায়নি। মাঝে কিছুটা দুর্বল হয়েছিল মাত্র। কিন্তু তার পরই শুরু হয় এর ‘দ্বিতীয় তরঙ্গ’। গত এক সপ্তাহে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এবং তাতে মৃত্যুর পরিসংখ্যান দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী। এরই মধ্যে সেটি ৩০ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
গত শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩৬ জন। এতে করে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ছয় হাজার ৫৮০ জন। ওই ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন আরো এক হাজার ৯০৮ জন। দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা এখন পর্যন্ত চার লাখ ৬০ হাজার ৬১৯ জন।
এসব পরিসংখ্যান উল্লেøখের কারণÑ করোনার থাবা আবারো কতটা মারাত্মক হয়ে উঠেছে সেটি দেখানো যাতে সাধারণ মানুষ সতর্ক হতে পারে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে সাধারণ্যে অনেকটা শৈথিল্য দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলা কিংবা বাইরে থেকে ঘরে ফিরে সাবান দিয়ে ভালো করে হাত ধোয়া তো দূরের কথা, ভাইরাস সংক্রমণ রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায় মাস্ক পরতেও নানা অজুহাত। সরকারিভাবে মাস্ক পরা নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, কখনো সেটি বলবৎ করার প্রশাসনিক চেষ্টাও লক্ষ করা যাচ্ছে। কিন্তু তা কার্যকর হওয়ার নয়। কারণ মানুষ অবাধে বাসে, ট্রেনে, লঞ্চে, স্টিমারে গা ঘেঁষাঘেষি করে চলার সুযোগ পেলে স্বাভাবিকভাবেই ধরে নেবে, বিপদের ‘তেমন কিছু নেই’। দেশে একমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোনো কার্যক্রম বন্ধ নেই। এটি কতটা করোনার কারণে আর কতটা শিক্ষার প্রতি শাসকদের অনীহা তা বোঝার উপায় নেই। তবে বাস্তবতা হলোÑ মানুষ করোনাভাইরাসটিকে আর বিপজ্জনক বলে মনে করছে না।
দেশে সংক্রমণ বাড়লেও শনাক্তের পরীক্ষা কিন্তু বাড়ানো হচ্ছে না। ফলে দ্বিতীয় তরঙ্গে এ ভাইরাস কতটা ব্যাপকতর হয়ে উঠেছে তা অনুমান করার উপায় নেই। কিন্তু বালুতে মুখ গুঁজে থাকলেই বিপদ এড়ানো যায় না। প্রতিদিন অধিক সংখ্যায় মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ফলে দেশের সেরা মেধাবীরাও চলে যাচ্ছেন চিরতরে। সে ক্ষতি আমরা হয়তো আর কখনোই পূরণ করতে পারব না। শুধু বাংলাদেশে নয়, বিশ্বের বহু দেশে করোনার দ্বিতীয় বা তৃতীয় তরঙ্গ চলছে।
যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত এক কোটি ৩২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৩৩ জনে দাঁড়িয়েছে এবং দুই লাখ ৬৬ হাজার ৯ জন মারা গেছেন। ভারত আছে করোনা দ্বিতীয় স্থানে। সে দেশে মোট আক্রান্ত ৯৩ লাখ ৫১ হাজারেরও বেশি এবং মারা গেছেন এক লাখ ৩৬ হাজার ২০০ জন। ব্রাজিল আক্রান্ত দেশের তালিকায় তৃতীয় স্থানে থাকলেও সর্বাধিক মৃতের সংখ্যায় রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। ব্রাজিলে মোট শনাক্ত রোগী ৬২ লাখ ৯০ হাজার ২৭২ জন এবং মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৭২ হাজার ৫৬১ জনের। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, রোববার সকাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মহামারী করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা সাড়ে ১৪ লাখ ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছয় কোটি ২১ লাখেরও বেশি।
এই পরিস্থিতিতে অনেক দেশে টিকা আবিষ্কারের প্রয়াস চলছে। টিকা নিয়ে এক ধরনের বাণিজ্যও জমে উঠেছে। কার টিকা কত বেশি কার্যকর তারই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিভিন্ন দেশ ও কোম্পানি। এই টিকা কেনার জন্য বাংলাদেশের মতো অসচ্ছল দেশগুলো বিদেশী সহায়তাও পাচ্ছে। সেই সুবাদে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ‘পকেট ভরার সুযোগ’ও অবারিত হচ্ছে। কিন্তু কথা সেটি নয়। কথা হলো, একজন ব্যক্তির মৃত্যু মানে অন্তত একটি পরিবারের দুর্ভোগ। উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হলে তো মহাবিপর্যয়। সেই বিবেচনা থেকে হলেও নাগরিকদের সর্বোচ্চ মাত্রায় সতর্ক থাকা অত্যাবশ্যক। আর তা থাকতে হবে এই দুর্যোগের অবসান না হওয়া পর্যন্ত।

 


আরো সংবাদ



premium cement