২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
মেল ও লোকাল ট্রেন

যাত্রীসেবার মান বাড়াতে হবে

-

দেশে সড়ক ও নৌপথের চেয়ে তুলনামূলক রেল ভ্রমণ নিরাপদ, আরামদায়ক এবং সাশ্রয়ী। ফলে যেখানে রেল ভ্রমণের সুযোগ রয়েছে, সেখানে ট্রেনে যাতায়াত যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় থাকে শীর্ষে। এ জন্যই প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক মানুষ রেলে ভ্রমণ করেন। তবে আমাদের রেলের সেবা এখনো পাশের অনেক দেশের তুলনায় কাক্সিক্ষত মানে পৌঁছাতে পারেনি। যদিও আন্তঃনগর প্রথম শ্রেণীর ট্রেনে সেবার মান নিদেনপক্ষে মেনে নেয়া যায়; কিন্তু মেল ও লোকাল ট্রেনের অবস্থা যাচ্ছেতাই, বলা চলে সেবার মান তলানিতে। প্রথম শ্রেণী এবং মেল ও লোকাল ট্রেনে এই যে সেবার মানে আকাশ-পাতাল তফাত, এটি শ্রেণিবৈষম্যের সাথে তুলনীয়। মেল ও লোকাল ট্রেনে সাধারণত নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর যাত্রীরা বেশি যাতায়াত করেন বলেই কি এমন আচরণ? অন্য দিকে আন্তঃনগর প্রথম শ্রেণীর ট্রেনগুলোর বেশির ভাগ যাত্রীই ধনিক-বণিক শ্রেণীর। সে জন্যই কি তাদের জন্য ভালো ব্যবস্থা? শুধু সেবার মানেই নয়, মেল ও লোকাল ট্রেনে নিরাপত্তাব্যবস্থারও অভাব রয়েছে। রাতে চলাচলের সময় এসব ট্রেনে আলোর ব্যবস্থা না থাকায় চোর-ছিনতাইকারীর উৎপাতও আছে।
আবার মেলের চেয়ে লোকাল ট্রেনের অবস্থা আরো খারাপ। লোকাল ট্রেনের লক্কড়ঝক্কড় বগির অনেক দরজা-জানালা থাকে ভাঙা। টয়লেটগুলো এত বেশি নোংরা থাকে, যা কোনোভাবেই ব্যবহারযোগ্য নয়। টয়লেটের দুর্গন্ধে ট্রেনে বসাও দায়। থাকে না পানি-বিদ্যুৎ। এসব ট্রেনে ব্যবহার করা হয় মান্ধাতার আমলের পুরনো ইঞ্জিন। আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী বাহন বলা হলেও মেল ও লোকাল ট্রেনের বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। শুধু সাশ্রয়ী হওয়ায় কিছু পয়সা বাঁচাতে চরম ভোগান্তি সঙ্গী করে নিত্যদিন চলাচলে বাধ্য হচ্ছেন গরিব যাত্রীরা।
লক্ষণীয় বিষয়, দূরপাল্লার হলেও প্রায় প্রতি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে মেল ট্রেন। ভাড়াও তুলনামূলক কম। দাঁড়িয়ে-বসে, গাদাগাদি করে ভ্রমণ করায় বাড়তি যাত্রী পরিবহন করা যায়। অতিরিক্ত টিকিট বিক্রি হওয়ায় ট্রেনগুলো থেকে আয়ও হয় বেশ। কিন্তু ‘গরিবের ট্রেন’ হিসেবে পরিচিত এই ট্রেনগুলো চালানো হচ্ছে একেবারেই দায়সারাভাবে। রেল কর্তৃপক্ষের ভাব এমন, গরিব মানুষ স্বল্প খরচে চলাচল করতে পারছে এটাই যথেষ্ট।
প্রথম শ্রেণীর ট্রেনে নতুন বগি সংযোজনের পর যে বগিগুলো থেকে যায়, ‘বিধিনিষেধের’ কারণে সেগুলো মেল ও লোকাল ট্রেনে ব্যবহার করা যায় না। অনির্ধারিত স্টেশনে যাত্রাবিরতি ও সময় মেনে না চলার বিষয় তো আছেই।
বিভিন্ন আন্তঃনগর রুটে বেশ কয়েকটি মেল ট্রেন চলাচল করলেও সব মেল ট্রেনের প্রায় একই দুরবস্থা। আসন সংখ্যার দ্বিগুণ যাত্রী যাতায়াত করলেও এসব ট্রেনের উন্নতি হয়নি। ট্রেনগুলোতে নতুন ইঞ্জিন ও বগি সংযোজনের দাবি দীর্ঘ দিনের। এ নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা আছে বলে মনে হয় না। স্বাভাবিকভাবেই যাত্রীরা চরম ক্ষুব্ধ। এমতাবস্থায় মেল-লোকাল ট্রেনের দুরবস্থা নিরসনে রেল কর্র্তৃপক্ষ সেগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে মানসম্মত বগি লাগানোর প্রয়োজন মনে করছে বলে মনে হয় না। জানা গেছে, একটি প্রথম শ্রেণীর আন্তঃনগর ট্রেনে আমদানি করা নতুন বগি সংযোজন করা হয়েছে। ট্রেনটি থেকে পুরনো যেসব বগি পাওয়া গেছে, সেগুলো দু’টি মেল ট্রেনে সংযোজনের অনুমোদন চেয়ে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে মাঠপর্যায় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। দীর্ঘ দিন পেরিয়ে গেলেও অনুমোদন মেলেনি। আমরা মনে করি, এ ধরনের বৈষম্যমূলক মনোভাব পরিহার করে লোকাল ও মেল ট্রেনের সেবার মান বাড়ানোর বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের মনোযোগ দেয়া জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল