২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বস্তিতে উপর্যুপরি আগুন

নিরপেক্ষ তদন্ত জরুরি

-

বস্তিতে আগুন লাগা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। একের পর এক বস্তিতে আগুন লেগে দরিদ্র উদ্বাস্তুরা সব হারাচ্ছেন। এ নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ রয়েছে। দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ফাঁকা হওয়া বস্তিতে আসেন নতুন দখলদাররা। আগের ছিন্নমূল মানুষরা আর বস্তিতে জায়গা পান না। সেখানে নতুন নতুন স্থাপনা দেখা যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অট্টালিকা ওঠে। তাতে করে অনেকসময় সন্দেহ দেখা দেয়, এসব আগুন লাগার কারণ স্বার্থন্বেষী মহলের কারসাজি নয়তো? রাজধানীতে গত সোমবার রাতে আগুনে পুড়ে গেছে মহাখালীর সাততলা বস্তি। পরের দিন বিকেলে মোহাম্মদপুরের বিহারি পট্টিতে এবং মধ্যরাতে দেখা গেল মিরপুরের কালশী বস্তিতে আগুন। আগুনের ঘটনায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন দরিদ্র একেবারে প্রান্তিক গোষ্ঠীর বহু মানুষ। এ ধরনের আগুনের ঘটনা নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দায়িত্বপূর্ণ কোনো তদন্ত হতে দেখা যায় না।
গত সোমবার গভীর রাতে মহাখালীর সাততলা বস্তিতে ভয়াবহ আগুন ছড়িয়ে পড়ে। বস্তিবাসী আগুন থেকে নিজেদের জান নিয়ে বাঁচতে পেরেছেন। তবে মধ্যরাতের পর ওই ধরনের রহস্যময় আগুন থেকে নিজেদের সম্পদ বাঁচাতে কেউ উদ্যোগ নিতে পারেননি। দেখা গেছে, সাততলা বস্তিতে আগুনে ১১৪টি ঘর পুড়ে গেছে। বাজারের ৩৫টি দোকানও ভস্মীভূত। ওই সব ঘরে যার যা সামান্য আসবাব এবং নগদ অর্থ-অলঙ্কার ছিল তা তারা হারিয়েছেন। দোকান মালিকদের পণ্যদ্রব্য ও নগদ অর্থও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
পরের দিন বিকেলে মোহাম্মদপুর বিহারি পট্টিতে আগুনে ৪০টি ঘর পুড়ে গেছে। একই দিন মধ্যরাতের পর মিরপুর ১১ নম্বরে কালশী বস্তিতে আগুন লাগে। আগুনে ৪৩টি কাঁচা ঘর ও ১২টি কাঁচা টং দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। ঘটনার চিত্রে দেখা যায়, বস্তির বাসিন্দারা একেবারে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর। নারীদের কেউ বাসাবাড়িতে বুয়ার কাজ করে থাকেন। কেউ নিরাপত্তা প্রহরীর কাজ করেন। অনেকে স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলে কাজ করে কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করছিলেন। তারা দিন এনে দিন খান। কারো ঘরে সামান্য আসবাব রয়েছে। কারো ছিল অনেক কষ্টে সঞ্চিত মাত্র কয়েক হাজার টাকা। তাদের সব পুড়ে গেছে। কারো কারো লাখ টাকার নগদ পুঁজিও পুড়ে গেছে।
বস্তিতে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এসব সংযোগ নেয়া হয়েছে যেনতেনভাবে। নিম্নমানের তার ট্যাপ দিয়ে পেঁচিয়ে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া হয়েছে। এতে নেই নিরোধক কোনো ব্যবস্থা। তাই আগুন লেগে গেলে বিদ্যুৎ সংযোগ নিরাপদ করার সুযোগ নেই। একইভাবে গ্যাস সংযোগও নেয়া হয়েছে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা ছাড়া। এলাকার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব লাইনের ব্যবসা করে অসাধু চক্র। তিন থেকে সাড়ে তিন শ’ টাকায় বিদ্যুৎ লাইন পাওয়া যায়। এসব চক্রের বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না।
বস্তিগুলোকে ঘিরে অবৈধ বিদ্যুৎ ও গ্যাসের ব্যবসার কথা সবাই জানেন। ঝুঁকিপূর্ণ লাইন দিয়ে তারা বছরের পর বছর সেবা নিচ্ছেন। ঢাকার বস্তিগুলোতে আগুন লাগার স্বরূপ বিশ্লেষণ করে একে রহস্যজনক মনে হয়। বড় বস্তিগুলো ভয়াবহ আগুন লেগে ভস্ম হয়ে যেতে আমরা দেখেছি। এতে বিভিন্ন সময় অনেকের প্রাণও গেছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে, আগুন লাগার পর বস্তির জায়গার মালিকানায় পরিবর্তন এসেছে। বিহারি পট্টি দখল করা হয়েছে আগুন লাগার পর। বস্তিতে আগুন লাগার কারণ খতিয়ে দেখা দরকার। কোনো অসাধু লোভী গোষ্ঠী ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্যে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে কি না যাতে করে বস্তি খালি হলে ওই সব এলাকা দখল করে নেয়া যায়। পরে সেখানে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে নিজেরা এর মালিকানা নিয়ে ভোগদখল করার ভাবনা হয়তো আছে। বস্তির প্রত্যেকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। সেখানে গ্যাস ও বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবহার ছাড়াও কোনো চক্র সক্রিয় রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। এমন চক্র সত্যিই সক্রিয় থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে কারো লোভের বলি করা অমানবিক। সরকারকে এ ব্যাপারে অবিলম্বে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন : প্রধানমন্ত্রী ফ্যাসিবাদের শোষণ থেকে জনগণকে মুক্ত করতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : মিয়া গোলাম পরওয়ার সিংড়ায় প্রতিমন্ত্রীর শ্যালককে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের নির্দেশ আ’লীগের চুয়াডাঙ্গায় হিট‌স্ট্রো‌কে যুবকের মৃত্যুর ৭ ঘণ্টা পর নারীর মৃত্যু ঢাকায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়াল, যশোরে দেশের সর্বোচ্চ ৪২.৬ শ্যালকদের কোপে দুলাভাই খুন : গ্রেফতার ৩ তীব্র গরমে কী খাবেন আর কী খাবেন না এবার তালতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতির আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে বললেন এমপি জয় পঞ্চপল্লীর ঘটনায় ন্যায়বিচারের স্বার্থে যা দরকার দ্রুততম সময়ের মধ্যে করার নির্দেশ সরকার ভিন্ন মত ও পথের মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে : মির্জা ফখরুল

সকল