২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
কোটি কোটি টাকার পাথর লুটপাট

সরকারের নির্দেশ কার্যকর করুন

-

সিলেটের কানাইঘাটের লোভাছড়া কোয়ারিতে প্রশাসনের জব্দ করা কয়েক কোটি টাকার পাথর লুণ্ঠনের একধরনের মহোৎসব শুরু হয়েছে। কয়েক মাস আগে এসব পাথর নিলামে তোলা হলেও ইজারাদারকে কার্যাদেশ বুঝিয়ে না দেয়াই এর প্রধান কারণ। ফলে শুধু ইজারাদারের চরম ক্ষতিই হচ্ছে না, সরকারকে মোটা অঙ্কের রাজস্ব হারাতে হচ্ছে। একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
আরো জানানো হয়েছে, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য উচ্চ আদালত এবং সরকারের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেও তা কার্যকর হয়নি এ পর্যন্ত। ইজারাদারের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট নিলাম বাতিল কিংবা তার পে-অর্ডারের টাকাও ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে না। অপর দিকে, জেলা প্রশাসকের বক্তব্য, উচ্চ আদালতে মামলা নিষ্পত্তি না হলে আদেশ বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। আর বিষয়টি চলে গেছে পরিবেশ অধিদফতরের আওতায়। পরিবেশসংক্রান্ত স্থানীয় পরিচালকের অভিযোগ, পাথর কোয়ারি নিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে এই অধিদফতর। অথচ খনিজসম্পদ ব্যুরো নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসককে। এ দিকে, একটি অসৎ সিন্ডিকেট সুযোগ পেয়ে কোয়ারির পাথর সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অবৈধভাবে। খনিজসম্পদ বিভাগের সচিব বলেছেন, ‘এত দিন পাথর ফেলে রাখলে চুরি বা লুটপাট হবেই। নিলামকৃত পাথর ইজারাদারকে বুঝিয়ে দিতে সিলেটের ডিসি এবং পরিবেশ অধিদফতরকে বলা হয়েছে অনেক আগেই। এখন এটা তাদের দায়িত্ব।’
কয়েক মাসে লোভাছড়ায় প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার পাথর জব্দ করেছে সিলেট জেলা প্রশাসক আর পরিবেশ অধিদফতর (ডিওই)। এরপর নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। প্রথম থেকেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি, নদী তীরে স্তূপ করে রাখা পাথর অবৈধ নয়। এগুলো ইজারাদারের কাছ থেকে কিনে রাখা হয়েছে। কোভিড মহামারীর দরুন সে পাথর অপসারণ করা যায়নি। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের এ দাবিকে অসত্য বলে গণ্য করে নিলাম ডেকেছে। জব্দ করা পাথরের তৃতীয়বারের নিলামে সর্বাধিক দরদাতা ছিলেন গোয়াইনঘাট উপজেলার নিজাম উদ্দিন। তার বক্তব্য, গত ১২ আগস্ট পরিবেশ অধিদফতর পরিচালকের অনুকূলে পে-অর্ডারে ৬৭ লাখ টাকা জমা দিয়ে তিনি এ নিলামে অংশ নেন। ১৬ টাকা দরে এক কোটি ঘনফুট পাথর বাবদ ১৬ কোটি টাকার নিলামে তিনিই সর্বোচ্চ দরদাতা। কিন্তু এরপর তিন মাস চলে গেলেও সিলেটের জেলা প্রশাসক এ পাথরের দখল এবং নিলামের কার্যাদেশ দেননি। ‘পছন্দ না হলে’ পুনঃনিলাম ও পে-অর্ডারের অর্থ ফেরত দেয়ার দাবি করেছেন তিনি। তবে ডিসি বরাবর বারবার আবেদন করেও ফল না হওয়ার দাবি তার। পাথরের মালিকানা দাবি করে কয়েকজন ব্যবসায়ী মামলা করেছেন। অপর দিকে, ডিসির চিঠির জবাবে জ্বালানি খনিজসম্পদ বিভাগ বলেছে, নদীর তীরে জমানো পাথর নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে। কিন্তু সে বিবেচনায় ৪৭.৭০ লাখ ঘনফুট পাথর হস্তান্তর করা যাচ্ছে না। কারণ, তা রিট মামলাকারীদের দেয়ার জন্য আদালতের নির্দেশ থাকলেও সিলেটের জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতর আপিল করেছেন। এ অবস্থায় বাকি পাথর চলমান নিলামের আওতায় জরুরিভাবে বিক্রি করে দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনার বাস্তবায়ন হয়নি। তাই ইজারাদার নিজাম রিট পিটিশন করেছেন। আদালত সে অনুযায়ী, চার সপ্তাহে বিষয়টি নিষ্পত্তির নির্দেশ দিলে তা-ও মানা হয়নি। এ দিকে, চোরাই পথে সরিয়ে নেয়া অব্যাহত থাকায় জব্দকৃত পাথর কমছে। জানা যায়, নৌকায় করে এ পাথর অন্যত্র জমা করে তা দেশের নানা জায়গায় পাচার করা হচ্ছে ট্রাক্টর ও ট্রাক দিয়ে। খনিজসম্পদ সচিব বলেছেন, ডিসি আলোচ্য আদেশ কার্যকর করায় অপারগ হলে চিঠিতে জানাতে পারেন। আমরা আমাদের সম্পদ বুঝিয়ে দিতে চেষ্টা করব।
অবিলম্বে ঊর্ধ্বতনের আদেশ মান্য করে প্রশাসন সমস্যাটি আশু সুরাহা করার আশা করছেন দেশবাসী।


আরো সংবাদ



premium cement