১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বায়ুদূষণ নিয়ে আদালতের নির্দেশনা

পরিস্থিতির উন্নতি হোক

-

রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে পরিবেশ অধিদফতরকে তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আগামী ৩০ দিনের মধ্যে তা জানাতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যাতে দূষণ না বাড়ে সেই নির্দেশও দিয়েছেন আদালত। গত মঙ্গলবার দেয়া হাইকোর্টের এই আদেশ একটি এনজিওর পক্ষে দায়ের করা রিট আবেদনের ফল। রিটের শুনানি শেষে গত বছর ১৩ জানুয়ারি বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছিলেন আদালত। সেগুলো যে অনুসরণ করা হয়নি সম্প্রতি বিভিন্ন গণমাধ্যমের রিপোর্টে সেটি উঠে আসে। এ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় বায়ুদূষণ বিশ্বের সর্বোচ্চ। বায়ুদূষণে ঢাকার অবস্থান সর্বোচ্চ এ কথা বললে চিত্রটা ঠিক বোঝা যাবে না। অন্য দেশগুলোর তুলনায়, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় ঢাকায় দূষণের মাত্রা প্রায় দ্বিগুণ।
বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’-এর সূচক (একিউআই) অনুযায়ী, গত ২১ নভেম্বর ঢাকায় বায়ুদূষণের মানমাত্রা ছিল ৩১৫। সেখানে তৃতীয় অবস্থানে থাকা কলকাতা শহরের মানমাত্রা ১৮৬, মুম্বাইয়ে ১৬৯ আর দিল্লিøতে ১১২। বিশেষজ্ঞদের মতে, বায়ুদূষণের এই মাত্রা রীতিমতো দুর্যোগপূর্ণ। তারা বলছেন, ছয় ধরনের পদার্থ এবং গ্যাসের কারণে ঢাকায় দূষণের মাত্রা সম্প্রতি অনেক বেড়েছে। এর মধ্যে বায়ুতে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ধূলিকণা অর্থাৎ পার্টিকুলেট ম্যাটার-পিএম ২.৫ বেড়ে যাওয়া অন্যতম কারণ। এ জন্য দায়ী করোনার প্রভাব কাটিয়ে যানবাহন চলাচল বেড়ে যাওয়া, ঢাকায় উন্নয়নকাজের জন্য বিরতিহীন খোঁড়াখুঁড়ি এবং ইটভাটাগুলো চালু হওয়া।
বর্তমান সময়ে স্বাস্থ্য বিষয়ে সামান্য জানাশোনা আছে এমন সবাই জানেন, বায়ুদূষণের কারণে মানুষের ফুসফুসের ক্ষতি হয়। ফুসফুসের ক্ষতির কারণে ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানিসহ বড় অসুখ যেমন হতে পারে তেমনই ঠাণ্ডাজ্বর, সর্দিকাশি, নিউমোনিয়ার মতো অসুখও হতে পারে। এতে ফুসফুস দুর্বল হয়ে যায়। একটি গবেষণায় এমন তথ্যও উঠে আসে, শুধু বায়ুদূষণের কারণে সৃষ্ট নানা রোগব্যাধিতে বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় সোয়া লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। দেশে যখন করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ চলছে, সেই সময় আশঙ্কার কথা হচ্ছে, ফুসফুসের দুর্বলতার কারণে সংক্রমণ বাড়তে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এখন বায়ুদূষণের কারণে যদি মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত ও দুর্বল হয়ে থাকে তাহলে করোনা মহামারী মোকাবেলা করা আরো কঠিন হবে। সে ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়তে পারে।
এ দেশে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে যেসব উন্নয়নকাজ চলে তাতে পরিবেশগত আইন মানা হয় না। নির্মাণকাজের জায়গাগুলোতে যাতে ধূলি সৃষ্টি না হয় সে জন্য নির্দিষ্ট সময়ে পানি ছিটানো, নির্মাণসামগ্রী, যেমন ইট ইত্যাদি আগে থেকে পানিতে ভিজিয়ে রাখা, নির্মাণকাজের জায়গাটি আবৃত করাÑ এ রকম অনেকগুলো পরিবেশগত নিয়মবিধি আছে যার কোনোটিই প্রায় মেনে চলেন না ঠিকাদাররা। এসব অনিয়ম দেখার জন্য সরকারের পরিবেশ অধিদফতরের নজরদারি করার কথা। সেই নজরদারি কতটা করা সম্ভব হয়, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। এ কারণেই আদালত পরিবেশ অধিদফতরকে তাদের নেয়া পদক্ষেপগুলো জানাতে বলেছেন।
এটা তো স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য যে, সরকারি দফতরগুলো যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করলে এসব বিষয় নিয়ে কারোই আদালতে যাওয়ার দরকার হতো না। কোনো ইস্যু আদালতে উত্থাপন করার অর্থ হলো, সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরের দায়িত্ব পালনে ঘাটতি আছে। বায়ুদূষণের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমনই। এর আগে আমরা বলেছিলাম, পরিবেশ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় জনবল আছে কি না, তাদের পক্ষে রাজধানীর সর্বত্র নজরদারি সম্ভব কি না সেটিও বিবেচনার দাবি রাখে। তবে, বায়ুদূষণের জন্য দায়ী সব কিছুই শুধু পরিবেশ দফতরের কাজ, এমন নয়। রাজধানীর সড়কে অতিরিক্ত ধোঁয়া নির্গমনকারী গাড়ির চলাচল বন্ধ করা প্রথমত বিআরটিএ এবং পরে পুলিশের দায়িত্ব। কিন্তু সে দায়িত্ব কতটা পরিপালিত হয়, তা রাজধানীবাসী সবাই জানেন।
আদালতের হস্তক্ষেপের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে, আমরা কেবল এটুকুই আশা করতে পারি।

 


আরো সংবাদ



premium cement