২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেকার

আমূল পরিবর্তন জরুরি

-

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি বলেছেন, ‘বিশ্ব ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পর্যাপ্ত দক্ষতা না থাকায় এ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষে বেকার থাকতে হচ্ছে ৪০ শতাংশ শিক্ষার্থীকেই।’ ঢাকা চেম্বার আয়োজিত, কর্মসংস্থানবিষয়ক এক ওয়েবিনারে তিনি এ তথ্য দিয়েছেন। সরকারের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব এতে ছিলেন প্রধান অতিথি। বিশেষ অতিথিদের মধ্যে ছিলেন দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান এবং আইএলও, ইউএনডিপি ও ইউনিডোর আবাসিক প্রতিনিধিরা।
পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন মতে, ঢাকার চেম্বার সভাপতি বলেছেন, ‘প্রচুর জনসংখ্যার বাংলাদেশে বিশেষত শিল্প খাতে দক্ষ জনবলের ঘাটতি ব্যাপক এবং দেশে ১২.৩ শতাংশ তরুণই বেকার। তার মতে, আগামী পাঁচ বছরে মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেককে সুদক্ষ করে তুলতে হবে। এ জন্য শিক্ষাব্যবস্থার কারিকুলাম যুগোপযোগী করে তোলা জরুরি।’ অর্থবিভাগের সচিব মহামারী মোকাবেলায় সরকারের নীতি সহায়তার বিষয়গুলো ‘নতুন করে ভেবে দেখতে’ বলেছেন। জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী (সরকারের সচিব) তরুণ সমাজের দক্ষতা বাড়াতে এনজিও এবং বেসরকারি খাতকে একসাথে কাজ করার আহ্বান জানান। জাতিসঙ্ঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি বলেন, ‘এ দেশের সম্ভাবনা অপার। তবে যুগোপযোগী শিক্ষাকার্যক্রমে অনেক পিছিয়ে থাকায় দক্ষ জনবল তৈরি হচ্ছে না। এ জন্য অংশীদারদের কাজ করতে হবে একযোগে। জাতিসঙ্ঘের শিল্প উন্নয়ন সংস্থার (ইউনিডো) প্রতিনিধির অভিমত, রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ দ্বারা শুধু বাজার সম্প্রসারণ হবে না, নতুন কর্মসংস্থান হবে নিশ্চিত। আন্তর্জাতিক কর্মসংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বলেন, শ্রম খাতের আধুনিকায়ন খুব জরুরি। কেননা কর্মসংস্থান, নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং জাতীয় প্রয়োজনের নিরিখে এর আধুনিকায়ন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। কাজের সুযোগ সৃষ্টি করতে বেসরকারি খাতের সমন্বিত পরিকল্পনার প্রয়াজন। অনুষ্ঠানের মূল নিবন্ধে জানানো হয়, বাংলাদেশে তরুণদের জন্য বছরে ২২ লাখ নতুন কাজের সুযোগ বের করতে হয়, যা খুব বড় চ্যালেঞ্জ।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে বলা হয় ‘মানুষ গড়ার কারখানা।’ বাংলাদেশে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো যে, অনেক আগে থেকেই ‘বেকার বানানোর কারখানায় পর্যবসিত হয়েছে, তা স্পষ্ট। এর মূল কারণ, প্রতি বছর ব্যাচেলর কিংবা মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়ে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী কলেজ-ভার্সিটি থেকে পাস করে বের হলেও তারা সময়ের উপযোগী শিক্ষা, বা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন না। ফলে তাদের জ্ঞান তেমন কোনো কাজে লাগছে না। বাস্তব চাহিদাভিত্তিক দক্ষতা ও নৈপুণ্য না থাকায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতজনদের পাশাপাশি, মাঝারি ও স্বল্পশিক্ষিত বাংলাদেশীরা বেকারত্বের অভিশাপে ধুঁকছেন, সে কথা বলাই বাহুল্য। বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী প্রবাসীদের অবস্থা দেখলে তা বোঝা যায় সহজেই। এমনকি, বাংলাদেশের সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনকারী রফতানি খাত, গার্মেন্টসের সাধারণ কর্মীরা স্বদেশী হলেও এ শিল্পের উঁচু পদগুলোতে প্রধানত অধিষ্ঠিত রয়েছেন ভারত ও শ্রীলঙ্কাসহ কয়েকটি দেশের নাগরিকরা। এর কারণ, এসব দায়িত্ব নির্বাহের উপযোগী দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে দেশীয় ব্যক্তিদের মধ্যে। অথচ বিদেশীরা এসব পদে থেকে বিপুল অর্থ উপার্জনই শুধু করেন না, বাংলাদেশ এ কারণে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও হারাচ্ছে। এ দিকে, দেশের সাধারণ মানুষের ‘বাঁচার মতো বাঁচতে চাওয়া’র আকাক্সক্ষা পূরণ হচ্ছে না।
এমন প্রেক্ষাপটে গতানুগতিক শিক্ষা নয়, যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার লক্ষ্যে পর্যাপ্ত জনবল গঠনের জন্য প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement