২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যাংক খাতে বাড়ছে মন্দ ঋণ

কমাতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা জরুরি

-

২০১৮ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ ছিল মোট খেলাপি ঋণের প্রতি ১০০ টাকায় ৮৩ টাকা। চলতি বছর জুনে এসে হয়েছে ৮৭ টাকা, অর্থাৎ ৮৭ শতাংশ। গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে আদায় অযোগ্য এই ঋণ। মন্দ ঋণ বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকের সম্পদের গুণগত মানও কমছে। এ ধরনের ঋণ আদায়ে ব্যাংককে আদালতে যেতে হচ্ছে। এতে বাড়ছে ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে খেলাপি ঋণের মাত্র ২ শতাংশ ফেরত দিয়ে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছিল ১০ বছরের জন্য।
খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, ব্যবসায়িক প্রভাব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জবাবদিহির ঘাটতি ও তদারকিতে অনিয়মকে বড় কারণ হিসেবে উল্লেøখ করে গত সেপ্টেম্বরে টিআইবি এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই গবেষণা প্রতিবেদনে ব্যাংক খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে উদ্বেগজনক হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। সংস্থাটির মতে, ব্যাংক খাতে অস্থিরতা, নৈরাজ্য, ঋণ জালিয়াতি এবং খেলাপি ঋণের উচ্চহার চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে আইনের দুর্বলতাও গবেষণায় চিহ্নিত করা হয়েছে। একক ব্যক্তি বা গ্রুপ কোনো একটি ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে পারবেÑ তা ঋণসীমা নীতিমালায় বলা আছে। কিন্তু একাধিক ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ কী পরিমাণ ঋণ নেয়া যাবেÑ তা আইনে না থাকায় মোটা অঙ্কের ঋণ নিয়ে খেলাপি হচ্ছেন অনেকেই। দুর্নীতিবিরোধী প্রতিষ্ঠান টিআইবি বলছে, দেশে এক দশকের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি হয়েছে। এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণখেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সঙ্কটে পড়বে। হাতেগোনা কয়েকজনের কাছেই রয়েছে বড় অঙ্কের ঋণের টাকা। আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে বিভিন্ন নামে কৌশলে বা যোগসাজশে বিপুল পরিমাণ ঋণ নেয়া হয়েছে।
প্রচলিত নিয়মানুযায়ী, খেলাপি ঋণ তিন ধরনের। কোনো ঋণ পরপর তিন মাস আদায় না হলে তাকে বলা হয় নিম্নমানের খেলাপি ঋণ। পরপর ছয় মাস আদায় না হলে তা হয়ে যায় সন্দেহজনক খেলাপি ঋণ। আর পরপর ৯ মাস আদায় না হলেই কুঋণ বা মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বলা হয়। সাধারণত কোনো ঋণ মন্দ মানের খেলাপি হলে তাকে আদায় অযোগ্যও বলা হয়। এসব ঋণ আদায়ে ঝুঁকি থাকে বেশি। এ কারণে মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন হলো ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ মুনাফা করবে তা খরচ না করে মন্দ ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা। কারণ, ব্যাংক যে ঋণ দিয়ে থাকে ওই অর্থ সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ। সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো মন্দ মানের খেলাপি ঋণ তিন বছরের বেশি অতিবাহিত হলে তাকে অবলোপন করতে হয়। অবলোপন হলে খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করে ব্যাংকের অন্য হিসাবে রাখতে হয়। ওই ঋণ আদায়ে ব্যাংককে মামলা করতে হয়। মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যাংকের বাড়তি ব্যয় হয়। ব্যাংক খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ একপর্যায়ে শাঁখের করাত হয়। এভাবে আদালতে ব্যাংকের প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা মামলার জালে আটকে আছে।
লক্ষণীয় হলোÑ ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নেয়ায় তারা বছরের পর বছর ঋণ পরিশোধ না করে পার পেয়ে যাচ্ছেন। বড় ঋণখেলাপির দেখাদেখি অন্যরাও ঋণ পরিশোধে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এ কারণে ব্যাংক খাতে মন্দ মানের খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তাই মন্দ মানের খেলাপি ঋণ কমাতে হলে আগে বড় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বিকল্প নেই। কিন্তু ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সমর্থক ব্যবসায়ী অংশ প্রভাব খাটিয়ে আইন পরিবর্তন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছেন। এ জন্য খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে হলে সর্বপ্রথম দরকার সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার। পাশাপাশি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে পদক্ষেপ নেয়া এবং তদারকি প্রতিষ্ঠানকে আরো তৎপর হওয়া। অন্যথায় ব্যাংক খাত মন্দ ঋণের অভিশাপ থেকে বের হতে পারবে না বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
জামালপুরে হিট স্ট্রোকে মরিচ ব্যবসায়ীর মৃত্যু প্রধানমন্ত্রী ৬ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন রায়গঞ্জে পাটভর্তি ট্রাকে আগুন জামালপুরে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টা ৪৬তম বিসিএস প্রিলি পরীক্ষার আসন বিন্যাস প্রকাশ ছোট দেশ কাতার অর্থনীতি ও কূটনীতিতে যেভাবে এত এগোল আশুলিয়ায় ছিনতাইকারীর হামলায় আহত নারীর মৃত্যু ‘মুসলিমদের সম্পদ পুনর্বণ্টন’ অভিযোগ মোদির, এফআইআর সিপিএমের প্রথম ধাপের উপজেলা ভোটে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী বিখ্যাত চালকবিহীনবিমানের আবিষ্কারক কটিয়াদীতে আসছেন গাজার গণকবরের ‘বিশ্বাসযোগ্য ও স্বাধীন’ তদন্তের আহ্বান জাতিসঙ্ঘের

সকল