২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বঞ্চিত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা

জাতীয়করণ করা হোক প্রতিষ্ঠানগুলো

-

শিক্ষার অধিকার আমাদের সংবিধানে স্বীকৃত। বাংলাদেশে জন্ম নেয়া প্রতিটি শিশু শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে। এ জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষায় সরকারি বাজেটে বিশাল বরাদ্দ রয়েছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা বহু ধারায় বিভক্ত। ভালো ও উন্নত শিক্ষার জন্য বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। শিক্ষা শুরুর পর্যায়েও সবার জন্য সমান সুযোগের ব্যবস্থা করা যায়নি। শিক্ষকরাও বড় ধরনের বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা এখন একটা মানসম্পন্ন বেতন পান। এর সমপর্যায়ের ইবতেদায়ি শিক্ষকরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। অথচ তারাও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো একই শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন শিশুদের। জাতীয়করণ না হওয়া ইবতেদায়ির শিক্ষকদের নামমাত্র ভাতা দেয়া হয়। উপেক্ষিত ইবতেদায়ি শিক্ষকরা দাবিদাওয়া আদায়ের জন্য দীর্ঘ দিন আন্দোলন করে যাচ্ছেন। আশ্বাস দেয়া ছাড়া তাদের দাবির পক্ষে সরকার আর কোনো সাড়া দেয়নি।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিস্ট্রেশন পাওয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা গত কয়েক দিন ধরে ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। তারা ইবতেদায়ি মাদরাসার জাতীয়করণসহ কয়েক দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। ১৯৭৮ সালের অধ্যাদেশ ১৭(২) ধারা মোতাবেক, মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের শর্তপূরণ সাপেক্ষে প্রতিষ্ঠানগুলো নিবন্ধন পায়। এর পর থেকে এগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধি মোতাবেক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। ১৯৯৪ সালে নিবন্ধিত বেসরকারি প্রাইমারি ও স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বেতন ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। পরে ধাপে ধাপে ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাইমারি স্কুল জাতীয়করণ করা হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন পান। সর্বনিম্ন বেতন পান ২২ হাজার টাকা। অন্য দিকে ১৫১৯টি স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা সর্বসাকুল্যে প্রধান শিক্ষক দুই হাজার ৫০০ টাকা ও সহকারী শিক্ষক দুই হাজার ৩০০ টাকা বেতন পান। অথচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকরা একই দায়িত্ব পালন করেন। তারা সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শিশুদের পাঠদান করেন। সরকারি সব কাজে অংশগ্রহণ করেন। একইভাবে ইবাতেদায়ির ছাত্ররা পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। নিবন্ধিত ইবতেদায়ি মাদরাসার শিক্ষকরা সামান্য একটা ভাতা পাচ্ছেন আর যারা নিবন্ধিত নয় সেসব মাদরাসার শিক্ষকরা একেবারেই বঞ্চিত রয়ে গেছেন।
ইবতেদায়ি শিক্ষকদের চলতি আন্দোলনের বিভিন্ন দাবির মধ্যে রয়েছে সরকারি প্রাইমারির মতো তাদের প্রতিষ্ঠানগুলো জাতীয়করণ করা। মুজিববর্ষ ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে তারা এ দাবি আরো জোরালোভাবে উপস্থাপন করছেন। তাদের আরো দাবি হচ্ছে, যেসব ইবতেদায়ি মাদরাসা এখনো বোর্ডের নিবন্ধন পায়নি সেগুলো নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা, শিক্ষকদের পিটিআইয়ের মতো প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসা, মাদরাসাগুলোকে অফিস সহকারী নিয়োগ দেয়া। এ ছাড়া এসব মাদরাসার জরাজীর্ণ ভবন সংস্কার ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের দাবি জানাচ্ছেন তারা।
ইবতেদায়ি মাদরাসা আমাদের দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণে ভূমিকা রেখে আসছে। এসব মাদরাসার শিক্ষকরা যে অত্যন্ত অবহেলিত সেটি বোঝা যাচ্ছে। তারা অনেকটাই নিজের খেয়ে অন্যের কাজ করে যাচ্ছেন। এতে দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছে। কিন্তু জাতীয়করণ করার ক্ষেত্রে তারা পুরোপুরি অবহেলার শিকার। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় বিপুল বৈষম্য রয়েছে। কিন্তু ইবতেদায়ি শিক্ষকদের প্রতি যে অবহেলা করা হচ্ছে সেটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় বৈষম্য। আন্দোলনের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময় তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়। শেষ পর্যন্ত আশ্বাস বাস্তব রূপ লাভ করেনি। এসব অবহেলিত ইবতেদায়ি মাদরাসা শিক্ষকদের বঞ্চনা লাঘবে সরকারের অচিরেই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement