২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘সামাজিক বনায়ন’ না প্রকৃতি ধ্বংস

আত্মঘাতী পদক্ষেপ আর নয়

-

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার সাতটি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের পাশে ক্ষতিকর বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে। এ ধরনের ‘সামাজিক বনায়নে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। দ্রুত বর্ধনশীল হলেও এসব গাছপালা এ দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অল্প সময়ে অধিক মুনাফার আশায় সরকারের বন বিভাগ এসব গাছ লাগিয়ে বনায়ন করছে। অভিযোগ উঠেছে, সড়কের দু’পাশে লাগানো গাছগুলো পরিবেশবান্ধব নয় মোটেও।
একটি সহযোগী দৈনিকের দশমিনা প্রতিনিধি এ খবর দিয়ে আরো জানিয়েছেন, উপজেলা বন বিভাগ বলছেÑ ‘কয়েক দশক ধরে বিদেশী প্রজাতির গাছের চারা লাগিয়ে বনায়ন করা হচ্ছে।’ অথচ এসব গাছের ছায়ায় ধানগাছে পোকার উৎপাতসহ রোগব্যাধি ব্যাপক হারে বাড়ছে। গাছের আশপাশে ধানক্ষেত বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যেমনÑ ক্ষতিকর আকাশমনি গাছের পাতা সহজে পচে না এবং কৃষির বেশ ক্ষতি হচ্ছে এতে। এ দিকে, দশমিনা উপজেলার প্রধান সড়কগুলো ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে রাস্তার দু’পাশেই সামাজিক বনায়নের নামে এসব গাছে ভরে উঠেছে। এলাকাবাসী জানান, বিদেশী এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর গাছগাছালি এ দেশে ফসলি জমির পাশাপাশি মাছের চাষাবাদে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের গাছের ছায়ায় ধানী জমির জায়গা বেদখল হচ্ছে। তখন ধানগাছ কেটে গরুকে খাওয়ানো ছাড়া কিছু করার থাকে না। কৃষকদের বক্তব্য, আকাশমনি গাছের ছায়ায় কোনো রকম চাষই সম্ভব হয় না। আবাদি জমির মতো মৎস্যখামারের পাশে এসব গাছ থাকলে মাছের চাষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওই এলাকার সামাজিক বনায়নসংশ্লিষ্ট একটি কমিটির সাধারণ সম্পাদকও স্বীকার করেন ‘এ দেশের প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে খাপ খায় নাÑ এমন গাছের বনায়ন দীর্ঘ সময় ধরে করা হচ্ছে।’ পরিবেশকর্মীরা বলেছেন, বিদেশী প্রজাতির গাছপালা দেশী প্রজাতির গাছের স্থান দখল করে নেয় এবং সেগুলো বিপন্ন হয়ে পড়ছে। তাদের অভিযোগ, ভিন্ন পরিবেশের যেকোনো প্রজাতির উদ্ভিদ এনে লাগানো হলে সেগুলোর শুধু বিস্তার ঘটে না, কালক্রমে তা আগ্রাসী আচরণ করা শুরু করে। এতে পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। এসব গাছ দিয়ে বনায়ন সম্পূর্ণ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন গবেষকসহ পরিবেশ আন্দোলনকারীরা। অপর দিকে, দশমিনা উপজেলা বন বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র বলেছে, অতীতে ‘কাঠের চাহিদা মেটাতে বিদেশী গাছের বনায়ন করা হয়েছে। অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে এসব গাছ রোপণ এবং সরকারের নার্সারিগুলোতে আকাশমনি ও ম্যানজিয়াম গাছের চারা উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।’
সামাজিক মাধ্যম যেমন বিশেষত নবীন প্রজন্মকে ‘অসামাজিক’ করে ফেলার অভিযোগ অতীব গুরুত্ববহ, তেমনি সামাজিক বনায়নের নামে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের অভিযোগও অত্যন্ত গুরুতর। এমনিতেই পরিবেশ অনেকটা ধ্বংস হয়ে গেছে নানাভাবে। তাই বনায়ন বা অন্য কোনো নামে পরিবেশ ও প্রকৃতির জন্য আত্মঘাতী পদক্ষেপ ও কর্মসূচি নেয়া উচিত নয় বৃহত্তর জনস্বার্থেই।


আরো সংবাদ



premium cement