মৎস্যজীবীদের স্বার্থই অগ্রগণ্য
- ১৮ নভেম্বর ২০২০, ০০:০০
রাজবাড়ী জেলার গোয়ালন্দে মাত্র ২০ একর প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকার বিশাল জলাশয় অপদখল করে রেখেছে একটি চক্র। জলাশয়ে নিজেদের রেকর্ড করা জমিতেও মাছ ধরতে গিয়ে সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে নির্যাতিত হতে হয় দরিদ্র মৎস্যজীবীসহ জমির মালিকদের। একটি সহযোগী দৈনিকের সচিত্র প্রতিবেদনের সূচনাতেই এ কথা বলা হয়েছে। এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদনের শিরোনামের ওপরে ছাপানো ছবিতে দেখা যায়, জলমহালের সীমানা অন্যায়ভাবে বাড়ানোর চেষ্টা করার সময়ে ইজারাদারদের নৌকা অবরোধ করেছেন জমির ভুক্তভোগী মালিকরা।
জানা গেছে, ‘মরা পদ্মার’ এই ‘বদ্ধকোল’ খোলা রাখার জন্য এলাকার লোকজন দীর্ঘকাল দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে প্রশাসন বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। তদুপরি, জেলা প্রশাসন যে ২০ একর লিজ দিয়েছে, তা-ও চিহ্নিত করে দেয়া হয়নি! ফলে দখলবাজরা ফায়দা তোলার সুযোগ পেয়ে গেছে। জলমহালটির নাম উজানচর (বদ্ধ) জলমহাল হলেও এর তফসিলভুক্ত বলে দেখানো হয়েছে পাশের ইউনিয়নের বিশাল এলাকাও। অথচ আশপাশের এসব স্থানে ব্যক্তি মালিকানার জমি আছে কয়েক হাজার একর। এ দিকে, ‘কোল’টি ‘ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’র নামে তিন বছরের জন্য লিজ নিয়ে প্রভাবশালী মহল যাচ্ছেতাই করে যাচ্ছে। অভিযোগে প্রকাশ, ইজারাদারের লোকেরা জলমহালের দৌলতদিয়ার পাঁচ কিলোমিটার অংশে মাছ ধরতে জেলেদের নিষেধ করেছেন। উজানচরে মাছ ধরার ‘অনুমতি’ থাকলেও মাছ বিক্রয়ে প্রাপ্ত টাকার ৪০ শতাংশই ইজারাদারকে দিতে হয়। অন্যথায়, দৈহিক লাঞ্ছনার ঝুঁকি থাকে। বানোয়াট মামলায় জেল খাটানোর নজিরও বিদ্যমান। বিত্তহীন মৎস্যজীবীদের কয়েকজন বলেন, “জলাশয়ে মাছ ধরতে গেলে মাস্তানরা আমাদের মারধর করে জাল নিয়ে গিয়েছিল। কয়েকজনকে ধরে নিয়ে অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয় এবং মিথ্যা অভিযোগে তুলে দেয়া হয় পুলিশের হাতে। ভাড়া করা দুর্বৃত্তরা সশস্ত্র হয়ে নদীতে টহল দিয়ে বেড়ায়। সম্প্রতি ওরা ‘টহল’ দিতে এলে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীর হাতে আটক হয় ওদের একটি ট্রলার।”
অপর দিকে, দৌলতদিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাট মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, ‘বৈধভাবে লিজ নিয়ে জলাশয় ভোগদখল করছি। আমার কোনো মাস্তান কিংবা প্রভাবশালী কেউ নেই।’ তিনি বলেছেন, “পাহারাদারদের সাথে এলাকাবাসীর ‘একটু সমস্যা’ হলেও থানার সহযোগিতায় নিষ্পত্তি হয়ে গেছে।” থানার ওসি বলেন, ‘জলমহাল নিয়ে কিছু উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করে যাবে।’ ভারপ্রাপ্ত ইউএনও বলেছেন, ‘নতুন এসেছি, অনেক কিছু জানা নেই। ফাইল দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যাতে ‘জলাশয়ের ভূমিমালিকদের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে গণপিটিশন দেয়া হয়।’
প্রতিবেদনের বিবরণ থেকে বলা যায়, প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তার যোগসাজশ ব্যতিরেকে ২০ একর লিজ নিয়ে কেউ ১৫ কিলোমিটার জলমহাল জবরদখল করে রাখতে পারে না। দরিদ্র মৎস্যজীবীদের স্বার্থে বহু আগেই ‘জাল যার জলা তার’ নীতি ঘোষণা করা হয়েছে। এই বাস্তবোচিত নীতির সর্বত্র সুষ্ঠু বাস্তবায়নই কাম্য। জেলেদের বঞ্চিত করে কায়েমি স্বার্থবাদী মহলকে তুষ্ট করার লক্ষ্যেই লিজ দেয়া জায়গার সীমানা অচিহ্নিত অবস্থায় রেখে দেয়া হয়েছে। অথচ সেটা সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা না হলে মূল সমস্যা থেকে যাবেÑ এমনকি বড় ধরনের হানাহানির আশঙ্কাও রয়েছে।
জলমহালগুলোতে জেলে সম্প্রদায় বা মৎস্যজীবীদের অগ্রাধিকার দেয়া এবং সর্ববিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ করার জন্য প্রশাসন পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেবে বলে দেশের মানুষের প্রত্যাশা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা