২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
দরিদ্র বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে

দক্ষ ব্যবস্থাপনা দরকার

-

বিগত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমেছে। অন্য-বস্ত্র-বাসস্থান-শিক্ষা-চিকিৎসা নিয়ে মানুষের আর্থিক সচ্ছলতার যে ইনডেক্স তৈরি করা হয়েছে সেই ইনডেক্সে নিয়মিত হারে মানুষের ‘উঠে আসার’ চিত্র ধারাবাহিকভাবে দেখা গেছে। মানুষের সচ্ছলতা মাপার এ ইন্ডিকেটর নিয়ে অনেক মত রয়েছে। তারপরও এই নিরিখে মানুষের জীবনের দৃশ্যমান উন্নতি আমরা অব্যাহতভাবে লক্ষ করেছি। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে দরিদ্র মানুষের উন্নতি ঘটেছে। করোনা মহামারী ইতিহাসে প্রথম এই ক্রমাগত উন্নয়নে প্রবলভাবে আঘাত হানল। এতে করে আমাদের দেশে মানুষের জীবনে কয়েক দশকে যে সচ্ছলতা অর্জিত হয়েছে এক ঝটকায় কয়েক মাসের ব্যবধানে তা আগের জায়গায় ফিরে গেছে। দেশী-বিদেশী বিভিন্ন জাতীয়-আন্তর্জাতিক সংস্থা তাদের জরিপে বাংলাদেশে দ্রুত হারে দারিদ্র্য আবার বৃদ্ধির খবর দিচ্ছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ও পিপিআরসি জানায়, চলতি বছরের জুলাইয়ের শেষে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৪০ শতাংশ হয়ে গেছে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ছিল ২০ শতাংশ। মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে দরিদ্রের হার দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অবশ্য ছয় মাসে দারিদ্র্য এতটা বেড়েছে বললে তা সঠিক বলা হবে না। মূলত মার্চে আমাদের দেশে করোনা আঘাত হানে। এরপর হঠাৎ করেই মানুষের জীবনে ব্যাপক অর্থনৈতিক স্থবিরতা নেমে আসে। দারিদ্র্য কমার হারটি আমরা যদি লক্ষ করি তাহলে দেখা যায়, ২০১৬ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২৪ শতাংশ। সে হিসাবে চার বছরে ৪ শতাংশ দরিদ্র কমেছে। কিন্তু কোভিড-১৯-এর ধাক্কায় একবারেই দরিদ্র বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেল।
অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তথ্যেও দারিদ্র্য বৃদ্ধির হারের প্রায় একই পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে। বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশে তিন কোটি ৮০ লাখ লোক নতুন করে দরিদ্র হয়ে গেছে। তাদের হিসাবে আগে আরো চার কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসাবে দেশে এখন ৩৫ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। তাদের হিসাবে ২০১৯ সালে এর হার ছিল ২০ শতাংশ। সংস্থাটির মতে, এর ফলে আয়বৈষম্য বেড়ে দশমিক ৫২ পয়েন্ট হয়েছে। ২০১৬ সালে ছিল তা দশমিক ৪৮ পয়েন্ট। এর মানে হচ্ছে, যাদের আয় কম ছিল তাদের আয় কমেছে যারা বেশি আয় করে তাদের চেয়ে পরিমাণে বেশি।
মার্চে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে আঘাত এসেছে তা সব শ্রেণিপেশার মানুষের ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। সমাজের একেবারে উচ্চবিত্তের কিছু মানুষ ছাড়া সবার আয় কমেছে। মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত মানুষ গচ্ছিত সম্পদ বিক্রি করে খাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, গত বছরের ডিসেম্বর শেষে অতি দরিদ্রদের ব্যাংক হিসাবে ৩৬৫ কোটি টাকা জমা ছিল। চলতি বছরের মার্চে তা কমে ৩২২ কোটি টাকা হয়ে যায়। জুনে তা আরো কমে ২৪৬ কোটি টাকা হয়ে। বর্তমান দুরবস্থার মধ্যে তাদের জমা রাখা টাকার পরিমাণ আরো কমে গেছে নিশ্চয়ই।
করোনার প্রথম ধাক্কায় অসংখ্য মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছে। অসংখ্য কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এর অনেকগুলোতে নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। তবে আগের গতিতে নেই আর প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে জনবল ছাঁটাই করা হয়েছে। যারা এখনো কাজে রয়েছেন তাদের বেতন কর্তন করা হয়েছে। করোনা নিয়ে এখনো মানুষের মধ্যে ভীতি রয়েছে। এই ভীতি অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক হিসেবে কাজ করছে। কর্মকাণ্ড তাই ঠিক আগের গতিতে বেগবান হচ্ছে না। এ অবস্থায় আরো বড় ধরনের মন্দা আমাদের গ্রাস করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় সরকারের নীতিগত পরিবর্তন দরকার। প্রথমত দরিদ্র মানুষদের সহায়তা কার্যক্রমকে আরো জোরদার করতে হবে। তাদের জন্য যে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে সেটি ঠিক তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ ব্যাপারে দুর্নীতিকে রোধ করতে হবে। এর পাশাপাশি চলতি বাজেট ও আসন্ন বাজেটকে বিদ্যমান পরিস্থিতির আলোকে সাজাতে হবে, যাতে করে অর্থনীতি একেবারে ভেঙে না পড়ে।


আরো সংবাদ



premium cement