২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বৈধতা পাবে অবৈধ শ্রমিকরা

এ সুযোগ কাজে লাগান

-

মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা দেয়া হচ্ছে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবৈধ অভিবাসীদের শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেন গত বৃহস্পতিবার। এর ফলে সে দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরত অন্তত দুই লাখ বাংলাদেশী শ্রমিক বৈধতা পেয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। মালয়েশিয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, অনিবন্ধিত অভিবাসীদের বৈধতার বিষয়ে দেশটির সরকারের একটি পরিকল্পনার আওতায় এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বৈধকরণ প্রক্রিয়া আগামী সোমবার শুরু হবে এবং তা আগামী বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগ, শ্রম বিভাগ এবং অন্যান্য সরকারি সংস্থা এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে। চলমান করোনা মহামারীর প্রকোপ শেষ হওয়ার আগেই দেশটি এই ঘোষণা দিলো। আগামী জুন পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে সে দেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত অভিবাসীরা নিবন্ধনের সুযোগ পাবেন এবং বৈধ শ্রমিক হিসেবে নির্মাণ শিল্প, কল-কারখানা, পাম অয়েল ও কৃষি ইত্যাদি চারটি খাতে কাজ করার সুযোগ পাবেন। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্যের পর বাংলাদেশের কর্মীদের দ্বিতীয় প্রধান গন্তব্য মালয়েশিয়া। দেশটিতে অবৈধভাবে অবস্থান করছে প্রায় দুই লাখ কর্মী। এ তথ্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ ‘বায়রা’র। তারাও বৈধকরণের এই সুযোগ পাবেন।
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী শ্রমিকদের অভিবাসন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল এতে সক্রিয় সিন্ডিকেটের অবৈধ কর্মকাণ্ড। বাংলাদেশী শ্রমিকদের পণপন্দী করে বিভিন্ন সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে বহুবার সতর্ক করেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো সাড়া পায়নি মালয়েশিয়া সরকার। বাংলাদেশের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বা শ্রম বিভাগ একটি সিন্ডিকেটও বন্ধ করতে পারেনি। বরং বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্বে থেকেও সিন্ডিকেটকে মদদ দেয়ার অভিযোগ ওঠে কোনো কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এর পরই মালয়েশিয়া বাংলাদেশী শ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দেয়। নতুন করে বৈধতা দেয়ার ঘোষণার পর এ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে দেশটির গণমাধ্যমে। তারা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সরকারের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা আসার সাথে সাথে দালালচক্রও সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে। কয়েক বছর আগেও একবার মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ অবৈধ কর্মীদের বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। সে সময় একশ্রেণীর দালাল অবৈধ কর্মীদের বৈধ করার নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় বলে অভিযোগ ওঠে। অসংখ্য অভিযোগ পেয়ে কর্তৃপক্ষ বৈধতা দানের কর্মসূচি স্থগিত করে দেয়। এবার যাতে এমন ঘটনা না ঘটে তার জন্য সরকার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু এটি মালয়েশিয়া সরকারের চেয়েও বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখার কথা বাংলাদেশের। কারণ, বাংলাদেশীরা কর্মসংস্থান হারালে বেশি ক্ষতি তো বাংলাদেশেরই হয়। কিন্তু ব্যাপারটি হয়ে গেছে উল্টো।
সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে হাজার হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হলেও এ দেশের সরকারের কোনো মাথাব্যথার কারণ ঘটে না। ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সহায় সম্বল বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা খরচ করে যেসব বাংলাদেশী বিদেশে পাড়ি জমান এ দেশে তাদের স্বার্থ, তাদের সমস্যা দূর করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ কখনো দেখা যায় না। তাদের ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন শেষ পর্যন্ত দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
চলমান করোনার কারণে মালয়েশিয়ায় চাকরি হারিয়ে অথবা করোনার আগে ছুটি নিয়ে যেসব অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছিলেন, তাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়েও বাংলাদেশ সরকার কোনো উপায় বের করতে পারেনি। দেশে আটকে পড়া এ রকম কয়েক হাজার শ্রমিকের মালয়েশিয়া ফেরা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ ফুরিয়ে গেছে অথবা শেষের পথে। এ বিষয়ে অবশ্য মালয়েশিয়া সরকার কোনো পদক্ষেপ এখনো নেয়নি। দেশে এসে আটকে পড়াদের ভিসা নবায়ন করা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ কাজ বাংলাদেশ সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে পারে। কিন্তু এটি যাদের দায়িত্বে তারা কতটা নজর দেবেন; সে বিষয়ে সংশয় থেকেই যায়। আমরা আশা করব, মালয়েশিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের বৈধতা দেয়ার মধ্য দিয়ে যে সদিচ্ছার প্রকাশ ঘটেছে বাংলাদেশ যথাযথভাবে সেই সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে।


আরো সংবাদ



premium cement