২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
করোনা নিয়ে টিআইবির রিপোর্ট

পরিস্থিতির কিছুমাত্র উন্নতি হয়নি

-

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ শীর্ষক রিপোর্টের দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ করেছে গত মঙ্গলবার। এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সরকারের গৃহীত কার্যক্রমে সুশাসনের প্রতিটি নির্দেশেই এখনো ব্যাপক ঘাটতি রয়ে গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের রাজনৈতিক বিবেচনায় ছাড় দেয়া এবং কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে লোকদেখানো ব্যবস্থা নেয়ার প্রবণতা লক্ষণীয়। এ ছাড়া তথ্য প্রকাশে বিধিনিষেধ আরোপের মাধ্যমেও অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা আড়াল করা হচ্ছে। চিকিৎসাব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি দেখা গেছে।
প্রতিবেদনে টিআইবি বলেছে, চিকিৎসাব্যবস্থায় অনিয়ম-দুর্নীতি, নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে হয়রানি,সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি, সরকারি ক্রয়ে দুর্নীতি, করোনা সংক্রমণ সম্পর্কিত তথ্য প্রকাশে ঘাটতি, কমিউনিটি পর্যায়ে সংক্রমণ বিস্তার রোধে কার্যকরতার ঘাটতি, হাসপাতালে মানসম্মত সুরক্ষাসামগ্রীর ঘাটতি, চিকিৎসাব্যবস্থায় সক্ষমতার ঘাটতি, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ক্ষেত্রে সাড়াদানে ঘাটতি, প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে বিতরণে বৈষম্য, করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা সম্প্রসারণে ঘাটতি ধরা পড়েছে। প্রয়োজনের সময় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সাপোর্ট না পাওয়ায় অনেক রোগীর জীবন হুমকিতে পড়ছে বলে জানায় সংস্থাটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, এখনো ৩৪ শতাংশের বেশি সেবাগ্রহীতাকে তিন বা ততোধিক দিন টেস্ট রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
এ ছাড়া জরিপে দেখা গেছে, সেবাগ্রহীতাদের ৯ দশমিক ৯ শতাংশ নমুনা পরীক্ষায় ভুল রিপোর্ট পাচ্ছেন। যাচাই না করে লাইসেন্সবিহীন এবং ভুয়া হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানের সাথে স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনা পরীক্ষা করার চুক্তি করেছে। রিপোর্টে দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার মাঠপর্যায় থেকে নমুনা সংগ্রহ করে কোনো পরীক্ষা না করেই ১৫ হাজার ৪৬০ জনকে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্ট দেয়।
দুর্নীতির ব্যাপারে টিআইবি গবেষণা বলছে, জরুরি পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সরকারি কেনাকাটায় বিধিবহির্ভূতভাবে এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মৌখিক আদেশে কেনাকাটা করা হয়েছে। টিআইবির রিপোর্ট ছাড়াও এর আগে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অনেকে অভিযোগ করেছেন, কয়েকটি সিন্ডিকেট স্বাস্থ্য খাতের সব ধরনের ক্রয় নিয়ন্ত্রণ করছে। এসব সিন্ডিকেটে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর, সিএমএসডি, বিভিন্ন হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ দুদকের কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও পাওয়া যায় বলে টিআইবি জানিয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দফতর, গঠিত অর্ধশতাধিক কমিটি ইত্যাদির মধ্যে কোনো রকম সমন্বয় না থাকার তথ্যও দিয়েছে সংস্থাটি।
শীত মৌসুমে করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় কার্যকর প্রস্তুতির অভাব রয়েছে। এ বিষয়ে আগেই প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। গণমাধ্যমে সে খবর এসেছিল; কিন্তু তার নির্দেশ যে তামিল করা হয়নি সেটি স্পষ্ট। গত মঙ্গলবারও গণমাধ্যমে খবর এসেছে, শাহজালাল বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো নির্দেশনা এখনো পায়নি কারো কাছ থেকে।
এর আগে গত জুনে করোনার ১০০ দিন পূর্তিতে এ-সংক্রান্ত প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল টিআইবি । তাতে বলা হয়েছিল, সরকারের কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অযোগ্যতার কারণে করোনাভাইরাস সঙ্কট প্রকট হচ্ছে। সেই প্রতিবেদনে দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষাসামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করার তথ্য প্রকাশ করা হয়। বর্তমানে সেই পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়েছে এমন নয়, বরং আরো অবনতি ঘটেছে বলেই প্রতীয়মান হয়।
জুনের ওই রিপোর্টকে সরকারের তরফ থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দেয়ার চেষ্টা করা হয়; যেমনটা করত অতীতের স্বৈরাচার বা সামরিক মদদপুষ্ট সরকারগুলো। এবারের রিপোর্টও হয়ত সরকারের একই রকম আক্রমণের মুখে পড়বে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মাঠপর্যায়ে জনগণ যখন সেবা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তখনই তারা সত্যিটা হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারছেন। ফলে সরকারের বক্তব্য এবং মাঠের বাস্তবতার মধ্যে যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে তা জনগণের জানতে বাকি নেই। সরকারের নিজের ভাবমর্যাদা রক্ষায় টিআইবির রিপোর্টে উঠে আসা অভিযোগগুলোর বিষয়ে সরকারের যথাযথ মনোযোগ ও ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement