২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জমির নামজারিতে নতুন সিদ্ধান্ত

সাফল্য নির্ভর করছে প্রয়োগে

-

দেশে জমিজমা নিয়ে প্রতিনিয়ত কত যে অঘটন ঘটছে তার কোনো হিসাব নেই। জমিসংক্রান্ত বিরোধ প্রায়ই খুনখারাবির পর্যায়ে গড়ায়। দেশে জমির মালিকানা-সংক্রান্ত বিষয়ের প্রক্রিয়াটি খুব জটিল। কেউ কোনো জায়গা কেনার পর তিন ধাপ পার হলে ওই জমির চূড়ান্ত মালিকানা পেয়ে থাকেন। প্রথম ধাপ রেজিস্ট্রেশন, দ্বিতীয়টি নামজারি, তৃতীয়টি রেকর্ড অব রাইটস (আরওআর)। কিন্তু নামজারি এবং আরওআর করতে মাত্রাতিরিক্ত ঝামেলা ও দেরি হওয়ায় অনেকে বেখবর থাকেন। এসব বিষয় নিয়েই সূচনা হয় জমির বিরোধ। বিরোধ গড়ায় মামলায়, তৈরি হয় সামাজিক বিশৃঙ্খলা। এতে মামলাজট তৈরি হয় আদালতে। আর্থিক ক্ষতি হয় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের। এক হিসাবে বাংলাদেশের মামলার মোট ৮৭ শতাংশের মূল কারণ ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ। তবে জমিজমা নিয়ে বিরোধ জিইয়ে রাখার পেছনে দেশের বর্তমান ভূমি ব্যবস্থাপনাও কম দায়ী নয়। সুনির্দিষ্টভাবে বলা যায়, ভূমি অফিসের গাফিলতি এবং সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাবে এ বিরোধের জন্ম হয়। এই দু’টি অফিসের দুর্নীতি সুবিদিত। ভূমিসংক্রান্ত বিরোধ জিইয়ে রাখার পেছনে কাজ করে ওই দুই অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের ফিকির। এই মানসিকতা এমনই তীব্র যে, সমাজে একটি কথার প্রচলন রয়েছেÑ ভূমি অফিসের ইট-কাঠও ঘুষ চায়।
জমির রেজিস্ট্রেশন ও মিউটেশন কিভাবে সহজ করা যায়, মানুষের হয়রানি না হয়, সময় যাতে কম লাগে এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে কোনো জমির দলিল করার সর্বোচ্চ আট দিনের মধ্যে নামজারি হবেÑ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা। দলিল ও নামজারির কাজটি সমন্বয় সাধনে এমন প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। বর্তমানে ভূমির দলিল হয় আইন মন্ত্রণালয়ের অধীন সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে। আর ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন উপজেলা অফিস বা সার্কেল ভূমি অফিস জমির নামজারির কাজ করে। দু’টি ভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে করা হয় বলে সমন্বয় করা কষ্টসাধ্য ছিল, এ জন্য দীর্ঘসূত্রতা ছিল। এখন থেকে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসিল্যান্ড অফিসের মধ্যে ইন্টার-অপারেটেবল সফটওয়্যার থাকবে। দেশের সব এসিল্যান্ড অফিসের চার কোটি ৩০ লাখ রেকর্ডস অব রাইটস অনলাইনে চলে এসেছে। সামনের দিনগুলোতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিস এবং এসিল্যান্ড অফিসের একজন আরেকজনের ডাটাবেজে ঢুকতে পারবে। যখন কেউ জমি রেজিস্ট্রেশনে যাবেন, সাব-রেজিস্ট্রার আগের মতো সাথে সাথে রেজিস্ট্রি করে দেবেন না, অনলাইনে এসিল্যান্ডের অফিস থেকে রেকর্ড অব রাইটসের স্ট্যাটাস জানবেন। রেসপন্সিভ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ওই তথ্য জানানো হবে। ফলে এসিল্যান্ডও জানবেন তথ্য পরীক্ষা করা হয়েছে।
বিদ্যমান ব্যবস্থায় একটি জমির দলিল রেজিস্ট্রি করার সময় জমিটি ঠিক কী অবস্থায় আছে তা সম্পূর্ণভাবে দেখতে পারে না রেজিস্ট্রি অফিস। অন্য দিকে জমি রেজিস্ট্রি হওয়ার পর নামজারি করতে গেলে ভূমি অফিসে দীর্ঘসূত্রতায় পড়তে হয়। কারণ, জমির দলিলসংক্রান্ত সব কাগজ রেজিস্ট্রি অফিস থেকে ভূমি অফিসে না গেলে তারা উদ্যোগ নিতে পারে না। এভাবে সময় নষ্ট হয় বা গ্রাহকদের ঘোরার সূত্রে সংশ্লিষ্ট অফিসে ঘুষ গুনতে হয়। নতুন পদ্ধতি প্রবর্তিত হলে জমির দলিল রেজিস্ট্রেশন করার সময় জমির আগের সব তথ্য এক ক্লিকেই দেখতে পারবে রেজিস্ট্রি অফিস। এরপর সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নামজারির জন্য তৈরি হয়ে যাবে। গ্রাহক নামজারির আবেদন করলে ভূমি অফিস সেটি আট দিনের মধ্যে সম্পন্ন করে দিতে বাধ্য থাকবে। রেজিস্ট্রি অফিস থেকে সম্পূর্ণ তথ্য অনলাইনে ভূমি অফিসকে দেয়া থাকবে, তাই এ ক্ষেত্রে ভূমি অফিস সময়ক্ষেপণ করতে পারবে না।
জমিসংক্রান্ত এই সিদ্ধান্ত দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এতে জমি নিয়ে বিরোধ এবং মামলা-মোকদ্দমা অনেকাংশে কমে আসবে। তবে সাফল্য নির্ভর করছে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ওপর। একটি প্রবণতা লক্ষণীয়, সরকারের তরফ থেকে দেশে প্রতিনিয়ত ভালো আইন প্রণয়ন করা হয় এবং জনবান্ধব সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়; কিন্তু প্রয়োগ এবং বাস্তবায়ন হয় না বললেই চলে। ফলে যত জনবান্ধবই হোক না কেন, প্রণীত আইন এবং সিদ্ধান্ত থেকে নাগরিকরা সুফল পান না। অবস্থা এমন যে, ‘কাজির গরু কেতাবে আছে; গোয়ালে নেই’।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল