২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নদী থেকে বেপরোয়া বালু উত্তোলন

বিরাট বিপর্যয়ের আশঙ্কা

-

দেশের নদ-নদী, খাল-বিলসহ সরকারি জলাশয় ভরাট, দখল ও দূষণের তাণ্ডবের পাশাপাশি এগুলো থেকে বেপরোয়াভাবে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলনের দৌরাত্ম্য চলছেই। এর ফলে জনগণ তথা সাধারণ মানুষের যে বিষম দুর্ভোগ পোহাতে হয়, সে দিকে কোনো ভ্রƒক্ষেপ নেই ক্ষমতাবান এসব অর্থগৃধুœ বালুখোরের। নয়া দিগন্তে এ বিষয়ক সর্বশেষ ঘটনার খবর ছবিসহ ছাপানো হয়েছে। ঘটনাস্থল দেশের উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা পাটগ্রাম। জানা গেছে, সেখানকার বুড়িমারী স্থলবন্দরের অদূরে বালু তোলা হচ্ছে।
পাটগ্রাম সংবাদদাতার পাঠানো এই প্রতিবেদনে আরো জানানো হয়েছে, সরকারের সংশ্লিষ্ট নিষেধাজ্ঞা এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশÑ উভয়কে লঙ্ঘন করে স্থানীয় ধরলা, তিস্তা ও সানিয়াজান নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের হিড়িক চলছে। এর ফলে জনচলাচলের রাস্তা জবরদখল, যাতায়াতে জনগণের দুর্ভোগ এবং আবাদি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াÑ এসব সমস্যার উল্লেখ করে পাটগ্রামের ইউএনওকে অভিযোগ করা হয়েছে। তবে কোনো প্রতিকার মেলেনি। এ দিকে খোদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন, ‘বালুমহাল ইজারা নিলে বালু তুলতে হবে শর্ত মেনেই। এ ক্ষেত্রে আইন মেনে না চললে স্থানীয় প্রশাসন আইন মোতাবেক পদক্ষেপ নেবে কিংবা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে।’ তিনি এ ব্যাপারে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। তা সত্ত্বেও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না কেন, তা এক বিরাট প্রশ্ন বৈকি। রহস্যজনক বিষয় হলো, কয়েক দিন ধরে চেষ্টা চালিয়েও এ নিয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি পাটগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে। তিনি ফোন না ধরার কথা পত্রিকায় এসেছে। এ ব্যাপারে লালমনিরহাটের ডিসিকে অবহিত করা হয়েছে। ডিসি বলেছেন, ‘নদীর যেখানে বালু তোলা হচ্ছে, সেসব জায়গার নাম মেসেজ করে দিন। ইউএনও ফোন না ধরার হেতু নেই। এ বিষয়ে দেখছি।’
অনুসন্ধানে জানা যায়, পাটগ্রামে ধরলা নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে প্রত্যেক দিন বালু তুলে ট্রলিতে করে বড় বড় স্তূপ করে জমা করা হচ্ছে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে। রাস্তার ধারে এ বালু রাখায় বুড়িমারী স্থলবন্দরের পণ্যবোঝাই ট্রাকসহ বিভিন্ন সড়কে যানবাহন চলাচলের সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। খোদ পাটগ্রাম পৌরসভার একাধিক স্থান এবং বুড়িমারী, দহগ্রাম ও বাউরা ইউনিয়নের কোনো কোনো এলাকায় দিনরাত এক নাগাড়ে বালু তোলা হচ্ছে। কোথাওবা দলীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নদী থেকে বালু উত্তোলনের কাজ চলছে। ‘বালুখোর’দের কারণে ফসলি জমি আর সড়কের ক্ষতি হলেও এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে দায়িত্ব পালনে আগ্রহী হতে দেখা যায় না। একটি এলাকার জনৈক বাসিন্দার অভিযোগ, ধরলার বালু ট্রলিতে নিয়ে যাওয়ায় কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষতি এবং যাতায়াতের পথে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে ১১ অক্টোবর ইউএনওকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেননি।
ধরলা ও তিস্তা নদীতে কিংবা বুড়িমারী ও দহগ্রামেই কেবল নয়, প্রায় সারা দেশে ক্ষমতাবানরা অর্থের লোভে এবং প্রশাসনের একটি অংশের আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে অবৈধ ও অতিরিক্ত বালু তুলে রমরমা কারবার চালিয়ে যাচ্ছে।
আমরা আশা করি, মিডিয়ায় প্রতিনিয়ত খবর প্রচারের ফলে অন্তত এবার কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটবে এবং অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement