১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে হত্যা

প্রধান আসামি গ্রেফতার হচ্ছে না কেন

-

সিলেটে পুলিশ ফাঁড়িতে রায়হান হত্যায় অভিযুক্ত বাহিনীর বরখাস্তকৃত উপপরিদর্শক আকবরকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। জনগণের জানমালের রক্ষাকারী পুলিশ নিজেই যখন নির্যাতন করে মানুষ হত্যা করে; তখন দোষী পুলিশের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর পদক্ষেপ যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে নেয়া হচ্ছে কি না সে প্রশ্ন সামনে চলে আসা স্বাভাবিক। ঘটনার ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও নিপীড়ক পুলিশ কর্মকর্তাকে ধরা যায়নি। অথচ আকবরের সাথে ও তার আশপাশে যারা ঘটনার পর চলাফেরা করেছেন, তারা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাদের কাছ থেকে আকবরের গতিবিধি জানা কঠিন কাজ নয়। ইতিপূর্বে পুলিশ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার অসংখ্য উচ্চ পারদর্শিতা দেখেছেন দেশবাসী। তারা যথাযথ গুরুত্বের সাথে আটক করার চেষ্টা করলে দেশে কারো পালিয়ে থাকা কঠিন একটি বিষয়।
নিহত রায়হানের মা ‘আমার ছেলে কবরে, খুনি কেন বাইরে’ ফেস্টুন নিয়ে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে অনশনে নামেন। পুত্রশোকে কাতর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ফাঁড়িতে প্রাণ গেছে আমার সন্তানের, এ ফাঁড়িতে অনশনে বসেছি আমি। আমাকেও নির্যাতন করে মেরে ফেলা হোক।’ রায়হান সম্পর্কে যেসব খবর জানা গেছে; তাতে বোঝা যায়, তিনি একজন সৎ তরুণ ছিলেন। অথচ তার বিরুদ্ধে আনা হয়েছিল ছিনতাইয়ের অভিযোগ। এ অভিযোগ আনার ক্ষেত্রে আকবরের সাথে পুলিশের অন্যরা সহযোগী ছিলেন। অন্য দিকে, আকবরের অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে। তিনি যে এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা সেখানকার অধিবাসীরা জানাচ্ছেন, আকবর স্বল্পসময়ে প্রাসাদোপম বাড়ি বানিয়েছেন। পুলিশের একজন উপপরিদর্শক হয়ে তিনি কত টাকা বেতন পান সে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তারা। অন্য দিকে, তার আশপাশের পুলিশ সদস্য যারা এ ধরনের একজন সৎ যুবককে পৈশাচিক কায়দায় হত্যা করছিল; তারাও এর সহযোগী হয়েছেন। তাহলে দায়িত্ব পালন না করে সরাসরি জনগণের অধিকার হরণ করতে তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না? বাস্তবে এখন পর্যন্ত তার সব সহযোগীকে গ্রেফতার করা যায়নি বা হয়নি।
আকবরকে বরখাস্ত করার পর সেখানে পুলিশের নতুন কেউ দায়িত্ব নিয়েছেন। দায়িত্ব নেয়ার সময় তাকে কেন গ্রেফতার করা হলো না। তখন যদি তাকে গ্রেফতার করা না যায়, তাহলে তিনি যখন পালিয়ে যাচ্ছিলেন কেন তখন তাকে গ্রেফতার করা হলো না? এমনকি তাকে একটা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে স্থানীয় একটি মিস্টির দোকানে অন্য একজনসহ গিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা দুরূহ কোনো কর্ম নয়। তার মাধ্যমে আকবরের অবস্থান এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব বলে মনে করা অমূলক নয়। আমরা দেখছি, সিলেটের সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ। তাদের সাথে সারা দেশের মানুষ এ ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এমন অন্যায়ের প্রতিকার চান সব মানুষ। মূল হোতার গ্রেফতারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোরালো উদ্যোগ দৃশ্যমান হচ্ছে না।
রায়হান হত্যার ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের একাংশের অন্যায়-নির্যাতনের ভয়াবহতারই বহিঃপ্রকাশ। পুলিশ যদি এ ঘটনার প্রধান আসামির বিরুদ্ধে আন্তরিকভাবে বিচারে সাহায্য না করে, তাহলে পুরো পুলিশ প্রশাসনই প্রশ্নবিদ্ধ হবে। নিকট অতীতে দেশে পুলিশ প্রশাসনের বড় বড় সফল অভিযান রয়েছে। পুলিশ সরকারবিরোধী নেতাদের আটকে উন্নত যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে; কিন্তু অপরাধী হিসেবে পুলিশই যখন কাঠগড়ায়, তখন তারা উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে সক্রিয়তা দেখাচ্ছে না কেন? এ ধরনের আচরণ দেশ, পুলিশ বাহিনী এবং সরকার কারো জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে না। মনে রাখতে হবে, রায়হান আজ অত্যাচারিত মানুষের প্রতীক। এর সুষ্ঠু বিচার না হলে রাষ্ট্রের পুলিশব্যবস্থা আরো বিশৃঙ্খলায় নিপতিত হতে পারে। যারা অন্যায় করছেন, তারা আশকারা পাবেন। ভবিষ্যতে আরো অনেক রায়হানের জীবন বিপন্ন হতে পারে। তাই আকবরের মতো দোষীদের বিচারের আওতায় আনাই হবে শুভবুদ্ধির পরিচায়ক।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement