১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শুধু থাকা ও পেটেভাতে রাখা নয়

রোহিঙ্গাদের সসম্মানে দেশে ফেরাতে হবে

-

রোহিঙ্গা সঙ্কটের সমাধানসূত্র এখনো মেলেনি। সঙ্কট সৃষ্টিকারী নিপীড়ক রাষ্ট্র মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়াও যায়নি। বরং মিয়ানমারের আচার-আচরণ যথেষ্ট আগ্রাসী। এমন মারমুখী আচরণে কোনো ধরনের জবাবদিহি করতে হয়নি দেশটিকে। উপরোন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বরং মিয়ানমারকে তোষণ করছে। এ দিকে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গার ভার বইতে গিয়ে বাংলাদেশ বড় বিপদ মোকাবেলা করছে। এই অন্যায়ের শিকার হয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে প্রতিকার পাচ্ছে না। একইভাবে জন্মভূমি থেকে উচ্ছেদ হলেও রোহিঙ্গারাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সুবিচার পায়নি। সমাধানের সূত্র যেখানে, সেখানে কেউ জোরালো চাপ দিচ্ছে না। ফলে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরার বিষয়টি অনিশ্চিতই থেকে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আচরণ ন্যায্য বলা যায় না।
বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিতে বিভিন্ন দেশ ও জোটের প্রতিনিধিরা একটি ভার্চুয়াল আলোচনার আয়োজন করেন। সেখানে তাদের জন্য গতানুগতিক সাহায্য দেয়ার বিষয়টি আলোচিত হয়। মূলত তহবিল সঙ্কটে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যৌথ সাড়াদান কর্মসূচি (জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান) বা জেআরপি চলতি বছরের জন্য ১০৬ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি ছিল। দিয়েছে মাত্র ৫১ কোটি ডলার। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএইচসিআর সমন্বয়ে এ সাড়াদান কর্ম চলছে। এ ভার্চুয়াল সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র্রকে আগের চেয়ে সক্রিয় দেখা গেছে। মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করে গেছেন, তিনি বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা একটি মর্যাদাপূর্ণ সমাধানে আমাদের চেষ্টা দ্বিগুণ করতে হবে’। একটি নিপীড়িত জনগোষ্ঠীকে নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় যে জঘন্য অন্যায় হয়েছে; তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
চীনকে প্রতিরোধ করতে এই সময়ে ওয়াশিংটন এশিয়ায় একটি জোট করতে যাচ্ছে। এই জোটে বাংলাদেশকে পাশে পাওয়া প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। সেই ভাবনা থেকে এটি শুধু বাক্যব্যয় কি না ভবিষ্যৎই তা বলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে মিয়ানমারের অর্থনৈতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সেটি রোহিঙ্গা বিতাড়নের পর ব্যাঘাত ঘটেনি। রোহিঙ্গা নিয়ে ইইউর কার্যক্রমের আন্তরিকতাও প্রশ্নবিদ্ধ। ৮ নভেম্বর মিয়ানমারে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে মানবাধিকার বিষয়ক সংলাপ হয়েছে ইইউর সাথে নেইপিডোর। ওই সংলাপের পর ইইউ যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে রোহিঙ্গাদের কথা উল্লেখ নেই। এ ধরনের সংলাপে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত না রাখা এবং বিবৃতিতে উল্লেখ না করার অর্থ দাঁড়ায়, মানবতাবিরোধী এই গণহত্যাকে জায়েজ করে মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথকে ইইউ সমর্থন করছে বলে বোঝায়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে ভারত ও চীনের ভূমিকা সবার জানা। ভারত এ নিয়ে ন্যায্য বলার আশ্বাস দিলেও একবারের জন্যও বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেনি। এমনকি জাতিসঙ্ঘের বিভিন্ন প্যানেলের ভোটাভুটিতে রোহিঙ্গা কিংবা বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দেয়নি। এর মধ্যে মিয়ানমারের সাথে দিল্লির ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। অন্য দিকে চীন সরাসরি মিয়ানমারের পক্ষ নিয়েছে। দৃশ্যত ইউরোপ ও আমেরিকা রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের পক্ষে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছেÑ তারাও মিয়ানমারকে তোষণের নীতি গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ বড় একটি অন্যায়ের শিকার হয়েছে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে। তার চেয়ে বড় বিষয় হওয়া উচিত একটি জনগোষ্ঠীকে গণহত্যা চালিয়ে শেষ করে দেয়ার অপরাধ। এ ধরনের একটা অবস্থায় থেকেও বাংলাদেশ কোনোভাবে এর প্রতিকার পেতে এবং রোহিঙ্গাদের জন্য কোনো ধরনের সুবিচার পাওয়ার ব্যবস্থা করতে পারেনি। এটা আন্তর্জাতিক কূটনীতির একটি বড় ব্যর্থতার নজির হয়ে থাকবে। যেসব দেশ মিয়ানমার অন্যায় করা সত্ত্বেও সমর্থন করে যাচ্ছে ওই সব দেশের সাথে বাংলাদেশেরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তা হলে কেন বাংলাদেশ তার পক্ষে অবস্থান নিতে এসব দেশকে পাচ্ছে না? এ খটকা মনে থেকে যায়। বাস্তবে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন নিয়ে এখন যে আলোচনা জোরালো হচ্ছে কিংবা তাদের এ দেশে সাহায্য দিয়ে পেটেভাতে রাখার যে আন্তর্জাতিক চেষ্টা; এতে কোনো খুব একটা লাভ হবে না। প্রয়োজন রোহিঙ্গাদের সসম্মানে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা। বাংলাদেশ যত দিন জোরালো কূটনৈতিক শক্তি দেখাতে না পারবে, তত দিন এর সমাধান হবে বলে মনে হয় না।


আরো সংবাদ



premium cement
প্রশাসন ও আদালতকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে সরকার : গণঅধিকার পরিষদ দুই কুলই হারালেন ইউপি চেয়ারম্যান জাকারিয়া আলম একদিন পর জবিতে উদযাপন হবে নববর্ষ, বন্ধ থাকবে ক্লাস-পরীক্ষা ইসরাইলে হামলার পর ইরানের পরমাণু স্থাপনা ‘সাময়িক’ বন্ধ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যাবে! স্ত্রীর বিরুদ্ধে সাইবার নিরাপত্তা আইনে সাবেক স্বামীর মামলা জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় গবেষণা আরো বাড়ানো হবে : কৃষিমন্ত্রী রেকর্ড ৪০.৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা জামালপুরে ইজিবাইকের ধাক্কায় শিশু নিহত সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে উদীচীর নববর্ষের অনুষ্ঠান, যা বলল ডিএমপি আড়াইহাজারে ব্যাটারি কারখানায় আগুন

সকল