বদলে যাচ্ছে ঋতুচক্র
- ২২ অক্টোবর ২০২০, ০০:০২
আমাদের দেশে আবহাওয়ার হেঁয়ালিপনায় গ্রীষ্মের উষ্ণতা অনুভূত হচ্ছে শীতে। শীতে বইছে ঝড়ো হাওয়া। বর্ষাকাল হচ্ছে দীর্ঘায়িত। বেড়ে গেছে বজ্রপাত আর শিলাবৃষ্টি। যদিও সুস্পষ্টভাবে স্থির হয়ে এখনো দেখা দেয়নি নতুন কোনো ঋতুচক্র। কিন্তু দিনে দিনে আবহাওয়া যেভাবে বদলে যাচ্ছে তাতে আবহমান বাংলার চিরচেনা রূপ যে খুব ধীরে লয়ে পাল্টে যাচ্ছে, সে লক্ষণ স্পষ্ট। আগামী কয়েক বছর পর বাংলাদেশে বসন্তের অস্তিত্ব থাকবে কি না, এ নিয়েও সন্দিহান আবহাওয়াবিদরা। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব দেশের ষড় ঋতুতে জেঁকে বসেছে। জীবন-প্রকৃতিও প্রভাবিত হচ্ছে। ঝুঁকিতে পড়ছে কৃষি, বাড়ছে দুর্যোগ, বাস্তুচ্যুত হচ্ছে মানুষ। নতুন নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। শুধু বাংলাদেশ নয়, আবহাওয়ার এ বৈরী আচরণ দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বজুড়েই।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, সাগরের পানি যত গরম হবে, ততই ঘূর্ণাবর্ত-নিম্নচাপ দানা বাঁধবে। ফলে শুধু শীত নয়, সামগ্রিকভাবে বদলে যাবে ঋতুচক্রের মেজাজ। রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং শীতের বদলে যাওয়ায় ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে পরিবেশে। আবহাওয়া অধিদফতরের হিসাব মতে, বিগত ৫০ বছরে দেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে প্রকৃতিতে শীতের প্রভাব কমবে, এটি নিশ্চিত। ফলে শীতের ফসল এবং ফুলের পরাগায়নে ব্যাঘাত ঘটছে। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনায় প্রতিবারই কিছু ফসল নষ্ট হচ্ছে। গোলমেলে আবহাওয়ায় বিভ্রান্ত হচ্ছেন চাষিরা। শীতে জাঁকানো ঠাণ্ডার বদলে কখনো গুমোট আবহাওয়া, কখনো বৃষ্টি ও তাপমাত্রা বাড়ায় ফসলের বৃদ্ধি যেমন কম হচ্ছে, তেমনি পাল্লøা দিয়ে বাড়ছে আগাছা। বুয়েটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে বছরে বোরো ও আমন ধানের উৎপাদন ১০ শতাংশ কমে যেতে পারে। অর্থাৎ, খাদ্যশস্য উৎপাদন ৪০ লাখ টন কমতে পারে। অন্য দিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে ফসল ও মৎস্যসম্পদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে পড়বে।
পরিবেশবিদরা বলছেন, যে হারে গাছ কাটা ও দূষণ বেড়েছে, স্বাভাবিকভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বর্ষা ঋতুতে। তাপমাত্রা ও বাতাসে সিসার পরিমাণ বৃদ্ধি, জনজীবনে ধাতব পদার্থ ব্যবহারের আধিক্য, মোবাইল ফোন ব্যবহার ও এর টাওয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস, জলাভূমি ভরাট, নদী শুকিয়ে যাওয়া ইত্যাদি বজ্রপাত বেড়ে যাওয়ার কারণ। এ বছর ৫১ দিন ধরে চলা বন্যায় দেশের ৩৭ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়। বন্যাকবলিত হন ৯০ লাখ মানুষ। বন্যায় ৪০ জেলায় ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার ৯২৭ কোটি ৭৪ লাখ ৬২ হাজার ৭৬ টাকা। বছরজুড়ে গড়পড়তা প্রতি মাসেই স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি বৃষ্টি হয়েছে। দেশে সেপ্টেম্বরে বৃষ্টি হয়েছে ৩৩ শতাংশ বেশি। বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ায় বন্যাপ্রবণতাও বাড়ছে। সামগ্রিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তন দেশে দুর্যোগ ও এর তীব্রতা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
শুধু বন্যার ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশে কয়েক বছর ধরে অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টি, তীব্র শৈত্যপ্রবাহ, তীব্র তাপদাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসও বেশি হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, সাধারণত আগস্টে বঙ্গোপসাগরে দুই থেকে তিনটি লঘুচাপ হয়; কিন্তু এ বছর হয়েছে পাঁচটি। সেপ্টেম্বরেও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছিল। গত এক দশকে শীত থাকছে ফাল্গুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। কিন্তু এর পরই তাপমাত্রা চড়ে যাচ্ছে ৩৫ ডিগ্রিতে। দখিনা বাতাসে থাকছে উষ্ণতা। শীতের পরই আগমন ঘটছে গ্রীষ্মের। দেশের এক অঞ্চলে বৃষ্টিপাত, তো অন্য জায়গায় প্রচণ্ড গরম। দীর্ঘ হচ্ছে বর্ষাকাল। অক্টোবরজুড়ে থাকছে মৌসুমি বায়ুর প্রভাব। প্রকৃতি হয়ে উঠছে চরমভাবাপন্ন। এ কথা সত্য, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বর্তমান অবস্থার মূল কারণ। আগামীতেও দেশে নানা ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাবে। এটা মনে রেখেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা