২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হু’র তালিকায় গ্লোবের ভ্যাকসিন

অভিনন্দন, যেতে হবে বহুদূর

-

বাংলাদেশের গ্লোব বায়োটেকের আবিষ্কৃত ‘ব্যানকোভিড’ ব্র্যান্ড নামের তিনটি ভ্যাকসিন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন ক্যান্ডিডেট তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বৈশ্বিক এ মহামারীর ভ্যাকসিন তৈরির প্রস্তুতিতে সফলতার ক্ষেত্রে ১৭০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হলো। তালিকার ২০ নম্বরে বাংলাদেশের অবস্থান। অক্সফোর্ডের অবস্থান ২২ নম্বরে। আমেরিকার মডার্নেরও উপরে রয়েছে বাংলাদেশের অবস্থান। তালিকায় অন্তর্ভুক্তি কোনোভাবেই নিশ্চিত করে না যে, এটি কার্যকরভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সক্ষম। সেই দাবি গ্লোব বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করেনি। যথাযথ পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষেই এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে এবং গ্লোব ওই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবু এটি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের জন্য একটি সুখবর। আমরা এ নিয়ে গর্ব করতে পারি।
গ্লোব বায়োটেক ইঁদুর ও খরগোশের ওপর চালানো তাদের ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ ট্রায়ালের ফলাফল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছে জমা দেয়। সংস্থার বৈজ্ঞানিক কমিটি তা যাচাই বাছাই করে তালিকাভুক্তির মাধ্যমে এর স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন এ ভ্যাকসিনের হিউম্যান ট্রায়াল অর্থাৎ মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে কার্যকারিতা দেখার অপেক্ষা। এ জন্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণাকেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী আইসিডিডিআরবি প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করছে। এ জন্য মূল অনুমোদন পেতে হবে বিএমআরসি (বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল) থেকে। সেই অনুমোদন পেলে আইসিডিডিআরবি মানবদেহে গ্লোবের ভ্যাকসিন পরীক্ষার কাজ শুরু করবে। আমরা জানি, করোনার ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা চলছে বিশ্বজুড়ে। ১৭০টি দেশ ও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান দিনরাত গবেষণা করে চলেছে ভ্যাকসিন উদ্ভাবনে। চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়ার ভ্যাকসিন অনেকটাই এগিয়ে। কিন্তু এমনও দেখা গেছে, অনেক দেশের ভ্যাকসিনই চূড়ান্ত ট্রায়ালে কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়নি। সে দিক থেকে ব্যানকোভিড আছে প্রাথমিক পর্যায়ে। ভ্যাকসিন মূলত কয়েকটি ধাপে পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। প্রথমে পশুর দেহে প্রয়োগ করে, এরপর অল্প কয়েকজন মানুষের শরীরে প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা ও প্রতিরোধী ক্ষমতা দেখা হয়। দ্বিতীয় ধাপে কয়েক শ’ মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা ও ডোজ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। তৃতীয় ধাপে এসে কয়েক হাজার মানুষের শরীরে ভ্যাকসিন দিয়ে এর কার্যকারিতা, নিরাপত্তা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা হয়। ব্যানকোভিডকে এখন তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। আমাদের করোনা সম্পর্কিত জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর, স্বাস্থ্য অধিদফতর গ্লোবের এই সাফল্যের প্রশংসা করেছে। বলেছে, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সুখবর, বিরাট সফলতা, গর্বের বিষয়। গ্লোবের চেয়ারম্যান মো: হারুনুর রশিদ আশা করছেন, সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতা পেলে আগামী জানুয়ারির শুরুতেই তারা ভ্যাকসিনটি বাজারে আনতে পারবেন। এ জন্য তিনি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার আবেদন করেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ দেশে নিরপেক্ষভাবে কারো সফলতার স্বীকৃতি দেয়ার নজির খুব কম। জাতীয় স্বার্থ নয়, বরং রাজনৈতিক ও অন্য বিবেচনা এ ক্ষেত্রে প্রায়শ মুখ্য হয়ে ওঠে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের করোনা কিট নিয়ে যে কেলেঙ্কারির নমুনা আমরা দেখেছি, তা একটি জাতীয় রেকর্ড হয়ে থাকবে। আশঙ্কা সেখানেই। গ্লোবের ভ্যাকসিন নিয়ে তেমন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হবে নাÑ এটিই প্রত্যাশিত। সবচেয়ে বড় যে বিষয় সেটি হলো, গ্লোবের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন প্রমাণ করেছে, বিশ্বকে দেয়ার মতো যোগ্যতা বাংলাদেশেরও আছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তালিকায় গ্লোবের ভ্যাকসিনের জায়গা করে নেয়ার অর্থ হলো, বৈশ্বিক সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশের মেধা ও সামর্থ্যরে স্বীকৃতি অর্জন। এই সাফল্যের জন্য আমরা গ্লোব বায়োটেক এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানাই। তাদের সার্বিক সাফল্য কামনা করি।


আরো সংবাদ



premium cement