১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যে দিশেহারা অবস্থা

সংরক্ষণ ও বণ্টনে অব্যবস্থাপনা

-

মানুষ নিজেদের জন্য ন্যূনতম খাদ্য সংগ্রহ করতে এখন হিমশিম খাচ্ছে। উচ্চবিত্তের সামান্য একটা অংশ ছাড়া দেশের বেশির ভাগ মানুষ এ সমস্যায় পড়েছে। অথচ যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ খাদ্যশস্য ও আমিষের উৎপাদনে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। তা হলে কেন মানুষ নিত্যপণ্য সুলভ মূল্যে পাচ্ছে না। এ প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। গতকাল বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়েছে। মহামারীর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানুষের জন্য খাদ্য সংগ্রহ করা একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। দেশে পর্যাপ্ত মাছ, গোশত, দুধ, ডিম উৎপাদন হয়। শাকসবজি, ফলমূল উৎপাদনেও বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদিত খাদ্যপণ্য সংরক্ষণ ও বণ্টন ব্যবস্থায় অদক্ষতা অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। ফলে খাদ্যপণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
বিশ্ব খাদ্য সংস্থার (এফওএ) গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে খাদ্যপণ্য উৎপাদন থেকে ভোক্তার আহারে সেটি সংযুক্ত হওয়া পর্যন্ত বড় ধরনের সিস্টেম লস হচ্ছে। খাদ্যশস্য ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করার পর থেকে এটি শুরু হয়। মাছ, গোশত, দুধের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এগুলো মানসম্পন্ন প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ সংরক্ষণ ও বহন করা হয় না। যে তাপমাত্রায় এটি সংরক্ষণ করা হবে এবং সেটা যে পরিবহনের আনা-নেয়া হবে সেগুলো উপযুক্ত নয়। যারা এটি করেন তারাও এ কাজে দক্ষ নন। ফলে প্রতিটি খাদ্য তার পুষ্টিমান হারায়। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে এসব খাদ্যদ্রব্য দেহে পুষ্টি জোগানের পরিবর্তে ক্ষতি করে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত ফল ও সবজির ২২ থেকে ৪৪ শতাংশ পর্যন্ত নষ্ট ও অপচয়। এ জন্য যতটুকু সাহায্য-সহযোগিতা নীতি প্রণয়ন দরকার সেটা করা হয়নি। অপচয় ও নষ্ট রোধ করার জন্য সচেতনতামূলক কার্যকর কর্মসূচি আমাদের নেই।
কৃষক একটি খাদ্যপণ্য উৎপাদনের পর সেটা ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারেন না। শক্তিশালী বাজারব্যবস্থা গড়ে না ওঠায় এই সুযোগ নিচ্ছেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। বাংলাদেশে উৎপাদিত কৃষিপণ্যগুলোর দামের তুলনামূলক চিত্র দেখলে ব্যাপারটা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে। চাল, আলু ও পেঁয়াজসহ খাদ্যশস্যের কথাই বিবেচনা করতে পারি। এসব পণ্য উপযুক্ত মূল্যে বাজারে বিক্রি করা গেলে দেশের সাধারণ মানুষ দারুণভাবে উপকৃত হতো। দেখা যাচ্ছে, চালের বাজার চড়া। এর মাশুল দিচ্ছে সাধারণ মানুষ। তাদের পকেট কেটে নেয়া হচ্ছে। অন্য দিকে ধান উৎপাদনকারী কৃষক ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসান গুনতে হয়। কাঁচা শাকসবজির ব্যাপারে এ কথাটি আরো বেশি সত্য। কৃষকরা স্থানীয় বাজারে ফড়িয়াদের কাছে পচনশীল সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হন। অথচ একই সবজি রাজধানীসহ সারা দেশের মানুষকে গুণ বেশি দামে কিনতে হয়। বর্তমান বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। প্রতিটি খাদ্যপণ্যে একই অবস্থা। লাগামহীন বাজারব্যবস্থার শিকার আমরা।
উন্নত দেশগুলোতে কৃষকের অধিকার সুরক্ষিত করা হয়েছে। এর মূল কারণ উৎপাদন ব্যবস্থায় যাতে বিঘœ না ঘটে। আমাদের দেশে সবচেয়ে দুস্থ অবস্থায় রয়েছেন কৃষক। ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই। একবার তারা উৎসাহী হয়ে পেঁয়াজ চাষ করেন। পেঁয়াজ যখন ক্ষেত থেকে উঠল, দেখতে পেলেন বাজারে দাম পড়ে গেছে। কারণ প্রতিবেশী দেশ থেকে সে সময় পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। তখন লোকসানের কারণে পেঁয়াজ উৎপাদন বন্ধ করে দেন কৃষক। একই ঘটনা অন্য অনেক খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রেও ঘটছে। এ অস্থিতিশীলতার সুযোগ নেন মধ্যস্বত্বভোগীরা। বাস্তবতা হলোÑ কৃষকের পাশাপাশি ক্রেতাসাধারণ এর ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন। সর্বোপরি খাদ্যের সরবরাহ নিরাপদ করতে হলে আমাদের এর উৎপাদন সংরক্ষণ ও বাজারজাত প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে দেশের স্বার্থ শতভাগ রক্ষিত হয়; দুর্নীতিবাজ মধ্যস্বত্বভোগীদের চক্র ভেঙে যায়।


আরো সংবাদ



premium cement