১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আলুর দাম সীমা ছাড়িয়েছে

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

-

ভাতের পর বাংলাদেশে কোন খাদ্যটি সবচেয়ে জনপ্রিয়? সবাই বলবে আলু। আলু সব কিছুর সাথে মিশতে পারে। আবার খাদ্য হিসেবে একা শুধু আলুই যথেষ্ট। সেদ্ধ করে ভর্তা করে, রান্না করে, চিফস বানিয়ে নানা রকমে এটি মানুষের ক্ষুধা নিবারণ করতে পারে। এটি সহজে বিপুল পরিমাণে দেশে উৎপাদন হয়, আবার কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করতেও সুবিধা। তাই সব সময় এটি বাজারে সহজলভ্য। বর্তমান বাজারে খাদ্যপণ্যের উচ্চমূল্যের মধ্যে মানুষ খাদ্য হিসেবে অধিক হারে আলুর ওপর নির্ভর করছে। মধ্যবিত্ত নি¤œবিত্ত অভাবীরা দ্রব্যমূল্যের কশাঘাতে দিশা হারিয়ে আলু দিয়ে ক্ষুধা নিবারণ করছে। সেই আলুর দাম হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। গতকালের দৈনিক পত্রিকার খবরে জানা যাচ্ছে, কেজিপ্রতি আলুর দাম ৬০ টাকা হয়েছে। বেশ কয়েক দিন ধরে গরিবের ভরসা খাদ্যপণ্যটির দাম বাড়লেও সরকারের পক্ষ থেকে বাজার নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে না।
বুধবার এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি সাধারণ আলুর দাম ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভালো মানের আলু কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকা। এই হিসাব ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। তাদের হিসাবে এক দিনে আলুর দাম ২৫ শতাংশ বেড়েছে। আর এক বছরে বেড়েছে ১১১ শতাংশ। বাস্তবে বাজারে আলু বেশ কয়েক দিন ধরে আগের চেয়ে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা ৭৭ লাখ টন। গত বছর দেশে এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। চাহিদা মেটানোর পরও এ হিসাব মতে, ৩২ লাখ টন আলু বেচে যাবে। ধরে নিলাম ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া ও অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষ বেশি করে আলু খাচ্ছে। তাতেও খাদ্য হিসেবে মানুষের আলু গ্রহণের হার ৫০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে কোনোভাবে বলা যায় না। কারণ আগের বছরের চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি আলু খেলেও আলুর ঘাটতি হবে না। তাহলে কেন আলুর দামের এ ঊর্ধ্বগতি। সেই প্রশ্নের উত্তর কেউ খোলাসা করে না বললেও সাধারণ মানুষ তা জানে।
কৃষি বিপণন অধিদফতর খুচরাপর্যায়ে ৩০ টাকা দরে আলু বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি নির্দেশনা সারা দেশে জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মতে কোল্ডস্টোরেজের গেট থেকে আলু ২৩ টাকায় বিক্রি করতে হবে। আর পাইকারি বাজারে তা ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হবে। ভোক্তাপর্যায়ে এর দাম হবে ৩০ টাকা। কিন্তু বুধবার রাজধানীর পাইকারি বাজার কাওরান বাজারে বিক্রমপুরের আলু বিক্রি হয় প্রতি কেজি ৪৩ টাকা দরে। রংপুর ও রাজশাহীর আলু বিক্রি হয় ৪৪ থেকে ৪৬ টাকায়। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে এ আলু বিক্রি হয় ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। সরকারের পক্ষ থেকে বেঁধে দেয়া দামের সাথে বাজারের কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনার কী প্রয়োজন। এর আগেও পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা নির্দেশনা দিয়েছে। বাজারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী অভিযানও চালিয়েছে। কিছু চুনোপুঁটিকে এ জন্য খেসারতও দিতে হয়েছে। কিন্তু মানুষ ঠিকই উচ্চমূল্যের কশাঘাতে জর্জরিত হচ্ছে। সরকারের নির্দেশনা মতে নয়, নিয়ন্ত্রণহীন দামেই মানুষকে পণ্য কিনতে হচ্ছে।
আলুর দাম বাড়ার জন্য এর ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতার কথা বলা হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকায় সবজি উৎপাদন ব্যাহত হওয়াকেও দায়ী করা হচ্ছে। বাস্তবে ওই যুক্তি চাহিদা- মজুদের যে তথ্য রয়েছে তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বরং একটি ব্যাপার সর্বত্র আলোচনায় রয়েছে; একটি সিন্ডিকেট অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো আলুর দাম বাড়াচ্ছে। এর অন্য কোনো কারণ নেই, একমাত্র কারণ তারা নিম্নবিত্ত ও গরিব জনগণের পকেট কেটে নিজেদের সম্পদ বাড়াতে চায়। এই সিন্ডিকেটকে বরাবরই দমাতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। জনসাধারণকে অন্তত এ পণ্যটি সহজে পাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য সিন্ডিকেটের জাল ছিন্ন করে দেয়া সরকারের কর্তব্য বলে আমরা মনে করি।

 


আরো সংবাদ



premium cement