১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
চালের দাম লাগামহীন

মন্ত্রীর হুমকিও অসার

-

চালের দাম নিয়ে আশঙ্কাই সত্য হলো। মন্ত্রীর মৌখিক নির্দেশে কাজ হয়নি। দেশের প্রধান এই খাদ্যশস্যের দাম স্থিতিশীল থাকেনি। ২৯ সেপ্টেম্বর খাদ্যমন্ত্রী চালকল মালিকদের সাথে বৈঠকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, এক মাসের মধ্যে চালের দাম বাড়ানো যাবে না। মিলগেটের দামে চাল বিক্রি করতে হবে। দাম বাড়ালেই সরকার আমদানি করে বাজারে সরবরাহ করবে। মন্ত্রী প্রতি কেজি সরু মিনিকেট চাল এবং মাঝারি মানের চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন যথাক্রমে সাড়ে ৫২ টাকা এবং ৪৫ টাকা। আমরা তখন বলেছিলাম, মৌখিক নির্দেশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ আদৌ সম্ভব কি না সে বিষয়ে সংশয় আছে। সেই সংশয় এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। গরিব মানুষ যে মোটা চালের ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করেন তার দামই এখন ৪৮ থেকে ৫০ টাকা। মন্ত্রীর ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি কোনো কাজে আসেনি। অবশ্য এ বিষয়ে মন্ত্রীর কোনো সক্রিয় তৎপরতাও চোখে পড়েনি। তিনি যখন চালের দর নির্ধারণ করে দেন; তখন মোটা চালের দর ছিল প্রতি কেজি ৪২-৪৫ টাকা।
সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে দেশের কোনো কোনো এলাকায় চাল মজুদদারির বিরুদ্ধে কিছু অভিযান চালানো হয়েছিল। মিল মালিকদের অনুরোধে সেই অভিযান স্থগিত করা হয়। মন্ত্রী বলেছিলেন, মিল মালিকরা অবৈধভাবে চাল মজুদ করছেন। বাজারে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এটা বন্ধ না করলে তিনি ভোক্তা অধিকার আইনে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। মন্ত্রীর নির্দেশের পর ১৫ দিনও যায়নি; বাজারে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ী, মজুদদার ও মিল মালিকরা। কিন্তু মন্ত্রীর অভিযান চালানোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না।
এ দিকে নিত্যপণ্যের দাম অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকায় নাভিশ্বাস উঠছে গরিব নি¤œবিত্ত মানুষের। সাত আট মাসের করোনা পরিস্থিতিতে দেশের প্রতিটি পরিবারের আয় কমেছে গড়ে ২০ শতাংশ। নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছেন সরকারি হিসাবেই দেড় কোটি মানুষ। সরকারি হিসাবে দেশে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশ বেড়ে ২৯ শতাংশে উঠেছে। বেসরকারি হিসাবে এই সংখ্যা আরো বেশি। এ বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রা সহজ করার কোনো সরকারি উদ্যোগ দৃশ্যমান নয়।
শাক-সবজির দাম বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে এখন আলুর দামও বেড়ে গেছে। ৩০ টাকার আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। দু-এক দিনের মধ্যে সেটি ৬০ পেরুলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। কারণ এভাবেই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামতো পণ্যের দাম অহরহ বাড়াচ্ছেন। কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে এখন ৯০ থেকে ১০০ টাকায় উঠেছে। তা আর যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যায়নি।
সরকারের কাছে এই মুহূর্তে যে পরিমাণ চালের মজুদ আছে তাতে আগামী ডিসেম্বরে আমন ধান ওঠা পর্যন্ত চলার কথা। ঘাটতি হওয়ার কোনো কারণ নেই। তার পরও কেন চালের দাম বাড়ছে। এর পেছনে কারা জড়িত সরকারের কাছে সেই তথ্য না থাকার কোনো কারণ নেই। গত মাসে মিল মালিকদের সাথে বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী যেসব বক্তব্য রেখেছিলেন তা থেকে স্পষ্ট, পণ্যমূল্য বিশেষ করে চালের দর বাড়ানোর পেছনে সক্রিয় চক্রটি সরকারের অচেনা নয়। সরকার ইচ্ছা করলেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু তা নেয়া হচ্ছে না। কেন সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না অথবা নিতে পারছে না সেটি একটি প্রশ্ন। সবাই যে নিজের লোক। কে কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে?
ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে খোলাবাজারে চাল বিক্রির যে কার্যক্রম প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের দিকে চালু করা হতো এবার সেই কার্যক্রম এখনো চালু করা হয়নি। তেমন পরিকল্পনাও নেই বলে গণমাধমের খবরে বলা হয়েছে। কিন্তু সারা দেশে খোলাবাজারে চাল বিক্রির এ কর্মসূচি অবিলম্বে চালু করা দরকার বলে আমরা মনে করি। তা না হলে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকেই যাবে; জনদুর্ভোগ সীমা ছাড়াবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement