দরকার নিয়মিত মনিটরিং
- ০১ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে অনেক আগেই। সবজি থেকে শুরু করে এমন কোনো পণ্য নেই যা ন্যায়সঙ্গত দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। কোনো রকম যৌক্তিক কারণ ছাড়াই যখন ইচ্ছা ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। একই অবস্থা হয়েছে সম্প্রতি চালের বাজারে। হঠাৎ করেই চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চালভেদে প্রতি কেজির দাম বেড়েছে গড়ে চার থেকে পাঁচ টাকা। সাধারণ মানুষ যখন করোনা মহামারীর তাণ্ডবে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে হিমশিম খাচ্ছে, ঠিক সেই সময় চালের দাম বাড়িয়ে তাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নিতে উদ্যত হয়েছেন চাল ব্যবসায় জড়িতরা। এর পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় বলে গণমাধ্যমের খবরে উল্লেøখ করা হয়েছে। যদিও ব্যবসায়ী, আড়তদার ও চালকল মালিকরা এমন কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব স্বীকার করতে নারাজ।
চাল কিনতে মানুষের যখন নাভিশ্বাস উঠছে তখন সরকারের কিছুটা হলেও টনক নড়েছে। প্রায় দুই সপ্তাহ পর খাদ্যমন্ত্রী নড়েচড়ে বসেছেন। তিনি চালের অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন, সারা দেশে চালের মজুদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে বৈঠক করে দর নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই বৈঠক সূত্রে গণমাধ্যমে যেসব খবর এসেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, চালের দাম বাড়ানোর পেছনে একটি স্বার্থান্বেষী চক্র সক্রিয়। গত মঙ্গলবার খাদ্যভবনে চালকল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকে মিলমালিকরা দাবি করেন, তাদের কাছে কোনো ধান-চালের অবৈধ মজুদ নেই। জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, অবৈধ মজুদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা শুরু হয়েছে। তার নিজ এলাকা নওগাঁয় এক দিনে ১৮টি মিলে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। পরদিন জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে হাস্কিং মিলমালিকদের সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অভিযান না চালানোর অনুরোধ জানিয়ে এসেছেন। তারা বলেছেন, আমরা বাজারে সরবরাহ বাড়াচ্ছি, দয়া করে পুলিশ পাঠাবেন না। এরপরও কি আপনারা বলবেন কোনো মজুদ রাখেননি। মন্ত্রীর বক্তব্যের পর মিলমালিকরা নীরব ছিলেন।
ঘটনায় স্পষ্ট, চালের দাম বাড়ানোর পেছনে কারা জড়িত। সরকারের কাছে বাস্তব চিত্র পরিষ্কার। কিন্তু তার পরও এই অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বা নেয়া যাচ্ছে না। খাদ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, বাজারে ১৫ দিন আগে চালের যে দাম ছিল ওই দামেই চাল বিক্রি করতে হবে। ১৫ দিন আগের দরের চেয়ে এক টাকাও বেশি দরে বিক্রি করা যাবে না। এর ব্যত্যয় ঘটলে এক সপ্তাহের মধ্যে চাল আমদানি করা হবে। একই সাথে ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যাদের কাছে অস্বাভাবিক পর্যায়ে ধানের মজুদ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরো ঘোষণা দিয়েছেন, আগামী এক মাস চালের দাম বাড়ানো যাবে না।
টিসিবি ও কৃষি বিপণন অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, ১৫ দিন আগে ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৪২ থেকে ৪৫ টাকা, মাঝারি ৪৭ থেকে ৪৮ টাকা, মিনিকেট ৫২ থেকে ৫৮ টাকা ও নাজিরশাইল ৫৬ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। আর পাইকারিতে ১৫ দিন আগে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪২ টাকা, মাঝারি ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা, মিনিকেট ৪৮ থেকে ৫২ টাকা ও নাজিরশাইল ৫৩ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ধরনের চালের দর সব পর্যায়ে কেজিতে গড়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে। এখন মন্ত্রীর নির্দেশ কতটা কার্যকর হবে সেটিই দেখার বিষয়।
এভাবে মৌখিক নির্দেশ দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ কতটা সম্ভব সে প্রশ্ন না তুলেও বলা যায়, সরকারের নিয়মিত মনিটরিং ছাড়া বাজার নিয়ন্ত্রণ একেবারেই অসম্ভব। সরকারকে নিরবচ্ছিন্নভাবে বাজার মনিটরিং করতে হবে এবং দাম বাড়ানোর সাথে জড়িত যেকোনো সিন্ডিকেট বা চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে নিঃস্পৃহ নিরপেক্ষতায়। তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। তা না হলে এসব ঘোষণা আর হুমকি-ধমকিতে কোনো কাজ হবে না। করোনা আর উপর্যুপরি বন্যায় বিপর্যস্ত মানুষ আরো ভোগান্তির শিকার হবে এবং সরকারের ভাবমর্যাদা ক্ষুণœ হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা