শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত
- ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
দেশে উচ্চশিক্ষায় সরকারি কলেজগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিপুল শিক্ষার্থী এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন। অথচ বহু সরকারি কলেজে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা। নৌকা যেমন মাঝিবিহীন চলতে পারে না; তেমনি অধ্যক্ষ ছাড়া একটি কলেজ ঠিকমতো চলার কোনো কারণ নেই। মূলত তিনিই হচ্ছেন কলেজের কাণ্ডারি। অধ্যক্ষ না থাকলে কার্যত ওই কলেজ মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হয়। কলেজে প্রশাসনিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত কাজগুলো অধ্যক্ষের নেতৃত্বে হয়ে থাকে। অধ্যক্ষ না থাকলে সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক। সাধারণত অধ্যাপকদের অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। সরকারি কলেজে সাড়ে তিন শতাধিক অধ্যাপক রয়েছেন। সহযোগী অধ্যাপকের সংখ্যা দুই হাজারের মতো। তাদের মধ্য থেকেও ছোট কলেজে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়া হয়। অধ্যক্ষ পদে নিয়োগ দেয়ার মতো শিক্ষকের অভাব না থাকলেও এতগুলো কলেজে শীর্ষ পদ ফাঁকা থাকা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ নিয়োগের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। যথাসময়ে পদক্ষেপ না নেয়ায় বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হয়। মন্ত্রণালয়ের ঢিলেমিও স্পষ্ট। আগে মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যদের তালিকা করে সেখান থেকে সরকারি কলেজগুলোতে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হতো। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগের নিয়ম থেকে সরে এসেছে। গত জুনে নতুন নীতিমালা হয়েছে। তাতে মৌখিক পরীক্ষা বাতিল করা হয়। নতুন নিয়মে প্রতি বছর জুলাই ও ডিসেম্বরে কলেজের শীর্ষ দুই পদে আগ্রহী শিক্ষকদের কাছে থেকে অনলাইনে আবেদন নেয়া হবে। জ্যেষ্ঠতা, যোগ্যতা, দক্ষতা ও সুখ্যাতি বিবেচনা করে একটি কমিটি যোগ্য শিক্ষকদের বাছাই করে একটি প্যানেল তৈরি করবে। সেখান থেকে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগ করা হবে। তবে শিক্ষকদের অনেকের অভিযোগ, সাধারণত অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ নিয়োগে রাজনৈতিক পরিচয় দেখা হয়। পাশাপাশি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের স্বজনদের নিয়োগ দেয়া হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রে যোগ্যরা বাদ পড়ে যান। শিক্ষক বদলিতেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে।
দেশে সরকারি কলেজের সংখ্যা ৬৩২টি। এর মধ্যে ১৪২টিতে অধ্যক্ষের পদ ফাঁকা। শতকরা হিসাবে, ২২ শতাংশের কিছু বেশি কলেজে অধ্যক্ষ নেই। শুধু অধ্যক্ষ নয়, ২৮ কলেজে উপাধ্যক্ষ পদও শূন্য। যারা পাঠদান করান, সেই শিক্ষকের পদ ফাঁকা দুই হাজার ৮৭৮টি, যা মোট পদের ১৮ শতাংশ। বড় শহরের কয়েকটি ছাড়া বেশির ভাগ সরকারি কলেজেই শিক্ষকসঙ্কট রয়েছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেতে ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে তিন শ’ শিক্ষক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু সেখানে কাজে গতি না থাকায় কলেজগুলোর শীর্ষ এই দুই পদে নিয়োগ আটকে আছে। অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ নিয়োগ দিতে না পারলেও করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও শিক্ষকদের নিয়মিত বদলি করা হচ্ছে। বদলির ক্ষেত্রে অনেকসময় তদবির ও নানা অনিয়মের ঘটনাও ঘটে।
মন্ত্রণালয় ও মাউশির তথ্য অনুযায়ী, দেশের পুরনো সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষকের অনুমোদিত পদ আছে ১৫ হাজার ৬৫২টি। প্রয়োজনের তুলনায় পদসংখ্যা অনেক কম। এর মধ্যে আবার প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত দুই হাজার ৮৭৮টি পদ শূন্য। অধ্যাপকের অনুমোদিত পদ ৫৪৭টি, যার ১৮৫টি শূন্য। সহযোগী অধ্যাপকের অনুমোদিত দুই হাজার ৩০০ পদের মধ্যে ২৮৩টি, সহকারী অধ্যাপকের চার হাজার ৪৭১ পদের মধ্যে ৩৭৫টি এবং প্রভাষকের আট হাজার ৩৩৪ পদের মধ্যে দুই হাজার ৩৫টিই শূন্য। সাধারণত সরকারি কলেজগুলোতে শিক্ষক পদে নিয়োগ করা হয় বিসিএসের সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার থেকে; কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় নিয়োগে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে সবসময় কলেজগুলোতে শিক্ষকের অনেক পদ শূন্য থাকে।
শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সরকারি কলেজগুলোতে অবশ্যই শূন্য পদ পূরণের পাশাপাশি নতুন পদ সৃষ্টি করে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া সময়ের দাবি। অনেক অধ্যাপক থাকায় সহজেই অধ্যক্ষের পদ দ্রুত পূরণ করা সম্ভব। তাই যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষকদের অধ্যক্ষ পদে পদায়নে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের উচিত শিক্ষার কাজগুলো শুধু প্রশাসনিক দৃষ্টিতে না দেখা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা