২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বাড়ছে নারী মাদকাসক্তের হার

পারিবারিক কারণ দায়ী

-

বাংলাদেশে এখনো হাজারো নারী প্রান্তিক অবস্থানেই রয়ে গেছেন, যদিও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের জীবনমান উন্নয়নে পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়ে থাকে। এ জন্য নানাবিধ কর্মসূচিও চলমান। এসব প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী কিছু নারী সাফল্য অর্জনও করছেন। তবে সেই সংখ্যা হাতেগোনা। তাই এ কথা বলা অসঙ্গত হবে না যে, আজো দেশে নারীর কাক্সিক্ষত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এর বড় উদাহরণÑ দেশে নারীর প্রতি সহিংসতা না কমে বেড়ে যাওয়া। করোনা মহামারীকালেও নারী নির্যাতন বেড়েছে বলে একাধিক জরিপে তথ্য এসেছে।
আরেকটি হতাশাজনক খবর হলোÑ বাংলাদেশে মাদকের নীল দংশনে বহু নারীর জীবন বিপন্ন। পুরুষদের দিয়ে শুরু হলেও নারী মাদকাসক্তের সংখ্যাও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে দেশে।
সাধারণত পরিবারের কোনো সদস্য মাদকাসক্ত হয়ে থাকলে ভুক্তভোগী নারীর মাদক গ্রহণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। পারিবারিক সঙ্কটময় পরিস্থিতিতে সাময়িক প্রশান্তি খুঁজতে বহু নারী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। বিশ্বায়নের এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তরুণদের মাদকাসক্তির হার বাড়িয়ে দিচ্ছে। যেসব ছেলেমেয়ের অভিভাবক সন্তানকে ভালোভাবে লালন-পালনে পারদর্শী নন, তাদের সন্তানদের মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। আর যেসব পরিবারে পারিবারিক অশান্তি থাকে, সেসব পরিবারে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। তারা ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না। এসব পরিবারের কন্যাশিশুদেরও মাদকাসক্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। একটি ছেলে মাদক গ্রহণের পরও সমাজে যেভাবে মিশে যেতে পারে; একটি মেয়ের পক্ষে অধিকাংশ সময়ই সেভাবে সম্ভব হয় না। তাকে সেভাবে কেউ সাহায্যও করে না। লক্ষণীয় বিষয়, যেসব মেয়ে মাদক গ্রহণ করে, তারা অর্থ সংগ্রহ করতে অনেকসময় মাদক বিক্রির সাথে জড়িয়ে পড়ে। কিছু ক্ষেত্রে মাদক গ্রহণে মেয়েদের অনাকাক্সিক্ষত গর্ভধারণ করতেও দেখা যায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের তথ্য পর্যালোচনা করলে শিউরে উঠতে হয়। সরকারি এ সংস্থা বলছে, পুরুষের সাথে পাল্লা দিয়ে গত পাঁচ বছরে দেশে নারীদের মাদক গ্রহণের হার বেড়েছে প্রায় ৯ গুণ (৮ দশমিক ৯২)। আইসিডিডিআরবির জার্নাল অব হেলথ পপুলেশন অ্যান্ড নিউট্রিশনের জরিপ অনুযায়ী, রাজধানীর ৭৯ দশমিক ৪ শতাংশ মাদকাসক্ত পুরুষ আর ২০ দশমিক ৬ শতাংশ নারী। ঢাকা আহছানিয়া মিশনের অ্যাডিকশন ম্যানেজমেন্ট ইনট্রিগ্রেটেড কেয়ারের (এএমআইসি) তথ্যে বলা হচ্ছে, গত তিন বছরে এই প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা নেয়া মাদকাসক্ত নারীর মধ্যে ৪৩ শতাংশই পারিবারিক কলহ থেকে সৃষ্ট কারণে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত ১৬ থেকে ৩৫ বছর বয়সী নারীরা মাদক গ্রহণ করে থাকেন। অবিবাহিতদের বড় অংশই শিক্ষার্থী। ত্রিশোর্ধ্ব মাদকাসক্ত নারীরা সাধারণত বিবাহিত। দেখা গেছে, নারী মাদকসেবীদের অধিকাংশ ইয়াবা, গাঁজা ও স্লিপিং পিলের মাধ্যমে নেশা করে থাকেন। পাশাপাশি, হেরোইন ও সিগারেটও মাদক হিসেবে ব্যবহার করেন।
মূলত পরিবারের সাথে বনিবনা না হওয়া, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা এবং পরিবারের অন্য মাদকাসক্তের উৎসাহে নারীরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছেন। গবেষণায় দেখা গেছে, মাদক গ্রহণের ফলে পুরুষের তুলনায় নারীর ক্ষতি বেশি হয়। যেহেতু নারীর শারীরিক ঝুঁকি পুরুষের চেয়ে বেশি আবার বাংলাদেশে নারীদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও খুব দুর্বল, এ জন্য তাদের অনেকে অপুষ্টিতে ভোগেন। আবার মাদক গ্রহণের কারণে মানসিকভাবেও খুব বিষণœ হয়ে পড়েন। এ ছাড়া অনেক নারী মাদকসেবী জটিল রোগে দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন।
পুরুষের পাশাপাশি নারীদের মাদকাসক্তের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে পারিবারিক ও সামাজিক সঙ্কট উল্লেখযোগ্য হলেও মাদকের সহজলভ্যতাও এর জন্য কম দায়ী নয়। পাশের ভারত ও মিয়ানমার থেকে সীমানা পেরিয়ে অবাধে দেশে মাদকদ্রব্য ঢুকছে। তা প্রতিহত করতে না পারলে আমাদের দেশে মাদকসেবীর সংখ্যা কমানো যাবে বলে মনে হয় না।
আমরা মনে করি, দেশকে মাদকের করালগ্রাস থেকে মুক্ত করতে সর্বপ্রথম দরকার মাদকের উৎসমুখ বন্ধ করা। সে জন্য ‘শূন্য সহনশীলতা’য় দলনিরপেক্ষভাবে সারা দেশে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সাঁড়াশি অভিযান চালাতে হবে। একই সাথে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরালো করতে হবে। তবেই আশা করা যায়, মাদকের ব্যবহার কমে আসবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement