২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রাজধানী থেকে কুকুর অপসারণ

বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিন

-

বছরের এ সময়ে বিশেষত রাজধানী ঢাকায় বেওয়ারিশ পাগলা কুকুরের দৌরাত্ম্য বেশি দেখা যায়। অপর দিকে, কুকুরের কামড়ে সারা বছরই দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ মারা যাচ্ছে কিংবা জখম হচ্ছে। আজো বাংলাদেশের বিশেষ করে মফস্বল এলাকায় কুকুরে কামড়ালে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিনের অভাব ব্যাপক। এ দিকে, সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবাদী ও পশুপ্রেমিকদের দাবির মুখে পরিস্থিতি নতুন মাত্রা পরিগ্রহ করেছে। এমন এক পরিস্থিতিতে ‘খেঁকিকুকুর’ সরানোর পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্কের পাশাপাশি নানা ধরনের কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে।
একটি জাতীয় দৈনিক প্রসঙ্গক্রমে জানায়, কোনো কোনো সংগঠন ডিসেম্বরের মধ্যে ঢাকার দক্ষিণ সিটি এলাকা থেকে বেওয়ারিশ কুকুর অপসারণের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছে কর্তৃপক্ষকে। তারা এ দাবিতে মানববন্ধনের পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর কাছে তাদের দাবি পেশ করেছেন। এর বিপরীতে কয়েকটি ‘প্রাণিকল্যাণ পরিবেশ’বাদী সংগঠনের অভিযোগ, জলাতঙ্ক টিকা এবং বন্ধ্যত্বকরণ তৎপরতা সুষ্ঠুভাবে না করে, ঢাকার কয়েক হাজার কুকুর মাতুয়াইলের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্লান্টে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ (ডিএসসিসি) নানা স্থান থেকে পথকুকুরকে অজ্ঞান করে ধরে নিচ্ছে যা ‘বেআইনি’।
দু’টি সংগঠনের কয়েকজন দায়িত্বশীল মাতুয়াইলে নির্ধারিত স্থানে বেশ কিছু কান কাটা ও পোষা কুকুর দেখে এসেছেন। ‘কান কাটা’র অর্থ, কুকুরগুলো নির্বীর্য করা এবং এগুলোকে জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। আর পোষা কুকুর সাধারণত বেওয়ারিশ কিংবা হিংস্র হয় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মাতুয়াইলের সে জায়গাতে আগে থেকেই আছে অনেক কুকুর। সিটি করপোরেশনের শতাধিক কর্মী সেখানে নিয়োজিত। এখন অনেকে মনে করেন, আগের কুকুরের সাথে নতুনগুলো যোগ হলে এগুলোর খাবারের সঙ্কট ও দ্বন্দ্ব দেখা দেবে। এতে সে এলাকায় এবং লোকজনের মাঝে জলাতঙ্কের আশঙ্কা সৃষ্টি হবে। তাই সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট পদক্ষেপ স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের কতটা অনুকূল, সে প্রশ্ন উঠেছে।
গত শনিবার একটি সংগঠনের মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, ‘ক’দিন যাবৎ নগর ভবন এবং ধানমন্ডি ও রমনা লেক এলাকা থেকে নামেমাত্র কয়েকটি কুকুর সরানো হয়েছে। কিন্তু ঐতিহ্যসমৃদ্ধ ঢাকা মহানগরে কুকুরের জ্বালায় বের হওয়া যায় না, শিশুরা খেলতে পারে না, এমনকি মসজিদে যাওয়া যায় না।’ এ অবস্থায় ঢাকার বাসিন্দা হওয়া লজ্জার বৈকি। কোনো সভ্য দেশের রাজধানীতে বেওয়ারিশ কুকুরের এহেন অবাধ বিচরণ মেনে নেয়া যায় না বলে উল্লেখ করা হয়।
প্রাণী চিকিৎসকদের অভিমত, ‘কুকুরের টিকা দেয়া এবং জন্মনিয়ন্ত্রণই সমস্যাটির সুষ্ঠু সমাধানের উপায়। কুকুর অপসারণ করা ফলপ্রসূ হবে না।’
আমরা মনে করি, কুকুরের উৎপাত ও কামড়, জলাতঙ্কের ওষুধের সঙ্কট, পরিবেশগত দিক, প্রভৃতি বিবেচনায় বাস্তবসম্মত ও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। সারা বছর যেন জলাতঙ্কের পর্যাপ্ত ওষুধ থাকে এবং কুকুরের বন্ধ্যত্বকরণ নিশ্চিত হয়, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement