করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গের আশঙ্কা
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমেছে এমন মনে করার কোনো কারণ নেই। নমুনা পরীক্ষায় শৈথিল্যে শনাক্তের সংখ্যা কম হবে এটাই স্বাভাবিক। মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে সরকারের পক্ষ থেকে এমন একটি ধারণা জনমনে প্রতিষ্ঠার সচেতন প্রয়াসের কারণেই মূলত মানুষের মন থেকে কোভিড-১৯-এর আতঙ্ক অনেকটাই কেটে গেছে। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা কিন্তু এখনো বলতে পারছেন না দেশ বিপদমুক্ত। বরং আসন্ন শীতে ভাইরাসটি ফের বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন তারা। বলা হচ্ছে, শীতের মৌসুমে দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় তরঙ্গ আঘাত হানতে পারে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, ঠাণ্ডায় এই ভাইরাস শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আগামী ডিসেম্বরে যখন বাংলাদেশে গড় তাপমাত্রা ১০ থেকে ১৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকবে তখন করোনা নতুন করে প্রবল হয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে ইউরোপের কয়েকটি দেশে করোনা দ্বিতীয়বারের মতো হানা দিয়েছে। দেশগুলোর মধ্যে আছে ব্রিটেন, ফ্রান্স, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, স্পেন প্রভৃতি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাস্কবিহীন চলাচলে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসন্ন শীতে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে উল্লেখ করে এ মুহূর্ত থেকেই সার্বিক প্রস্তুতি নিতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন। সতর্ক করেছেন, ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।
নিপসনের সাবেক পরিচালক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: আবদুর রহমান বলেছেন, শীতকালে করোনা সংক্রমণ বাড়ার সম্ভাবনা শতকরা ৯৫ ভাগ। দেশের ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ মানুষ মাস্ক পরে না। হাসপাতালগুলোতেও অনেককে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায় না। মাস্ক ব্যবহারের আইন আছে। এই আইনের বাস্তবায়ন করতে হবে। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি আসার আগেই সতর্ক থাকা উত্তম পন্থা। তিনি সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং বারবার হাত ধোয়ার মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন বলেন, আমাদের দেশে ৯৫ শতাংশ মানুষ মাস্ক পরেন না। তাই পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞ ও সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসব সতর্কবাণী দেয়া হলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, দেশে শতকরা পাঁচজন মানুষও মাস্ক ব্যবহার করছেন না বা অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। অথচ বাস্তবতা হলো, দেশে গত রোববার পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ২৬ জন। এ নিয়ে দেশে কোভিড-১৯ এ মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে চার হাজার ৯৩৯ জনে। বাংলাদেশের মতো সারা বিশ্বেও করোনার তাণ্ডব কমেনি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি বিভাগের পরিচালক জানিয়েছেন, করোনায় গোটা বিশ্বে এখনো প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৫০ হাজার মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিশ্বের ২১৫টি দেশ ও অঞ্চলে মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি ১০ লাখের বেশি। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। আর একদল গবেষক সতর্ক করে বলেছেন, যত দিন না জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হচ্ছে, তত দিন কোভিড-১৯ একটি মৌসুমি রোগ হিসেবে থেকে যাবে। হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হওয়ার আগে করোনা সংক্রমণের আরো কয়েকটি তরঙ্গ আসতে পারে বলেও তারা সতর্ক করেছেন বিশ্ববাসীকে।
এমনই এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে করোনা মোকাবেলায় যে সার্বিক শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে সেটি আত্মঘাতী হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে শুধু প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিলেই হবে না, সে নির্দেশ কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটিও দেখতে হবে। করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি, লুটপাট ও প্রতারণার মাধ্যমে যে লেজেগোবরে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়; তার পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সেটি নিশ্চিত করাও জরুরি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা