দুর্নীতির যেন শেষ নেই
- ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
করোনা মহামারী বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতের অন্ধকার দিক উন্মোচিত করে প্রদীপের আলোয় নিয়ে এসেছে। সাহেদ-সাবরিনাদের কেলেঙ্কারি সবকিছু খুলে দেখিয়ে দিলো। এই অপরাধীরা নিজেদের এক অসীম ক্ষমতাবলে পুরো স্বাস্থ্য বিভাগকে পকেটে ঢুকিয়ে নিয়েছিল। মহামারী সামাল দিতে যেখানে সারা বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে; তাদের নীতিবান রাষ্ট্রনেতারা এবং সাথে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা উজাড় করে দিয়ে বিপদ মোকাবেলা করছে। সেখানে আমাদের দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসন গণমানুষের দুর্দিনে অসাহায়ত্বকে অর্থ কামানোর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। প্রথমেই করোনার জন্য বিপুল অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ করানোর পর সেগুলো দিয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ক্রয় করা হয়েছে। এরপর করোনা মোকাবেলাকে যেন ইজারা দেয়া হলো কিছু দুর্বৃত্তের হাতে, তারা লুটেপুটে খেলো। এরপরও স্বাস্থ্য বিভাগের ভয়াবহ দুর্নীতির কথা বলা যাবে না। এবারে স্বাস্থ্য বিভাগের এক গাড়িচালকের খবর পাওয়া গেল, তিনি বিপুল স্থাবর সম্পত্তির মালিক। সেই সূত্রে খবর পাওয়া যাচ্ছে, নি¤œপদের কর্মচারীরা কিভাবে সিন্ডিকেট করে জনসাধারণের সম্পত্তি লুটপাট করছে।
আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়া স্বস্থ্য অধিদফতরের গাড়িচালকের নাম আবদুল মালেক। তিনি স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম এনায়েত হোসেনের গাড়িচালক। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তদন্তে জানা গেছে, তার স্ত্রীর নামে টঙ্গীর তুরাগে দু’টি সাততলা ভবন রয়েছে। এতে ২৪টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশেই রয়েছে এর দ্বিগুণ আকারের আরেকটি প্লট। অন্য দিকে, রাজধানীর হাতিরপুলে আরেকটি ১০তলা ভবন নির্মাণাধীন। রয়েছে মেয়ের নামে একটি গরুর খামার। অষ্টম শ্রেণী পাস মালেক ১৯৮২ সালে সাভার স্বাস্থ্য প্রকল্পের গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পান। পরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিবহন পুলে বদলি হন। দেশের যেকোনো নাগরিকের সম্পদ অর্জনের অধিকার রয়েছে। তবে তা হতে হবে বৈধ উপায়ে। একজন সরকারি গাড়িচালক কিভাবে বিপুল স্থাবর সম্পত্তির মালিক হলেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এই মালেকদের সংখ্যা কিন্তু একজন-দু’জন নয়। সরকারি প্রশাসনে এমন অসংখ্য মালেকের সন্ধান মিলছে।
মালেকের ব্যাপারে জানা যায়, তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরে ড্রাইভারস অ্যাসোসিয়েশন নামে একটি সংগঠন করে সভাপতি হয়েছেন। গাড়িচালকদের নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি তার নিয়ন্ত্রণে। খবরে প্রকাশ, চিকিৎসকদের বদলি ও পদোন্নতি এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের নিয়োগে তার হাত আছে। একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী কিভাবে এভাবে সরকারি প্রশাসনে প্রভাশালী হয়ে ওঠেন; সেই জবাব কে দেবে। তবে কি বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়ার পেছনে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত? জনগণের সম্পদ লুটপাট করেই কি তা হয়ে যাচ্ছে। তিনি মহাপরিচালকের গাড়ি বাস্তবে চালান না। অন্য একজন গাড়িচালক মহাপরিচালকের গাড়ি চালান। তবে আবদুল মালেক মহাপরিচালকের জন্য বরাদ্দ হওয়া একটি পাজেরো জিপসহ তিনটি গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। অধিদফতরের একটি পিকআপ তার খামারের দুধ বিক্রি এবং মেয়ের জামাইয়ের ক্যান্টিনে মালামাল পরিবহনের কাজে এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা ব্যবহার করেন একটি মাইক্রোবাস। জনগণের সম্পদ এভাবে ব্যবহার করছে দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট।
র্যাব মালেককে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে। তার কাছ থেকে দেড় লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। প্রশাসনের কর্মচারীদের যেন সততা, ন্যায়নিষ্ঠ হওয়ার এখন আর দরকার হয় না। বরং তাদের অনেকের অবস্থা দেখে প্রতারকের মতোই মনে হচ্ছে। সরকারের দাবি মতে, ভালো চলছে স্বাস্থ্য বিভাগ। করোনা মহামারীর শুরু থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের কেলেঙ্কারির শেষ নেই। শীর্ষ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে একেবারে নিচের স্তরের কর্মচারীদের মধ্যে এখানে দুর্নীতির বিস্তার ঘটেছে। যারা মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করবেন তাদের নৈতিক অবস্থা যদি এমন হয়; তাহলে মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রকৃতপক্ষে কেমন হবে, তা সহজেই অনুমেয়। স্বাস্থ্য বিভাগ ভালো চলছে না, আর কত দুর্নীতি হলে পরে সেটি প্রমাণ হবে? আমরা মনে করি, দুর্বলতা স্বীকার করে সংশোধনে উদ্যোগী হওয়া জরুরি। অন্যায় স্বীকার না করলে তো সেটি সংশোধনের কোনো সুযোগ থাকে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা