শিশুর বিকাশে গুরুত্ব দিন
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
দেশের ক্ষমতাসীনদের তরফ থেকে আমরা উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনতে অভ্যস্ত। সরকরি বয়ানে, দেশ উন্নয়নের মহাসড়কে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে। এটি এমন এক উন্নয়ন, এর ফলে যদি কিছু ত্রুটিবিচ্যুতি হয়, তা মেনে নিতে হবে। গণতন্ত্র আইনের শাসনে কিছু ঘাটতি থাকলেও তা সয়ে যেতে হবে। সরকারের একতরফা এই বয়ান চলছে চার দিক থেকে। যদিও প্রকৃত উন্নয়ন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক একটি মানব উন্নয়ন সূচক প্রকাশ করেছে। ওই সূচকে সারা বিশ্বের শিশুদের নিজেদের যোগ্যতা প্রকাশের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অবস্থান তালিকার নিচের দিকে। প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বাংলাদেশ বেশ পেছনে। বর্তমান সরকার এক যুগ ধরে যে উন্নয়নের গল্প শোনাচ্ছে; তা সত্যি হলে বাংলাদেশের শিশুরা সারা বিশ্বে না হোক অন্তত প্রতিবেশী সমপর্যায়ের দেশগুলো থেকে পিছিয়ে পড়ার কথা নয়।
পরবর্তী প্রজন্মের উৎপাদনশীলতার বিষয়ে ধারণা পেতে বিশ্বব্যাংক এ সূচক তৈরি করে। সূচকে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট দশমিক ৪৬। এর অর্থ দাঁড়ায়, আজ যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করছে তার কর্মক্ষমতাকে পূর্ণমাত্রায় কাজে লাগানোর সম্ভাবনা ৪৬ শতাংশ। এ সূচকে বাংলাদেশ আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারছে না। গত দুই বছরে দশমিক শূন্য দুই পয়েন্ট অবনতি হয়েছে বাংলাদেশের। একই সূচকে ২০১৮ সালে বাংলাদেশের অর্জিত পয়েন্ট ছিল দশমিক ৪৮। শিশুর শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্যসেবা ও টিকে থাকার সক্ষমতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতে তার উৎপাদনশীলতা এবং আয়ের সম্ভাবনা নির্ধারণ করা হয় এর মাধ্যমে। এ সূচকের মান শূন্য থেকে এক পর্যন্ত। স্কোর যদি এক হয় তা হলে ধরে নেয়া হয়; সে দেশে জন্ম নেয়া শিশুটি তার পূর্ণ উৎপাদনশীলতা কাজে লাগাতে সক্ষম হবে।
উচ্চ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ রয়েছে এমন ধনী দেশগুলোর অবস্থান তালিকায় প্রথম দিকে থাকাই স্বাভাবিক। দেশগুলো নিজেদের সম্পদ সম্পূর্ণভাবে জনগণের কল্যাণে ব্যবহার করতে পারছে। পাশাপাশি দেশের জনগণের স্বার্থকে পূর্ণমাত্রায় সংরক্ষণ করছে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা ও ফিনল্যান্ড। তালিকায় এসব দেশের অর্জিত পয়েন্ট দশমিক ৮৯ থেকে ৮০ এর মধ্যে। আমরা এসব দেশের চেয়ে বড় ব্যবধানে দূরে রয়েছি। অদূর ভবিষ্যতে আমরা এসব দেশের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব এর কোনো লক্ষণ নেই। বরং প্রতিবেশী ভারতও আমাদের চেয়ে এগিয়ে। তালিকায় দেশটির অর্জিত পয়েন্ট দশমিক ৪৯। শ্রীলঙ্কা ও নেপালের চেয়েও বেশ পিছিয়ে রয়েছি আমরা। শ্রীলঙ্কার অর্জিত পয়েন্ট দশমিক ৬০ ও নেপালের অর্জিত পয়েন্ট দশমিক ৫০। তালিকায় একেবারে পিছিয়ে অবস্থান আফ্রিকার ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলোর। মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, দক্ষিণ সুদান, নাইজার ও মালি। এসব দেশের অর্জিত পয়েন্ট হচ্ছে দশমিক ৩২ থেকে দশমিক ৩৩ এর মধ্যে।
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে করোনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এই মহামারীর কারণে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত পর্যুদস্ত। খাদ্য নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে। অপুষ্টির কারণে খর্বকায় শিশুর জন্ম হচ্ছে। জন্ম-পরবর্তী শিশুরা পর্যাপ্ত যতœ পাচ্ছে না। এর সাথে যোগ হচ্ছে তাদের স্কুল থেকে ঝরে পড়া। বাংলাদেশের অবস্থাও করুণ। বিশেষ করে শাসনব্যবস্থায় ন্যায্যতা না থাকায় মহামারী শিশুদের প্রতি প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে। দরিদ্র পরিবারগুলোতে শিশুরা পর্যপ্ত খাদ্য ও সেবাযতœ পাচ্ছে না। লক্ষণীয় বিষয়, সরকার যেসব সাহায্য কর্মসূচি ঘোষণা করেছে; সেগুলোর বেশির ভাগই দরিদ্রদের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি কোষাগার থেকে অর্থ ও খাদ্য সাহায্য ঠিকই খরচ হচ্ছে। আমরা মনে করি, দুর্নীতিমুক্ত বণ্টনব্যবস্থা নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশের শিশুদের অবস্থা আরো ভালো হতো। তাদের সুস্থ বিকাশের সম্ভাবনা থাকত। সর্বোপরি মানব উন্নয়ন সূচকে এর প্রতিফলন ঘটত।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা