১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সারের কৃত্রিম সঙ্কটে কৃষকরা বিপাকে

নিজের পায়ে কুড়াল মারবেন না

-

সবাই জানি, আজো বাংলাদেশের ‘প্রাণ’ হচ্ছে কৃষি, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতির ভিত্তি। যে কৃষকরা প্রধানত শহরকেন্দ্রিক রাজনীতির দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাতের ঊর্ধ্বে থেকে সারা বছর রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে হলেও ফসল ফলিয়ে কিংবা সবজি উৎপাদন করে জনগণকে বাঁচিয়ে রেখেছেন, তারা তাদের কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য থেকেও বঞ্চিত। আর ইদানীং শুরু হয়েছে সারের কৃত্রিম সঙ্কট। অথচ সার কৃষিকাজের জন্য কত বেশি জরুরি, তা বলাই বাহুল্য। সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম কৃষকদের থেকে আদায় করছেন মুনাফালোভী মজুদদার, তথা অর্থগৃধনু ডিলাররা। নিজেদের পায়ে কুড়াল মারার সাথে তুল্য এই উদ্বেগজনক খবর এসেছে পত্রপত্রিকায়।
যে কৃষক মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও পরিজনের জন্য দু’মুঠো ভাত জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন, তার পক্ষে প্রতি কেজি সারের দাম হিসেবে অতিরিক্ত দুই-তিন টাকা দেয়াও কষ্টকর। অথচ চুয়াডাঙ্গাসহ কোনো কোনো এলাকায় এটাই ঘটছে বলে জানা গেছে। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ইউরিয়া, ট্রিপল সুপার ফসফেট বা টিএসপি, মিউরেট অব পটাশ বা এমওপি এবং ডিএপি নামে পরিচিত অন্য এক ধরনের সার। এখন দেশের কৃষকরা মাঠে আমন ধান এবং আগাম শস্য, কপি, করলা, লাউ প্রভৃতি সবজি চাষে ব্যস্ত। সামনের মাসেই আরম্ভ হবে ভুট্টার চাষাবাদ। এমন প্রেক্ষাপটে ধান্ধাবাজ ডিলাররা গরিব চাষির কষ্টার্জিত টাকা খসানোর মতলবে বিভিন্ন সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছেন। তাদের কাছে সার চাইলে জবাব আসে, ‘সার নেই। তাই অন্য জায়গা থেকে তা আনতে হবে।’ এ জন্য প্রতি বস্তা সারের পেছনে বিনা ভাউচারে, ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের প্রধান খাদ্যশস্য আমন ধানের ফলনও ব্যাহত হতে পারে।
একটি জাতীয় দৈনিকে নমুনাস্বরূপ দেশের পশ্চিম সীমান্তবর্তী একটি জেলার পরিস্থিতি প্রকাশ পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বা ডিএই বলেছে, কয়েক ধরনের সার নির্ধারিত দামেই কৃষকের কাছে বিক্রি করা হয়। প্রতি কেজি বর্তমান দাম ইউরিয়া এবং ডিএপি ১৬ টাকা করে, এমওপি ১৫ টাকা আর টিএসপি ২২ টাকা। আলোচ্য জেলাতে সারের ডিলার ১০৯ জন, যাদের ৫৯ জন কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি)। বাকিরা রসায়ন শিল্প সংস্থা বা বিসিআইসি কর্তৃক নিযুক্ত। কর্র্তৃপক্ষ জানায়, এ জেলায় মজুদ আছে ইউরিয়া এক হাজার ৩২৫ টন, এমওপি ৪৮৮ টন, টিএসপি ৪৫১ টন এবং ডিএপি ৫৩৫ টন। চলতি মাসে ডিলারদের বরাদ্দ করা হয়েছে ইউরিয়া তিন হাজার ১০৩ টন, টিএসপি ৫৮০ টন, এমওপি ৮৩৯ টন এবং ডিএপি এক হাজার ৩৭৪ টন। কিন্তু ডিলাররা সার উত্তোলনে আগ্রহী নন বলে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জানা গেছে। তারা শুধু ৮৩৫ টন ইউরিয়া তুলেছেন। কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করেন, ‘সার নেই’ বলে ডিলাররা হঠাৎ টালবাহানা করছেন; কিন্তু টাকা বেশি দিলে সার পাওয়া যায়। বেশি টাকা নেয়ার প্রতিবাদ জানালে সাফ বলে দেয়া হয়, ‘আর সার দেয়া হবে না’। কোনো কোনো সার ডিলার কৃষকদের এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করলেও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, কিছু জায়গা থেকে কৃষকদের অভিযোগ এসেছে সারের দাম বেশি নেয়ার। নজরদারি ব্যবস্থা জোরালো করার কথা বলে তিনি আশ্বাস দেন, ‘ভয়ের কিছু নেই।’ সার ডিলারদের একজন শীর্ষনেতা জানান, ‘সারের সঙ্কট নেই, কেউ দাম বেশি নিলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ ডিসি বলেছেন, ‘সারের কোনো সঙ্কট নেই। তবু অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রির অভিযোগ পেলে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে।’
সবার আশা, যথাসময়ে কৃষকরা যথাযথ মূল্যে পর্যাপ্ত সার পাবেন এবং দোষী ডিলারদের আইনের আওতায় আনা হবে। কৃত্রিম সঙ্কট যাতে কেউ সৃষ্টি করতে না পারে, সে জন্য আগাম ব্যবস্থা নেয়া উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement
তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে বিএনপি : কাদের রৌমারীতে বড়াইবাড়ী সীমান্তযুদ্ধ দিবস পালিত

সকল